# হার’নকে রাঙ্গার হুমকি # আইনমন্ত্রীর বির’দ্ধে ‘অভব্য’ আচরণের অভিযোগ র’মিনের # ইসি ও ইভিএম নিয়ে মুখোমুখি বিএনপি-জাপা
জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ আগামী অর্থবছরের বাজেট পাস হয়েছে জাতীয় সংসদে। সঙ্গত কারণেই গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদ লবি, অধিবেশন কক্ষ, গ্যালারিসহ সর্বত্র ছিল প্রাণচাঞ্চল্য। আনন্দ-উচ্ছাসও ছিল সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের (এমপি) মাঝে। কিন্তু অধিবেশন শুর’ হওয়ার পরই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ নিয়ে ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় শুর’ হয়ে এমপিদের মাঝে শুর’ হয়ে যায় বাহাস। বাদ-প্রতিবাদ তো ছিলোই হুমকি ধমকির ঘটণাও ঘটে যায়। খোদ আইনমন্ত্রীর বির’দ্ধে ‘অভব্য’ আচরণের অভিযোগ তুলেন একজন নারী এমপি। এসব ঘটণায় সংসদে সরকারি দল আওয়ামী লীগ, সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং রাজপথেও বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে দ্বন্ধ প্রকট হয়ে ওঠে। অবশ্য সব বাহাসেই আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির এমপিরা ছিলেন একাট্টা। দুই দলেরই একমাত্র প্রতিদ্ব›িদ্ব ছিলেন বিএনপির এমপিরা। সংসদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জাতীয় সংসদের অধিবেশনে এমপিদের মধ্যে বিতর্ক চলাটা সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য ভালো। এতে নিষ্প্রাণ সংসদ উত্তপ্ত হলেও বিতর্কের মাধ্যমে একটা সিদ্ধান্ত ওঠে আসে। তবে কারো একান্ত ব্যাক্তিগত বিষয় নিয়ে কটাক্ষ করা কিংবা হুমকি, ধমকি দেয়া শুভনীয় নয়। জনপ্রতিনিধিদের এসব আচরণ বর্জন করে চলা উচিৎ। গত ৫ জুন এই বাজেট অধিবেশন শুর’ হয়। ৯ জুন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তাফা কামাল। এই বাজেট পেশ থেকে শুর’ করে গতকাল বৃহস্পতিবার বাজেট পাস হওয়ার দিন পর্যন্ত বাজেটের ওপর আলোচনা কিংবা অনির্ধারিত আলোচনায় অনেক ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন এমপিরা। দুয়েকবার বাহাসেও জড়িয়েছেন অনেকে। তবে গতকাল দিনটি ছিল পুরোই ভিন্ন। অধিবেশন শুর’ও পর থেকেই প্রায় প্রতিটি আলোচনায় বাহাস, বাদ-প্রতিবাদের ঘটণা ঘটেছে। আইনমন্ত্রীর বির’দ্ধে ‘অভব্য’ আচরণের অভিযোগ : চলতি অধিবেশনকে বাজেট অধিবেশন না বলে পদ্মা অধিবেশন নামকরণে বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের পাল্টা বক্তব্য দেয়াকে ঘিরে উত্তাপ ছড়ায় সংসদে। পদ্মা সেতুকে স্বাধীনতার পর দেশের সব চেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অবকাঠামো উলেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পদ্মা সেতু নিয়ে কথা বলবো না তো কী নিয়ে কথা বলবো? আমরা কি উনার (রুমিন ফারহানা) কাপড়-চোপড় নিয়ে কথা বলবো? আমি তো তা করবো না।’ আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যেরই পরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিএনপির সংসদ সদস্যরা। আইনমন্ত্রীর বির’দ্ধে ‘অভব্য’ আচরণের অভিযোগ এনে রুমিন ফারহানা পাল্টা জবাবে বলেন, ‘যুক্তিবিদ্যার সবচেয়ে বড় ফ্যালাসি হচ্ছে যখন কোনও যুক্তি থাকে না, তখন ব্যক্তিগত আক্রমণ করা। যখন যুক্তি থাকে না, তখন ব্যক্তিগত আক্রমণ আসে। উনি যুক্তি না পেয়ে আমার পোশাক নিয়ে আলোচনা হবে কিনা, এমন অভব্য বক্তব্য দিয়েছেন- যা আমরা আইনমন্ত্রীর কাছে আশা করি না। প্রধানমন্ত্রী একজন নারী, জাতীয় সংসদের স্পিকার একজন নারী। এই বক্তব্য পুরো সংসদের জন্য লজ্জার।’গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের বাজেট নিয়ে ছাটাই প্রস্তাবের আলোচনায় এমনভাবেই বাহাসে জড়িয়ে পড়েন র’মিন ফারহানা ও আনিসুল হক। রুমিন ফারহানার আগের দিনের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে আইনমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা নাকি এখানে (সংসদে) খালেদা জিয়াকে বকাবকি করি। আমরা নাকি পদ্মা সেতু নিয়ে বেশি বেশি কথা বলছি। এটা নাকি ছিল সংসদের কাজ। আমরা এই সংসদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আলাপ করেছি। পদ্মা সেতু অবকোর্স বাংলাদেশের জন্য একটি বিরাট অ্যাচিভমেন্ট। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা দেয়ার পরে যদি কোনও ঐতিহাসিক তৎপর্যপূর্ণ স্থাপনা হয়ে থাকে, সেটা হচ্ছে পদ্মা সেতুর অবকাঠামো। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন। তো আমরা পদ্মা সেতু নিয়ে কথা বলবো না কী নিয়ে কথা বলবো? আমরা কি উনার (রুমিন ফারহানা) কাপড়-চোপড় নিয়ে কথা বলবো? আমি তো তা করবো না।’পরে জননিরাপত্তা বিভাগের বরাদ্দের ছাটাই প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাব দেন রুমিন ফারহানা। এদিকে ছাটাই প্রস্তাবের আলোচনার জবাব দিতে গিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘বিএনপির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এখানকার আসনে বসে বলছেন- নির্বাচন হয় না। তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে, উনি সংসদে গেলেন কীভাবে? এর জবাব উনি দেবেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ভোট কীভাবে হয়েছে তা আমরা দেখেছি। ওই সময় কারও ভোটকেন্দ্রে যাওয়া লাগতো না। ভোট হয়ে যেতো। ‘আজিজ মার্কা’ নির্বাচন কমিশন তাদের (বিএনপি) ছিল। মাগুরার ভোটের কথাও সবাই জানে। ১৫ ফেব্র“য়ারি বিএনপি কী করেছে। এগুলো কি উনারা ভুল গেছেন।এরপর নির্বাচন কমিশন আইন তৈরির প্রেক্ষাপটও তুলে ধরেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, এখন বিএনপির দাবি হচ্ছে- তত্ত¡াবধায়ক সরকার হতে হবে। তাহলে উনারা ভোটে আসবে। এই সংসদে দাঁড়িয় দ্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত তত্ত¡বধায়ক সরকারকে অবৈধ ঘোষণা দিয়েছে। উচ্চ আদালতের এই রায়ের এক সুতাও বাইরে সরকার যাবে না। কারণ, বর্তমান সরকার আইনে বিশ্বাস করে। আইনের শাসনে বিশ্বাস করে। আইনমন্ত্রী বলেন, বিএনপি বার বার বলছে- তাদেরকে নির্বাচনে আনতে হবে। তারা কি পাকিস্তানে থাকে, যে সেখান থেকে ডেকে আনতে হবে? তারা তো বাংলাদেশে থাকে। বাংলাদেশে হয় নির্বাচন। উনারা নির্বাচন করতে চাইলেই নির্বাচন করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের যে জন্য প্লেয়িং ফিল্ড দরকার সেটা করা হবে। আর এর পদক্ষেপ হচ্ছে নির্বাচন কমিশন গঠন আইন। সেটা করা হয়েছে। বিএনপির নেতারা নির্বাচন কমিশনের বরাদ্দ ছাটাই করে এক টাকা দেয়ার প্রস্তাবের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, উনারা বলেছেন এক টাকা দিতে। উনারা পারবেন একটাকা দিয়ে কোনও নির্বাচন করে দিতে? পারবে না। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশনের টাকা লাগবে। নির্বাচন কমিশন তার অর্থ ব্যয়ে পুরোপুরি স্বাধীন। ইসি ও ইভিএম নিয়ে মুখোমুখি বিএনপি-জাপা : নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন নিয়ে জাতীয় সংসদে উত্তাপ ছড়িয়েছেন রাজপথের অন্যতম দল বিএনপি ও সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। একপক্ষ বলছেন, যে পদ্ধতিতেই ভোট হোক যার শক্তি বেশি সেই বিজয়ী হবেন। আবার অপর পক্ষের দাবি, বর্তমান কমিশন কোনোভাবেই অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ নিয়ে আনিত মঞ্জুরি দাবির উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে, আধুনিক রাষ্ট্রে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নাই। নির্বাচনী ইনস্টিটিউশন যদি শক্তিশালী না হয় নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি যদি জনগণের আস্থা বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায় সেই দেশে নিঃসন্দেহে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে। তিনি বলেন, বিগত দশ বছরে নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পর্কে এমন একটা অনাস্থা তৈরি হয়েছে এখানে নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে যে অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে এটি জনপ্রশাসন এবং জননিরাপত্তা বিভাগে দিয়ে দেন। নির্বাচন কমিশন এখন নির্বাচন করে না, নির্বাচন করে স্থানীয় পর্যায়ের প্রশাসন এবং জননিরাপত্তা বিভাগ এবং জনপ্রশাসনের ব্যক্তিরা। হার’ন বলেন, সরকারের যদি সদিচ্ছা না থাকে কোনোভাবেই নির্বাচন সঠিক করতে পারবেন না। আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল ইভিএম চাচ্ছে না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ৯৬ সালে যখন আন্দোলন করেছেন তখন তিনি বলেছেন আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। তো আজকে বিএনপিকে ছাড়া কি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে? পারবেন না। আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে কীভাবে নির্বাচনে আনবেন সেটিই বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আসতে হবে। রুমিন ফারহানা বলেন, দেশে যদি নির্বাচনই না থাকে, মানুষ যদি তার ভোটই প্রয়োগ না করতে পারে, মানুষ যদি তার পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে না পারে, আগে থেকে যদি ব্যালটে বাক্স ভরা থাকে, দিনের ভোট যদি রাতে হয়, তাহলে নির্বাচন কমিশন দিয়ে হবে কি। নির্বাচন যে এখন একটা মলযুদ্ধ তার একটা বড় প্রমাণ এই নির্বাচন কমিশন শপথ নেয়ার পর পরই প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন জেলনস্কির মতো বিএনপিকে মাঠে থাকতে হবে। ভোট কি একটা যুদ্ধ যে জেলনস্কির মতো বিএনপিকে মাঠে থাকতে হবে? আর এক কমিশনার বলেছেন মেশিনে কোনো সমস্যা নাই সমস্যা হচ্ছে গোপন কক্ষে যে ডাকাত ঢুকে থাকে। এই ডাকাত যে শুধু দলীয় ক্যাডার তা নয় এরমধ্যে আছে পুলিশ, প্রশাসন এবং এই ডাকাতদের যেভাবে পুরস্কৃত করা হয় সেই পুরস্কার দেখে বোঝা যায় ভবিষতে আরও ডাকাত বাড়বে। যদি ডাকতদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয় তাহলে এই দেশে নির্বাচন কোন দিনও সুষ্ঠু হবে না। বিনাভোটে সংসদ গঠন চলতেই থাকবে। র’মিন ফারহানা বলেন, সরকারের পুরনো খেলা স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোকে সুষ্ঠু দেখানো। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের সামনে। ২০১৪ সালেও দেখেছি ২০১৮ সালেও দেখেছি। তিনি বলেন, কুমিলা সিটি ভোটে মাত্র এক জন এমপির হুমকি ধামকি এই নির্বাচন কমিশন সহ্য করতে পারেনি। বার বার তাকে অনুরোধ করা হয়েছে তাকে চিঠি পর্যন্ত দেয়া হয়েছে কিন্তু তাকে এলাকা থেকে সরাতে পারেননি। এই ইসি নতজানু, মেরুদন্ড ভাঙা অবস্থা, তাতে খুব পরিষ্কার বোঝা যায় আগামীতে কী জাতীয় নির্বাচন হবে। যে কমিশন এক এমপিকে সামাল দিতে পারে না। সেই কমিশন কী করে ৩০০ এমপিকে সামাল দিয়ে জাতীয় নির্বাচন করবে? এটাই বড় প্রশ্ন। কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, নির্বাচন করে রাজনৈতিক দল। স্টেকহোল্ডার হচ্ছি আমরা যারা প্রতিদ্ব›িদ্বতা করি। আমরা যদি সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি না করি তাহলে ঘরে বসে নির্বাচন কমিশন কোনোদিন কোনো কিছু করতে পারবে না। সব কিছু স্বাধীন। প্রকারান্তরে কোনো নির্বাচন কমিশন কোনো দিন স্বাধীন না। সমস্ত কমিশনই সরকার দ্বারা গঠিত হয় সরকারের অধিনে কাজ করে। আয়ুব খানের আমলে হয়েছে, জিয়াউর রহমানের আমলে হয়েছে, আমাদের আমলে হয়েছে, এখনও হচ্ছে। এটা চলতেই থাকবে। নির্বাচনের সময় যার ক্ষমতা বেশি, যার শক্তি বেশি, লোক সংখ্যা বেশি, তাকে কোনো কিছু করে রোধ করা যায় না। ইভিএম বলেন আর ব্যালট বলেন লোক যার বেশি সেই সব। কমিশন দিয়ে কিছু হবে না। আমরা রাজনৈতিকদলগুলো ঠিক না থাকি এই নির্বাচন যদি সঠিকভাবে করার চেষ্টা না করি সমস্ত দল জাতীয় স্বার্থে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য শুধু কমিশনের ঘাড় চাপিয়ে দিলে হবে না। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মো. রস্তুম আলী ফরাজী বলেন, যার কাজ তাকে করতে দিতে হবে। ইলেকশন কমিশনের দায়িত্বই হচ্ছে নির্বাচন পরিচালনা করা। নির্বাচন সঠিক হতে হবে, ফেয়ার হতে হবে। তিনি বলেন, ডিজিটাল যুগে ইভিএমের কোনো দোষ নেই। যারা ইভিএম মানে না, সমস্যা কোথায় সেটা পরিবর্তন করতে হবে। সমস্যা হচ্ছে পেছনে যদি কেউ থাকে। পেছনে যেন কেউ না থাকে সেটা দেখতে হবে। ইভিএম না হয়ে যদি ব্যালটে হয় সেখানেও তো কেউ না কেউ প্রভাব ফেলতে পারে। হার’নকে রাঙার হুমকি : এর আগে বুধবার অর্থবিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ যখন সংসদে বক্তব্য রাখবেন তখন তাকে বাধা দেয়া হবে বলে হুমকি দেন বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা। ক’দিন আগে এক অধিবেশনেও হারুনের বক্তব্যে নাখোশ হয়ে রাঙ্গা সংসদের লবিতে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তিনি দায়ী থাকবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। অর্থ বিলের সংশোধনীর ওপর আলোচনাকালে বিএনপি দলীয় সদস্য হারুন তার বক্তব্যে স্পিকারের বিরুদ্ধে সময় না দেয়ার অভিযোগ তুলে বলেন, সরকারি দলের সদস্যদের অনির্ধারিত বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের সময় বাড়িয়ে দিতে আপনি ডিফেন্সিভ থাকেন। বাজেটের ওপর মাসব্যাপী এ আলোচনায় বাজেট নিয়ে খুবই কম কথা হয়েছে। পুরো কথা হয়েছে পদ্মা সেতু নিয়ে। স্পিকারের বিরুদ্ধে সময় কম দেয়ার অভিযোগ তুলে হারুন বলেন, বিশেষ অধিকারের নোটিশে সময় বেঁধে দিয়েছেন দুই মিনিট। এটা অতীতে হয়নি। আগের দিন সরকার দলীয় সদস্য মমতাজ বেগমের বক্তব্যের প্রসঙ্গ উলেখ করে হারুন বলেন, আমরা মাত্র কয়েকজন সদস্য। আমরা কথা বলতে গেলে এত যদি আপত্তি ও বাধা থাকে তাহলে বলেন, আমরা সংসদ ছেড়ে চলে যাই। সংসদে কথা বলার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে আপনাকে। তার এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্পিকার বলেন, এক মিনিট কেন আপনাকে চার মিনিট সময় দেওয়া হয়েছে। কথা বলার সময় তো খেয়াল থাকে না। আপনাদের প্রাপ্য সময়ের তুলনায় বেশি সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করি। আপনি যে কথাগুলো বলেছেন, সেটা ভেবে বলা প্রয়োজন। পরে রাঙ্গা তার বক্তব্যে স্পিকারকে সুন্দরভাবে সংসদ পরিচালনার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, একজন বিরোধী দলীয় সদস্য আপনাকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দিয়েছেন। অন্য কোনো স্পিকার হলে তার মাইক বন্ধ করে দিতেন। তিনি বলেন, আমরা বিরোধী দল থেকে চাইব, সরকারকে উৎখাত করতে। কিন্তু আলাহ না চাইলে কীভাবে উৎখাত করব? প্রধানমন্ত্রী এখন দেশের সবচাইতে জনপ্রিয় ব্যক্তি। পদ্মা সেতুতে এমন জনপ্রিয়তা বেড়েছে যাতে বিএনপির মতো জাতীয় পার্টিকে থালা নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। এ সময় মাইক ছাড়াই হারুন টিপ্পনী কেটে বলেন, এখন সময় বাড়িয়ে দেন। এর জবাবে রাঙ্গা বলেন, আপনাকে কি চিফ হুইপের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে? তিনি স্পিকারের উদ্দেশে বলেন, আমি দুঃখ প্রকাশ করে বলছি, উনি যখন কথা বলবেন আমি কিন্তু কথা বলব, ওনাকে কথা বলতে দেব না। পরে সংশোধনী আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির হারুন বলেন, এখানে অনেক বিষয় এসেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এমন দলকে বিরোধী দলে এনেছেন। আমি জীবনেও এ ধরনের আলোচনা শুনিনি। যে ধরনের হুমকি ধমকি দেয়া হচ্ছে। আমি সত্যি আতঙ্কিত। এ সংসদে সাড়ে তিনশ সদস্যের মধ্যে আমরা মাত্র কয়েকজন। এত যদি হুমকি ধমকি দেন আমরা তো চ্যাপ্টা নয় ভর্তা হয়ে যাব। এ পরিস্থিতি থেকে আমাদের সুরক্ষা দেয়া ব্যবস্থা করেন।