এফএনএস এক্সক্লুসিভ: অবশেষে বিমানের টিকিটের দাম নিয়ন্ত্রণে হার্ডলাইনে যাচ্ছে সরকার। বর্তমানে দেশে মধ্যপ্রাচ্যগামী বিমানের টিকিটের মূল্য আকাশচুম্বী। অতিমুনাফালোভী চক্রের লোভের মাশুল গুনছে প্রবাসীসহ সাধারণ বিমান যাত্রীরা। বিমানের টিকিট বাণিজ্য ওই চক্রের নিয়ন্ত্রণে। এয়ারলাইনসগুলোর টিকিট আগাম ব্লক করে তারা নিজেদের জিম্মায় রেখে ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছে। তাতে বিদেশগামী বিমানের যাত্রীদের স্বাভাবিক ভাড়ার তিন গুণ পর্যন্ত বেশি টাকা দিয়ে টিকেট কিনতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে জড়িতদের চিহ্নিতকরণে যাবতীয় বিষয় তদন্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তদন্তকারীরা জড়িতদের শাস্তির জন্য সুপারিশ করবে এবং বিষয়টি সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর ১৩ সদস্য সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। ট্রাভেল এজেন্ট ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সিন্ডিকেটের কারণে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার টিকিট এক লাখ ৯০ হাজার টাকায় পর্যন্ত কিনতে হচ্ছে। চক্রটি বিভিন্ন এজেন্সির চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও যাত্রীদের কোনো প্রকার পাসপোর্ট, ভিসা ও ভ্রমণ নথিপত্র ছাড়াই শুধু ই—মেইলের মাধ্যমে কিছু এয়ারলাইনসের বিভিন্ন রুটের গ্রুপ সিট বুকিং করে থাকে। দু—তিন মাস আগেই অগ্রিম তারিখের পিএনআর তৈরি করে সিট ব্লক করে রাখে। কিন্তু ওই পিএনআরে কোনো যাত্রীর নাম উল্লেখ থাকে না। এজেন্সি বা যাত্রীর ওই ফ্লাইটের টিকিট খালি আছে কিনা তা জানার কোনো সুযোগ থাকে না। টিকিট খুঁজতে গেলে এমন বার্তা আসে সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। টিকিটের এমন কৃত্রিম সঙ্কটকে কাজে লাগিয়ে চক্রটি দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটছে। সূত্র জানায়, ফ্লাইটের তারিখের অনেক আগেই বিদেশি মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ারলাইনসগুলো আসন বিক্রি নিশ্চিত ও অধিক মুনাফার জন্য রিয়াদ, দাম্মাম, জেদ্দা, ওমান, দোহা, কুয়ালালামপুরসহ বিভিন্ন রুটের সিট ব্লক পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে। মূলত মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ারলাইনসগুলো এ ধরনের নাম ছাড়া গ্রুপ বুকিং করে তাদের পছন্দের গুটিকয়েক এজেন্সির মাধ্যমে বাজারে টিকিট বিক্রি করে। ফলে টিকিটের মূল্য ২০ থেকে ৫০ শতাংশ, কখনো দু—তিন গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামপ্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান পরিবহন খাতে চলমান বিমানের টিকিটের অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি অন্যতম বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, কিছু মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ারলাইনস দেশীয় কিছু ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে ৬০ হাজার টিকিট ব্লক করে রেখেছে। সূত্র আরো জানায়, মধ্যপ্রাচ্যে ফ্লাইট পরিচালনায় জড়িত এয়ারলাইনসগুলোই মূলত সিন্ডিকেট। ওই এয়ারলাইনসগুলো এখান থেকে বেশি অর্থ আয় করতে আসছে। তবে সমস্যা সমাধানে বিমান মন্ত্রণালয় ও সিভিল এভিয়েশন জোরালো ভূমিকা রাখলেই কেবল বিমান টিকিটের মূল্যবৃদ্ধি বন্ধ করা সম্ভব। তা না হলে তা কখনোই করা সম্ভব হবে না। মন্ত্রণালয়কে এয়ারলাইনসগুলোকে কোনো ব্লক না দেয়া কিংবা ব্লক দিতে হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যাত্রীর নাম দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেই টিকিট দিতে হবে। তাহলেই কেউ টিকিট ব্লক দিতে পারবে না। মূলত যারা ব্লক দেয় তারা সবাই শেষ মুহৃর্তে টিকিট বিক্রি করে। এদিকে বাংলাদেশ থেকে বিদেশ ভ্রমণের বিভিন্ন পর্যায়ে বিমানের টিকিটের উচ্চ মূল্য পর্যালোচনাসহ যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ৬ ফেব্রুয়ারি সভা করেন। সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে সভাপতি করে তদন্ত কমিটি হয়েছে। আগামী ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে গত ছয় মাসে বিমান টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিতকরণে যাবতীয় বিষয় তদন্ত করে কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা ব্যক্তিকে শাস্তির জন্য সুপারিশ করবে এবং টিকিটের উচ্চমূল্যের বিষয়টি সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর ১৩ সদস্য সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। সভায় এখন থেকে যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর ও পাসপোর্টের কপি ছাড়া যাতে টিকিট বুকিং করা না যায়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর বুকিং টিকিট পরবর্তী তিনদিনের (৭২ ঘণ্টা) মধ্যে ইস্যু না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এয়ারলাইনস ওই টিকিট বাতিল নিশ্চিত করবে। এয়ারলাইনস বা ট্রাভেল এজেন্সি গ্রুপ বুকিং মাধ্যমে ব্লককৃত টিকিট আগাম এক সপ্তাহের মধ্যে ভ্রমণকারী যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বরসহ (পাসপোর্টের পিসহ) টিকিট ইস্যু নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় তিনদিনের মধ্যে এয়ারলাইনস তা বাতিল নিশ্চিত করবে। অন্যদিকে সম্প্রতি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. সাফিকুর রহমান বলেছেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে আগাম সিট বুকিং, টিকিট ব্লকসহ কৃত্রিম মজুদ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা হয়েছে। টিকেটিং নিয়ে কারসাজিতে অভিযুক্তদের বিষয়ে তথ্য পেলেই তাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। সামপ্রতিককালে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন গন্তব্যের বিমানের টিকিট ব্লক ও কৃত্রিম মজুদের বিষয়টি তিনি নিজে মনিটর করেন।