আবু তালেব মোল্ল্যা: দেশপ্রেম, বীরত্ব, দায়িত্ববোধ আর সহকির্ম সহযোদ্ধাদের জন্য অনন্য অসাধারন দৃষ্টান্ত দেখে গেলেন বৈমানিক স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ। দেশ বীর এই অকুতোভয় বৈমানিক গত বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে অবস্থান করা জেলে, যাত্রী সহ পতেঙ্গা বাসী সত্যিকার অর্থেই দুই চোখ মেলে, মনে প্রাণে যে অনাকাঙ্খিত অথচ বিরল দৃশ্য দেখেছিল তা যেন এক খন্ড বাংলাদেশ সেই এক খন্ড বাংলাদেশ পুরোদেশকে গৌরবে, বীরত্বে পরিপূর্ণতা আনায়ন করেছে। পতেঙ্গাবাসি বাংলাদেশের চোখে দেখেছে বাংলাদেশ তার গর্বিত সন্তানকে হারিয়েছে আর সেই দেশপ্রেমিক বীর সেনানী নিজের বিপন্ন জেনেও জলন্ত বিমান কর্ণফুলী নদীর উন্মুক্ত এলাকায় নিতে সক্ষম হয়েছে। অতি অল্প বয়সে আসিম জাওয়াদ এর অর্জনের সীমাহীনতা কেবলই মাত্র সীমাহীনতা। তিনি দেশকে জয় করেছেন। দেশবাসি গভীর শ্রদ্ধা আর সম্মানের সাথে অশ্রুসিক্ত নয়নে স্মরন করে চলেছেন দেশরত্নকে। গতকাল মানিকগঞ্জ জেলার গোপালপুরের নানার কবরে চির নিদ্রায় সায়িত হয়েছেন তিনি। দেশের সব প্রান্ত শোকে এবং আলোক বিচ্ছুরনে উচ্চারিত হচ্ছে হার না মানা এই বৈমানিকের নাম। পিতামাতা, স্ত্রী দুই শিশু সন্তান তাদের প্রিয়জনকে আর পাবে না যেন সত্য অনুরুপ ভাবে দেশ গর্বিত। জাতি তার প্রতিভাবাবন সন্তানকে স্মরনে রাখবে। বৈমাসিক জাওয়াদ কেবল মানিকগঞ্জের আমানউল্লাহ ও নিলুফা খানম দপ্তত্তির সন্তান নন, তিনি বাংলাদেশর সন্তান, সারা বাংলাদেশের সোনার ছেলে। দেশবাসির ভালবাসায় সিক্ত বৈমানীক জাওয়াদ কতটুকু প্রতিশ্রুতিশীল আর দেশপ্রেমের দীক্ষায় আচ্ছাদিত ছিলো। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও অন্যকারোর জীবন বিপন্ন হোক তা চাইনি আর তাই তো তার মৃত্যু দেশকে জানান দিয়ে গেছে দেশের প্রতি ভালবাসা, শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত তিনি দেশের সম্পদ বিমানকে রক্ষা করতে চাইছিলেন, ইঞ্জিনে আগুন ধরার পরও তিনি প্যারাসুটের সাহায্যে বিমান হতে না নেমে দেশের সম্পদ বাঁচাতে চেয়েছেন জনপদে বিমান বিধ্বস্থ হলে প্রাণহানী ঘটার সম্ভাবনাকে সামনে রেখে নদীতে জলন্ত বিমান এনেছেন কতটুকু প্রাণপন চেষ্টা জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষনেও বিমান রক্ষায় জীবনহানী রোধে থেকে অবিচল। পরাজয়ে ডরে না বীর এই কথাটি কেবলমাত্র আসিম জাওয়াদের জন্যই প্রোথিত। নিজে মৃত্যুকে বীরত্বের শ্রেষ্ঠত্বই জয়গান গেয়ে গেলেন। মাত্র বত্রিশ বছর বয়সী এই দায়িত্বশীল বৈমানিক ইচ্ছা করলে নিজের জীবন রক্ষা করতে পারতেন কিন্তু তিনি তা করেননি। জনবসতি এলাকায় আগুন ধরা বিমানটি জনমানবশুন্য নদীতে নিয়ে ফেলেন। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার কল্যানে বৃহস্পতিবার ৯ মে সকাল দশটা বিশ মিনিটে বাংলাদেশ বাহিনীর ইয়াক ১৩০ প্রশিক্ষন যুদ্ধ বিমানটির জলন্ত অবস্থায় বিধ্বস্থ হওয়া ও বৈমানিকের মৃত্যু খবর দেখছিলেন তখন সে কারোরই চোখ ঝাপসা হচ্ছিল সেই সাথে দেশ প্রেমের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বীূর বাহাদুরের প্রতি সম্মান শ্রদ্ধা জানাচ্ছিল ১৯৯২ সালের ২০ মার্চ বাংলাদেশের আকাশে আযিম জাওয়াদ নামের যে সুর্য উদিত হয়। অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত জীবনে মাত্র ৩২ বছর ১ মাস ২০ দিনের জীবনে অস্তমিত হলো। দেশ এবং জাতিকে তিনি আরও অনেক কিছুই দিতে পারতেন। অত্যন্ত অল্প বয়সে, সংক্ষিপ্ত সময়ে মৃত্যুর কাছে হেরে গেলেও দেশকে, দেশের সম্পদ দেশ প্রেমকে হারতে দেইনি। পেশাদারিত্ব, বীরত্বের আর সাহসিকতাই শেষ নয় আত্মত্যাগী বৈমানিক অত্যন্ত মেধাবী বৈমানিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। দেশ বিদেশে প্রশিক্ষন নিয়েছেন, দেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছেন। জম্মালে মৃত্যু হবে এটাই স্বাভাবিক এবং চিরন্তন সত্য আর সেই অমোঘ সত্যাসত্যকেই বরন করলো দেশ সন্তান, আসিম জাওয়াদ। এইদেশ, এইমাটি তার আত্মত্যাগী সন্তানকে মনে রাখবে, জাওয়াদরা বারবার আসেনা, জাওয়াদরা আলোক আভার বিচ্ছুরন ঘটিয়ে অনন্তলোকে গেলেও তারা দেশ জাতির কাছে থেকে যায় মৃত্যুঞ্জয়ী। জাতির এই বীর সন্তানের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান আর আমাদের শোকগাঁথা নিশ্চয়ই তিনি শান্তিতে ঘুমাবেন- অবিচল জেগে থাকবে তার কীর্তি।