রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ০১:৪০ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
শান্তি আলোচনার পর ইউক্রেনে বৃহত্তম ড্রোন হামলা চালালো রাশিয়া সিরিয়ায় পুনরায় কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে বিশ্বব্যাংক অপারেশন সিঁদুর নিয়ে মন্তব্য, ভারতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক গ্রেফতার সৌদি আরবে অবৈধদের ধরতে অভিযান, গ্রেফতার ১৫ হাজার হায়দরাবাদের চারমিনারের কাছে ভবনে আগুন, শিশুসহ নিহত ১৭ যে কারণে ব্যর্থ হলো ভারতের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ভারতের জন্য আকাশসীমা আরও এক মাস বন্ধ রাখবে পাকিস্তান: রিপোর্ট ইরানে শিয়া মাজারে হামলার ঘটনায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ—মধ্যাঞ্চলে ভয়াবহ টর্নেডোয় ২৭ জনের প্রাণহানি যে কারণে পেনাল্টি নেননি হালান্ড

অগ্নিঝরা মার্চ’ ৭১

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫

কালরাত্রির পূর্বাভাস
এফএনএস: ১৯৭১ সালের মার্চ মাস ছিল এক রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের সূচনা। সারা বাংলাদেশ তখন আন্দোলন—সংগ্রামে উত্তাল। ২৫ মার্চের ভোর থেকেই ঢাকার রাজপথে চলতে থাকে একের পর এক মিছিল। প্রতিটি মিছিলের হাতে ছিল দেশীয় অস্ত্র, যেনো আগত কোনো সংকটের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে জনতা। প্রকৃতপক্ষে, গত ২৪ মার্চ থেকেই পরিস্থিতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছিলÑএকটি বড় কিছু ঘটতে যাচ্ছে। ২২ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে কর্নেল ওসমানী তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আপনার কি মনে হয়, আগামীকালই চূড়ান্ত কিছু ঘটবে?’ বঙ্গবন্ধু জবাবে বলেছিলেন, ‘না, আমি মনে করি ২৫ মার্চ হবে সেই দিন।’ বঙ্গবন্ধুর এই পূর্বানুমান ছিল অব্যর্থ। ২৫ মার্চেই পাকিস্তানি সেনারা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে এক ভয়ঙ্কর গণহত্যার নীলনকশা বাস্তবায়ন করেছিল। সেদিন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বুঝে গিয়েছিল, বাঙালিকে দাবিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। তাই তারা নৃশংসভাবে স্বাধীনতার আন্দোলন দমনের সিদ্ধান্ত নেয়। ২৫ মার্চ দুপুর ১২টায় খবর আসে, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তাঁর দলবলসহ ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে চলে গেছেন। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আলোচনার নামে আসা নেতারাও ঢাকা ত্যাগ করেছেন। অর্থাৎ স্পষ্ট হয়ে যায়, আলোচনা ছিল কেবল কালক্ষেপণের একটি কৌশল। প্রকৃতপক্ষে, ২৫ মার্চেই তারা চূড়ান্ত আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিল। সেদিন সকাল ১১টায় সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ হেলিকপ্টারে মেজর জেনারেল জানজুয়া, মেজর জেনারেল মিঠা খান, মেজর জেনারেল নজর হোসেন শাহ ও জেনারেল ওমর রংপুরে যান। সেখানে সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বৈঠকের পর তারা দ্রুত যশোর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার সামরিক ঘাঁটিগুলো পরিদর্শন করেন। মূলত, এসব স্থানেই চলতে থাকা সামরিক প্রস্তুতির দিকনির্দেশনা দেন তারা। বিকেলে তারা ঢাকা ফিরে আসেন এবং রাতেই শুরু হয় বিভীষিকাময় ‘অপারেশন সার্চলাইট’। সকাল থেকে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবন ছিল আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু। হাজারো মানুষ সেখানে জড়ো হয়েছিল। একের পর এক মিছিল আসতে থাকে। বঙ্গবন্ধু সবার উদ্দেশে বলেন, ‘শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। স্বাধীনতার জন্য আমাদের হয়তো এখনই লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’ দুপুরে, ইয়াহিয়ার ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে গমন এবং রাজনৈতিক নেতাদের ঢাকা ত্যাগের খবর পেয়ে তিনি তৎক্ষণাৎ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। সেখানে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, খন্দকার মোশতাক আহমেদ, কামারুজ্জামান, শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, আ স ম আব্দুর রবসহ অন্যান্য শীর্ষ নেতা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বঙ্গবন্ধু নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা যার যার এলাকায় ফিরে যাও এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নাও।’ তখন অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধুকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, ‘আমি যদি ঢাকা ত্যাগ করি, তাহলে পাকিস্তানি সেনারা এই শহরকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করবে। আমি এখানেই থাকব।’ রাত ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু তাঁর সহযোদ্ধাদের বিদায় জানিয়ে বলেন, ‘আমার স্বপ্ন পূরণ হবেই। বাংলাদেশ স্বাধীন হবেই।’ এরপরই শুরু হয় পাকিস্তানি বাহিনীর পরিকল্পিত গণহত্যা। রাত ১২টার পর মুহুমুর্হু গোলাবর্ষণের মাধ্যমে ঢাকায় নেমে আসে মৃত্যুর বিভীষিকা। নিরীহ মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়, বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রদের হত্যা করা হয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও পিলখানায় নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। ২৫ মার্চের এই কালরাত্রির মধ্য দিয়েই শুরু হয় বাঙালির সর্বাত্মক মুক্তিযুদ্ধ। আর এই রাতেই পাকিস্তানি বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। কিন্তু তাঁর সেই অমোঘ ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হয়েছিলÑবাংলাদেশ স্বাধীন হয়। ২৫ মার্চ শুধু একটি দিন নয়, এটি ইতিহাসের এক ভয়াল অধ্যায়। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, কত রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com