## জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের ভোটার চূড়েন্তের চিঠি ## স্থানীয় সরকারের সীমানা বিন্যাস চূড়ান্ত ## তফসিল সেপ্টেম্বর মাসেই
জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ দেশের সব জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) তোড়জোর শুরু হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে জেলা পরিষদের সীমানা বিন্যাস সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পন্ন সংক্রান্ত নির্দেশনা পেয়েই এ কর্মযজ্ঞে নেমেছে ইসি। মেয়াদোর্ত্তীণ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরাই বর্তমানে পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ প্রশাসকের মেয়াদ দায়িত্বের শুরুর দিন থেকে ৬মাস অর্থাৎ আগামী ২৬ অক্টোবর তাদের মেয়াদ শেষ হবে। এ বিবেচনা থেকেই আগামী অক্টোবারের মধ্যেই এ নির্বাচন শেষ করার তোড়জোড়ে নেমেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশন। আগামী সেপ্টেম্বর মাসেই ঘোষনা করা হবে তফসিল। এ লক্ষ্যে জেলা পরিষদের নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করতে কমিশনের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের চিঠি পাঠিয়েছে। রবিবার (২১ আগস্ট) এ চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে দ্রুত তালিকা চূড়ান্ত করে কমিশনে তথ্য পাঠানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন করার বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে আমরা একটা চিঠি পেয়েছি। এর আলোকে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, শিঘ্রই একটা কমিশন সভা আয়োজন করা হচ্ছে; সেখানেই কবে নির্বাচন হবে সিদদ্ধান্ত নেয়া হবে। কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় জেলা পরিষদ নির্বাচন করতে সীমানা সংক্রান্ত কোনো জটিলতা নেই, সেটা আমাদের জানিয়েছেন। ওই চিঠির আলোকে আমরা নির্বাচন সম্পন্ন করার প্রাথমিক যে ধাপ রয়েছে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করার, – সেজন্য জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের চিঠি পাঠিয়েছি। তাদের এ কার্যক্রম সম্পন্ন হলে চলতি বছরের মধ্যে যেকোন সময় এ নির্বাচন হবে। আশা করছি, অক্টোবারের মধ্যেই নির্বাচনটি করা হবে; যোগ করেন এই কর্মকর্তা। বলেন, এ জন্য স্থানীয় সরকার থেকে সম্মতি লাগবে। কমিশনের একাধিক জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা জেলা পরিষদের ওয়ার্ডসমূহের নির্বাচন মন্ডলী ও ভোটার তালিকা সম্পন্ন করণের চিঠি পেয়েছেন বলে এ প্রতিবেদনকে নিশ্চিত করেছেন। বলেছেন, এ তালিকা চূড়ান্ত করার জন্য কোন সময়সীমা নির্ধারণ করে না বললেও দ্রুত সময়ের মধ্যে করার তাগিদ আছে। ইসি সচিবালয়ের নির্বাচন পরিচালনা-২ শাখার উপ-সচিব খোরশেদ আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন, ২০২২ এবং জেলা পরিষদ (ওয়ার্ডের সীমা নির্ধারণ), বিধিমালা, ২০১৬ অনুযায়ী দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সীমানা পুন:নির্ধারণের কার্যক্রম সম্পন্ন করে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তদ্প্রেক্ষিতে জেলা পরিষদ আইন, ২০০০ এর ধারা ১৭ এবং জেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা, ২০১৬ এর বিধি ৯ অনুযায়ী নির্বাচন মন্ডলী ও ভোটার তালিকা প্রস্তুত ও প্রাসকিঙ্গ কার্যক্রম সম্পন্ন করে ইসিতে অবহিত করার জন্য নির্দেশিত হয়ে অনুরোধ করা হলো। এদিকে, জেলা পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদে যারা প্রার্থী হতে আগ্রহী ইতিমধ্যে সম্ভাব্যরা মাঠ জরিপে নিজের জনপ্রীয়তা যাচাইয়ে নেমে পড়েছেন। সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম সোমবার (২২ আগস্ট) জেলার দেবহাটা উপজেলায় নির্বাচনী গণ-সংযোগ চালিয়েছেন। শ্যামনগর উপজেলায় এ নেতার কর্মসূচি রয়েছে বলে স্থানীয় দলীয় নেতাকর্মী সূত্রে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মো. নজরুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর জেলা পরিষদ বিলুপ্ত হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানদের প্রশাসক নিয়োগ করেন সরকার। আগামী অক্টোবরেই আমাদের মেয়াদ শেষ হবে। ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় জেলা পরিষদের সীমানা বিন্যাস শেষ করেছে। এটা জেনেই নির্বাচনী প্রচারে নেমেছি। সোমবার স্থানীয় দেবহাটা উপজেলায় কর্মসূচি পালন করেছি। আগামীতে শ্যামনগরেও কর্মসূচি আছে। আমরা আশা করছি সেপ্টেম্বরেই তফসিল ঘোষনা হবে। তাই এখন থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছি। ইসি ও মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশের ৬১ জেলায় ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। ২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি নির্বাচিতরা শপথ নেন। ওই বছরের জানুয়ারি মাসেই জেলা পরিষদগুলোর প্রথম বৈঠক হয়। ফলে পরিষদের ৫ বছরের মেয়াদ চলতি বছরের জানুয়ারিতেই শেষ হয়েছে। জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী, পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিন আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। কিন্তু দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের মেয়াদ পাঁচ বছর উত্তীর্ণ হওয়ায় গত ১৭ এপ্রিল পরিষদগুলো বিলুপ্ত করা হয়। গত ২৭ এপ্রিল সদ্য সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরাই জেলা পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্ব দেয়া হয়। আগামী অক্টোবরের ২৬ তারিখে বর্তমান প্রশাসকদের মেয়াদ শেষ হবে। এ সময়ের আগে নির্বাচন করতে সব ধরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। বলছেন, জেলা পরিষদের নির্বাচনে কোন জটিলতা নেই। কারণ ভোটার সংখ্যা কম এবং নির্বাচিতরাই ভোটার। আর জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) এ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। সেপ্টেম্বরের শেষ অথবা অক্টোবরের প্রথম ভাগে এ নির্বাচন করতে হবে। কারণ মেয়াদ পূর্ণের আগেই নির্বাচন করে নির্বাচিতদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। উলেখ্য, – জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের বিধান যুক্ত করে গত ৬ এপ্রিল ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) বিল-২০২২’ সংসদে পাস হয়। ১৩ এপ্রিল সংশোধিত জেলা পরিষদ আইনের গেজেট প্রকাশ করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা পরিষদ বিলুপ্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। সংশোধিত জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী জেলা পরিষদের ‘সচিব’ পদের নাম বদলে ‘নির্বাহী কর্মকর্তা’ করা হয়েছে।