এফএনএস : অবৈধ কাঁচা পাট মজুদদারদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার। বর্তমানে দেশে কাঁচা পাটের সঙ্কট তৈরি হওয়ায় পাটকলগুলোর উৎপাদন ঝুঁকিতে পড়েছে। এমন অবস্থায় পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি আয় অব্যাহত রাখতে কাঁচা পাটের সরবরাহ নিশ্চিতে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। সেজন্য লাইসেন্সবিহীন অসাধু ব্যবসায়ীদের কাঁচা পাট ক্রয়-বিক্রয় ও মজুদ থেকে বিরত রাখা, ভেজা পাট ক্রয়-বিক্রয় রোধ, বাজারে কাঁচা পাটের সরবরাহ নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পাট অধিদফতরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাঁচা পাটের ডিলার বা আড়তদারেরা এক হাজার মণের বেশি কাঁচা পাট এক মাসের বেশি সময় ধরে মজুদ করতে পারবে না। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পাট অধিদফতরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এক বছর আগে সব রেকর্ড ভেঙ্গে কাঁচা পাটের মণপ্রতি দাম ৭ হাজার টাকা ছুঁয়েছিল। তখন পাটকল মালিকেরা সোচ্চার হলে ধীরে ধীরে দাম কমতে থাকে। গত জুলাইয়ে শুরু হওয়া চলতি মৌসুমে কাঁচা পাটের দাম ছিল আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা মণ। কিন্তু দুই মাস না যেতেই শুরু হয় অস্থিরতা। ডিসেম্বরে কাঁচা পাটের দাম গিয়ে ঠেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকায়। আর কাঁচা পাটের দাম বাড়ার কারণে গত বছরের মতো এবারও বিপাকে পড়েছেন পাটকল মালিকেরা। সূত্র জানায়, কাঁচা পাটের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক উদ্যোক্তাই পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতায় কারখানা চালাতে পারছে না। কেউ কেউ আবার উৎপাদন বন্ধও রেখেছে। কাঁচা পাট নিয়ে গতবারের অরাজকতার জন্য অনেক বিদেশী ক্রেতা উদ্যোক্তারা হারিয়েছে। চলতি বছরও তার পুনরাবৃত্তি হলে পাটকল রুগ্নশিল্পে পরিণত হবে। তাতে পাটকল শ্রমিকদের পাশাপাশি পাট চাষীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে এবার পাটকল মালিকদের দুই সংগঠন বিজেএমএ ও বিজেএসএ নেতারা চলতি মাসের গোড়ার দিকে ৯ জানুয়ারি থেকে উচ্চমানের পাট প্রতি মণ সর্বোচ্চ ৩ হাজার ২০০ টাকা এবং নিশ্নমানের পাট সর্বোচ্চ ২ হাজার ৭০০ টাকায় কিনবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। পরে ২০ জানুয়ারি থেকে উচ্চমানের পাট প্রতি মণ সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা কেনার সিদ্ধান্ত নেয় বিজেএমএ ও বিজেএসএ নেতারা। সূত্র আরো জানায়, চলতি পাট মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী পাট চাষ নিশ্চিতে বীজ সরবরাহ ঠিক রাখতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। একই সাথে মানসম্মত পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে পাঁচ বছরের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় যৌথ উদ্যোগে একটি রূপকল্প তৈরি করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত পাটবীজ উৎপাদনে স্বনির্ভর হবে। আর ওই পাট মৌসুম থেকে রোডম্যাপ বাস্তবায়ন শুরু হবে। এদিকে কাঁচা পাটের বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী জানান, বেআইনীভাবে কাঁচা পাট মজুদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রয়োজনীয় কাঁচা পাট সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানির ধারা বেগবান করার লক্ষ্যে নিয়মবহির্ভূতভাবে কাঁচা পাট মজুদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করবে সরকার।