সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০১:০৬ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

অভ্যুত্থানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবাই মিলে চেষ্টা করবো: প্রধান উপদেষ্টা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

এফএনএস: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বতীর্ সরকারের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হয়েছে। এই পথচলায় বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্ব স¤প্রদায়ের সমর্থন আছে। গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের আত্মত্যাগ সার্থক করতে এবং তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করবো। গতকাল শনিবার বিকালে রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আজ আলোচনাটা একাডেমিক না, বাস্তব আলোচনা। কোনটা কাজে লাগাতে পারবো, কোনটা পারবো না সেই বিষয়ে আলোচনা। আমরা কোনোভাবেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে বিতর্কিত হতে দেবো না। জুলাইয়ের যোদ্ধারা ত্যাগ শিকার না করলে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকলেও জবাব খেঁাজার আমাদের কোনও সুযোগ থাকতো না। প্রশ্ন আমাদের মনে যতটুকু ছিল, বহু বছর ধরে ছিল, সুযোগ পাইনি। অসংখ্য ছাত্র—জনতার আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা সেই সুযোগ পেয়েছি। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজ আমরা প্রতিজ্ঞা করি, আমরা যেন গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের আত্মত্যাগের প্রতি অসম্মান না জানাই। যে কারণে তারা আত্মত্যাগ করেছিল, সেটা যেন পরবর্তী সব প্রজন্ম মনে রাখে। তাদের আত্মত্যাগ সার্থক করতে, তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা সবাই মিলে সবরকম চেষ্টা করবো। অন্তর্বতীর্ সরকারের প্রথম অধ্যায় শেষ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তর্বতীর্ সরকারের ছয় মাস পার হয়ে গেলো, প্রথম অধ্যায় শেষ। আজকের এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্বে প্রবেশ করলাম। প্রথম পর্ব ছিল প্রস্তুতি পর্ব। সে প্রস্তুতি পর্বের অনেক কিছু আপনাদের জানা। তার মধ্যে একটা বড় বিষয় ছিল প্রস্তুতি, যে স্বপ্নের পেছনে ছাত্র—জনতা আত্মত্যাগ করেছে, সেটা সার্থক করতে আমরা যেন এমন একটা দেশ গড়তে পারি যেটা সুশৃঙ্খলভাবে চলবে। যে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকার সুযোগ পেয়েছিল, সেই কাঠামো থেকে যেন আমরা বেরিয়ে আসতে পারি। আমরা আমাদের দেশকে তামাশায় পরিণত করে ফেলেছি মন্তব্য করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা ছোটখাটো একটা হাডুডু খেলার জন্য আইন বানাই। ফুটবল খেলা তো বটেই, এটা আন্তর্জাতিক খেলা। সে আইন আমরা মেনে চলি, মেনে চলি বলেই খেলাটা খেলা হয়, তামাশা হয় না। আইনগুলো এমনভাবে বানানো হয়েছে, সবাই যেন উপভোগ করে। কিন্তু আমরা আমাদের দেশকে তামাশায় পরিণত করে ফেলেছি। আইন বলে কিছু নেই, নিয়ম বলে কিছু নেই। যারা আত্মত্যাগ করেছে, তারা আমাদের নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছে, আমরা যেন সেসব আইনকানুন পাল্টে ফেলে নতুন বাংলাদেশের জন্য প্রস্তুত হই। জাতিসংঘের প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, একটি প্রতিবেদন সারা পৃথিবী বদলে গিয়েছে। আর কত সমর্থন চাই আমরা। একেবারে অক্ষরে অক্ষরে বলে দিয়েছে কোথায় কীভাবে মেরেছে, এর থেকে বের হওয়ার তো কারও উপায় নাই। বাংলাদেশকে ঘিরে যে অপপ্রচার চলছিল, এই এক প্রতিবেদন সমস্ত সমাপ্ত। বলতে পারবে, কিন্তু কোনো আওয়াজ বের হবে না। আরও অন্যান্য যেসব প্রতিষ্ঠান প্রতিবেদন তৈরি করেছে তাদের (আওয়ামী লীগের) প্রতিবেদনে অত্যন্ত জোরালোভাবে তাদের অপরাধের কথা উঠে এসেছে। আয়নাঘরের নির্মমতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সেদিন আয়নাঘরে গেলাম, মানুষ কত নির্মম হতে পারে, বীভৎস দৃশ্যের সৃষ্টি করতে পারে, নৃশংস হতে পারে, এর চেয়ে বড় নমুনা বোধ হয় পাওয়া যাবে না। আমাদের শুধু দেখতে কষ্ট লেগেছে, যারা বছরের পর বছর সেখানে থেকেছে তাদের প্রতিটি বর্ণনা, অভিজ্ঞতা গুম তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পরে দেশের ভেতরে ও আন্তর্জাতিকভাবে মানুষ প্রথম বুঝতে পারলো আমরা কিসের কথা বলছি, আমরা কোথা থেকে এসেছি। অন্তর্বতীর্ সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থনের কারণে বিরোধী পক্ষ সুবিধা করতে পারছে না জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, একই সঙ্গে আপনাদের সমর্থন, আন্তর্জাতিক বিশ্বের সমর্থন, সারা পৃথিবী জুড়ে আমাদের একটা বড় রকম সমর্থন গড়ে উঠেছে। যে কারণে অপর পক্ষ সুবিধা করতে পারছে না। পদে পদে ব্যাহত হচ্ছে যেখানে যায়। বহু গল্প করছে, গল্প টেকাতে পারছে না। শেষমেশ তো ট্রাম্পকে নিয়ে গল্প, সে অপপ্রচার চালাতে গিয়ে চালাতে পারলো না। আন্তর্জাতিক সমর্থনের বা দেশিয় সমর্থনের কথা বলতে গেলে মনটা বড় হয়ে যায়। এত আন্তর্জাতিক সমর্থন ও অভ্যন্তরীণ সমর্থনের পরও নতুন বাংলাদেশ গড়তে না পারা হবে কর্মের দো বলেও মন্তব্য করেন ইউনূস। তিনি বলেন, আমরা এ সুযোগ ছাড়তে চাই না। যত ছোট—বড়—মাঝারি—ধনী রাষ্ট্র সবাই মিলে সমর্থন দিয়েছে। কেউ কোনো রকম দ্বিধা নাই। তাদের ভাষা শুনলে আমি অবাক হই। আমরা যখন বসি, বিস্তারিত জানার আগে বলে আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। এ পর্যন্ত তারা সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে এবং ক্রমাগতভাবে তাদের সমর্থন বাড়ছে। সবার মধ্যে ঐক্য ধরে রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমাদের মধ্যে অনেক তর্ক—বিতর্ক করার, দূরত্ব সৃষ্টি করার মতো প্রবণতা আছে। কিন্তু এই একটি জায়গায় এক ছিলাম, এখনো এক আছি। আগামীতেও আমরা এক থাকবো। সে বিশ্বাস আমার আছে। বিরোধী শক্তির বিষয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, হাঙ্গামা হবে, কারণ যাদেরকে বাংলাদেশের মানুষ তাড়িয়ে দিয়েছে, অস্বীকার করেছে, ত্যাগ করেছে, তারা ফিরে আসার জন্য অত্যন্ত ব্যাকুল। প্রতিটি দিন তাদের জন্য মূল্যবান, দেরি হলে তাদের জন্য অসুবিধা। সেই জন্য আমাদের সবাইকে শক্ত থাকতে হবে, মজবুত থাকতে হবে, আমরা যেগুলো আলাপ করছি সেগুলোয় মতভেদ থাকবে, কিন্তু এর অর্থ এই নয় আমরা একত্র নই। আমরা একত্র থাকবো। অন্তর্বতীর্ সরকার দ্বিতীয় অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে মন্তব্য করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, অন্তর্বতীর্ সরকারের ছয় মাসে প্রথম ইনিংস বা প্রথম অধ্যায় শেষ হয়েছে। আজ রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হলো। যেভাবে আমরা প্রথম অধ্যায় শেষ করলাম, দ্বিতীয় অধ্যায়ে আমরা যদি সেটা ঠিক রাখতে পারি, তৃতীয় অধ্যায়ের জন্য আমাদের কোনো চিন্তা নাই। প্রথম অধ্যায়ে যে সমস্ত শক্তি আমাদের ব্যাহত করার চেষ্টা করেছে, আমাদের ভণ্ডুল করার চেষ্টা করেছে, তাদেরকেও সুন্দরভাবে, সবাই মিলে মোকাবিলা করতে পেরেছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com