মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ০১:৪৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
ধুলিয়াপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি হলেন আশিক সাতক্ষীরা রেড ক্রিসেন্টের ফুড প্যাকেজ বিতরণ আছিয়া হত্যার প্রতিবাদে মহিলা জামায়াতের মানববন্ধন আশাশুনি পলিথিন ও প্লাস্টিক দুষণ প্রতিরোধে করণীয়তা নিয়ে কর্মশালা আইন—শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আশাশুনি থানা পুলিশের বিশেষ মহড়া কয়রায় হরিণের মাংস ফেলে পালালো শিকারীরা নারী ও শিশু ধর্ষনের প্রতিবাদে কয়রায় মানববন্ধন কয়রায় বিএনপির মতবিনিময় সভা তালায় চাঞ্চল্যকর শিক্ষক বিপ্লব হত্যাকান্ড এমপি, এসপি, দু’ওসিসহ আসামিদের এজাহার গ্রহণের নির্দেশ নূরনগরে অতি দরিদ্র পরিবারের মাঝে ভিজিএফ এর চাউল বিতরণ

অগ্নিঝরা মার্চ’ ৭১

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫

জয়দেবপুরে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের সূচনা
এফএনএস: ১৯৭১ সালের ১৮ মার্চ। স্বাধীনতার দাবিতে ফুঁসে উঠেছে গোটা বাংলাদেশ। রাজপথে নেমে এসেছে মুক্তিপাগল জনতা, এক চূড়ান্ত ডাকের অপেক্ষায়। পাক হানাদারদের দমন—পীড়ন আর বিশ^াসঘাতকতার জবাব দিতে প্রস্তুত বীর বাঙালি। এই দিনেই প্রথমবারের মতো সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে ওঠে জয়দেবপুরে, যেখানে বাঙালির অস্ত্র প্রথমবারের মতো পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে। এই দিনেই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে ৯০ মিনিটের বৈঠক করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তবে বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধুর মুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বাইরে অপেক্ষমাণ জনতা ও সাংবাদিকরা অধীর আগ্রহে তাঁর বক্তব্য শোনার জন্য অপেক্ষা করছিল। বঙ্গবন্ধু গাড়ি থেকে নেমে এসে দৃঢ় কণ্ঠে বলেনÑ “দাবি না মেটা পর্যন্ত আমরা জাতীয় পরিষদে বসতে পারি না।” সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণের কঠোর নিন্দা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “টঙ্গি—জয়দেবপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় সেনাবাহিনী গুলিবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। তাহলে আলোচনার অর্থ কী? শহীদদের রক্তের সঙ্গে আমি বিশ^াসঘাতকতা করতে পারব না।” তিনি ঘোষণা করেনÑ“আমরা আবার কথা বলব, তবে কোনো আপস নয়।” বঙ্গবন্ধুর এই বক্তব্যের মধ্যেই জয়দেবপুরে ঘটে যায় ঐতিহাসিক এক ঘটনা। পাক সেনারা সশস্ত্র বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্র করার ষড়যন্ত্র করে। তবে বাঙালি সেনারা আগে থেকেই সতর্ক ছিলেন। জয়দেবপুরে অবস্থানরত দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিকাংশ সদস্যই ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন লে. কর্নেল মাসুদ হাসান খান ও সহ—অধিনায়ক মেজর কে এম শফিউল্লাহ। পাক বাহিনীর ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে বাঙালি সৈন্যরা অস্ত্র জমা দিতে অস্বীকৃতি জানান। ঢাকা ব্রিগেড সদর দফতর থেকে তাদের ৩০৩ ক্যালিবারের অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দিতে বলা হয়, যা তারা কৌশলে এড়িয়ে যান। এই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ার পর ১৯ মার্চ জয়দেবপুর ক্যান্টনমেন্টে আসার ঘোষণা দেন ব্রিগেড কমান্ডার পাঞ্জাবি ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব। উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্র করা। খবরটি দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। জয়দেবপুরের হাজার হাজার জনতা হাতে যা ছিল তাই নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। শ্রমিক, কৃষক, সাধারণ মানুষÑসবাই একসঙ্গে প্রতিরোধের প্রস্তুতি নেয়। প্রতিরোধ ঠেকাতে পাক বাহিনী ফাঁকা গুলি ছোড়ে, কিন্তু বাঙালির ভয় ছিল না। জনতা ইট—পাথর ছুড়তে থাকে, শুরু হয় প্রথম সংঘর্ষ। পাক বাহিনী টিকে থাকতে না পেরে ঢাকার দিকে পিছু হটতে বাধ্য হয়। কিন্তু চান্দনা চৌরাস্তায় আরও একদফা প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। পাকিস্তানি সেনারা এবার জনতার ওপর গুলি চালায়, অনেক নিরীহ মানুষ শহীদ হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী কারফিউ জারি করে। তবে বাঙালির প্রতিরোধ থামেনি, বরং এটি ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। এই ঘটনার পর বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বাঙালির প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের খবর ছড়িয়ে পড়ে। দেশের বিভিন্ন স্থানে মানুষ লাঠি, বল্লম, তীর নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে, সশস্ত্র প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। ১৮ মার্চের এই প্রতিরোধ ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সূচনা। বাঙালি প্রথমবারের মতো অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলÑতারা আর দাসত্ব মেনে নেবে না, স্বাধীনতার জন্য যে কোনো মূল্যে লড়বে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com