শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৫৮ অপরাহ্ন

অনিয়মের অভিযোগ ২০ থেকে ২৫ ডিসি ও এসপি প্রত্যাহারের ঝুঁকিতে

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৩

জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে ॥ গুরুতর অনিয়মের অভিযোগে ২০ থেকে ২৫টি জেলার ডিসি, এসপি ও ওসির বিরুদ্ধে তদন্ত করছে নির্বাচন কমিশন ইসি। তদন্ত হওয়া বিভাগের মধ্যে খুলনার কয়েকটি জেলা, চট্টগ্রামের কয়েকটি জেলা ও বরিশালের কয়েকটি জেলা রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রত্যাহার হতে পারেন জেলার গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা। এছাড়া ৩০০ সংসদীয় আসনের বিপরীতে প্রতিদিন শ‘ শ’ অভিযোগ আসছে। এসব অভিযোগের মধ্যে বর্তমান এমপি ও মনোনীত প্রার্থী, স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং এলাকার সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তির পক্ষ থেকে আসছে অভিযোগ। বলা যায়, তফসিল ঘোষনার পর থেকে এখন পর্যন্ত তিন শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। নির্বাচন কমিশন বলছে, – অভিযোগের স্তুত জমা হচ্ছে। সব অভিযোগ আমলযোগ্য না। তবে আমলযোগ্যগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে কমিশন। তবে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, বদলি নিদিষ্ট সময় পর্যন্ত করা হবে এমন না। ভোটের আগের দিন পর্যন্ত চলমান। গুরুতর অভিযোগ পেলেই তাকে বদলি না প্রত্যাহার করা হবে। এখন পর্যন্ত তিনশ সংসদীয় আসনের বিপরীতে বিশ থেকে পঁচিশ জন এসপি ও ডিসির বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে। খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগসহ আরও কয়েকটি বিভাগ রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবারও বেশ কিছু আসন থেকে অভিযোগ এসেছে ইসিতে । এমন একটি অভিযোগ করেছে লালমনিরহাট-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোছা. হালিমা খাতুন। তিনি তার অভিযোগে সরাসরি ডিসি, এসপি, কালিগঞ্জ উপজেলার ইউএনও ও ওসির বদলি চেয়েছেন। অভিযোগে বলেন, তারা দীর্ঘদিন এখানে অবস্থান করছেন এবং স্থানীয় এমপি ও মন্ত্রীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন। এই প্রশাসন দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব না। অরেকটি অভিযোগ জমা হয়েছে, ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে। এ আসনের সংক্ষুদ্ধ একাধিক ব্যক্তি স্বাক্ষর করেন। ঝিনাইদহের শৈলকূপা থানার ওসিকে বদলি চেয়েছেন। প্রতিদিন এমন অভিযোগ আসছে ইসিতে। এমনকি যশোরের এসপি প্রলয় জোয়াদ্দারের বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টির (জাপা) ছয়জন এমপি প্রত্যাহার চেয়ে ইসিতে আবেদন জানিয়েছে। তবে কমিশন অভিযোগ নথিতে তুলে কমিশনের মতামতের জন্য উত্থাপন করলেও নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা অভিযোগটি তদন্তের জন্য মত দিলেও অন্য কমিশনাররা নোর্টে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন। এছাড়া অভিযোগ দেওয়া জাপার ছয়জন প্রার্থী আবেদনটি প্রত্যাহার করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিশনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, যশোর এসপির বিরুদ্ধে ছয়জন প্রার্থী একযোগে অভিযোগ দিলেও তার কোনো ভিত্তি নেই। অপরাধ ওই জেলায় তার শ্বশুর বাড়ি। এটা কোনো অপরাধ হতে পারে না। সে কাউকে অন্যায়ভাবে মেরেছে কিনা, নারীঘটিত কেলেংকারি আছে কিনা কিংবা কোনো প্রার্থীকে ফেবার করছে কি না তা হলেই অভিযোগ জোরদার হতো। কিন্তু কমিশনের নেটওয়ার্কে যশোরের এসপির বিরুদ্ধে এ ধরণের কোনো অভিযোগ নেই। প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রায় চার শতাধিক কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। তবে প্রত্যাহার করা হয়েছে একজন ডিসি, দুই জন পুলিশ কমিশনার এবং পাঁচ এসপি এবং ৩ জন ওসিকে। এর মধ্যে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার ডিসিকে গত ১০ ডিসেম্বর প্রত্যাহার করা হয়। এই ডিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থন দেয়া ভোটারকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ক্ষমতা প্রয়োগ করে আটকে রাখা। এটি ডিসি ও রিটার্নিং কর্মকর্তা জানার পরও পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো ওই দলীয় প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেয়। এতে ওই রিটার্নিং কর্মকর্তার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠায় প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। আর সাতক্ষীর এসপির বিরুদ্ধেও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে গুরুতর অভিযোগ আসে ইসিতে। জোরপূর্বক নিরপরাধ ব্যক্তিদের আটকের নামে অর্থ হাতিয়ে নেয়া, নারী কেলেংকারি এবং মাদকসহ চোরা কারবারির সঙ্গে সখ্যতা অন্যতম। অভিযোগ এবং ইসির সোর্স সূত্রের মধ্যে সমন্বয় ঘটায় ওই এসপিকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এছাড়া প্রত্যাহার করা অন্য পুলিশ কমিশনার ও এসপিরা হলেন, বরিশাল মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও সিলেট মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার, পুলিশ সুপার, হবিগঞ্জ, পুলিশ সুপার, পিরোজপুর, পুলিশ সুপার, নোয়াখালী এবং পুলিশ সুপার, মেহেরপুর। আর প্রত্যাহার হওয়া ওসিরা হলেন, মানিকগঞ্জ সদর, সিংগাইর, মানিকগঞ্জ ও শ্রীপুর, গাজীপুর। এদিকে, এখন পর্যন্ত পরস্পর বদলি হয়েছে ৩০০ সংসদীয় আসনের বিপরীতে ২০৫ জন ইউএনও। যার মধ্যে ময়মনসিংহে ইউএনওদের নিজ জেলার মধ্যে বদলি করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাকিগুলো পার্শ্ববর্তী কিংবা দূরের জেলায় পদায়ন করা হয়েছে। এছাড়া কম-বেশি সাড়ে ৩০০জন ওসিকে বদলি করা হয়েছে। তবে বদলি হওয়ায় সন্তুষ্ট নয় কমিশন। কারণ বদলি হওয়া ওসিদের নতুন কর্মস্থলে পৌছার আগেই প্রভাবশালী র্প্র্থাীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে বলেও ইসির কাছে অভিযোগ এসেছে। এ নিয়েও চরম অস্বস্তিতে কমিশন। তাদের অভিমত, এ ধরণের বদলিতে শুধু স্টেশন বদল হয়েছে। তাই সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ তৈরি হয়নি। যদি প্রত্যাহার করে নতুন কর্মকর্তাকে পদায়ন করা যেতো তাহলেই ইসির প্রত্যাশিত চাওয়া পূরণ হতো। এছাড়া কুমিল্লা-১ সংসদীয় আসনের স্বতন্ত্র নাঈম হাসান এর প্রার্থিতা বাতিল করেছিল রিটার্নিং কর্মকর্তা। এর বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল করেছিল এই স্বতন্ত্র প্রার্থী। ইসির অস্থায়ী আদালত রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্ত বহাল রেখে আপিল না-মঞ্জুর করেন। এই আসনের নৌকার প্রার্থী সবুর এর সমর্থক সারোয়ার হোসেন বাবুল ইসির গেটের বাইরে ওত পেতে ছিল। স্বতন্ত্র প্রার্থী ওই নৌকার কর্মীকে উস্কানিমূলক বক্তব্যের অভিযোগে আক্রমণ করলেও দায়িত্ব পুলিশ তাদের আটক করে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com