দৃষ্টিপাত রিপোর্ট \ সকালের আকাশ ছিল রৌদ্রময়, সূর্যের আলোর সামান্যতম ঘাটতি ছিল না। দৈনন্দিন কাজের তালিকায় যে যার মত নিজেকে ব্যস্ত করতে চাইছেন, সকাল সাড়ে নয়টার পর হঠাৎ আকাশ কালো অন্ধকার মুহুর্তের মধ্যে ঝড়ো হাওয়া, বৃষ্টিপাত। এর রিপোর্ট লেখার সময় রাত দশটা সাতক্ষীরা শহর সহ জেলার সর্বত্র বৃষ্টিপাত হচ্ছিল সেই সাথে বইছিল হাওয়া, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে শুরু হওয়া বৃষ্টি ছিল বিরামহীন, কখনও থেমে থেমে আবার কখনও বিরামহীন অস্থিরতা। যে যার কাজে বের হলে বৃষ্টির কারনে অনেকে মাঝ পথে আটকে যায়, বাজার ব্যবস্থায় ছন্দপতন ঘটে। সড়ক গুলো অনেকটা ফাঁকা হয়ে পড়ে। শুক্রবার সাম্পাহিক বন্ধের দিন থাকায় বাজারে বেশ চাপ ছিল, বিপুল সংখ্যক ক্রেতা বিক্রেতাকে অসময়ের প্রস্তুতিহীন বৃষ্টিকে মোকাবিলা করতে বেক পেতে হয়। বৃষ্টির সাথে সাথে পাল্টা দিয়ে শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে জনসাধারনের জন্য তা ছিল বাড়তি অস্বস্তির। গত দুই দিন শীতের প্রকোপ না থাকায় গতকাল সকালে ঘরের বাইরে বের হওয়া মানুষগুলো শীতের কাপড় নেইনি যে কারনে দুর্ভোগের সীমা ছিল না। দিন ব্যাপী বৃষ্টির কারনে চাষাবাদে বিরুপ প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে বীজতলায় পানি জমায় বীজের ক্ষতি হবে এমন আশঙ্কা চাষীদের। রোপন করা ধান খেতে এবং পাতার খেতে পানি জমায় ধান চাষে ও উৎপাদনে ক্ষতির সম্ভাবনার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। চিংড়ী ঘের গুলোতে চলছে ছেচা মারার মৌসুম এই সময়ে মাছ ধরার সময়, কিন্তু অসময়ের বৃষ্টিপাতে চিংড়ীঘের গুলোর ছেচা মারা বন্ধ হয়ে পড়ায় গতকাল অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে চিংড়ী চাষী, ঘের ব্যবসায়ী সহ মৎস্য চাষীরা। সাতক্ষীরার বাস্তবতায় বর্তমান মৌসুমে খেজুরের রস উৎপাদন অনেকাংশে হ্যাস পেয়েছে। গতকালের দিনব্যাপী বৃষ্টিপাতের কারনে গাছীরা খেজুর গাছের রস সংগ্রহের জন্য গাছ কাটতে পারেনি। সর্বাপেক্ষা ক্ষতির মুখে নিম্ন আয়ের মানুষ গুলো বিশেষ করে দৈনিক শ্রমিক ভিত্তিতে কায়িক পরিশ্রমী, ভ্যান, রিকসা চালক, ফুটপথের হকার, ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীরা, বৃষ্টির সাথে যুদ্ধে তারা পরাজিত হয়ে ঘরে বন্দী হয়ে পড়ে, এমন একজন ভুক্তভোগী এবং উপার্জন হতে বঞ্চিত দেবহাটার পারুলিয়ার ভ্যান চালক সাগের আলী হতাশার সুরে জানান সারা দিনটা ঘরে বসে কাটালাম, বৃষ্টি থামবে থামবে মনে করছি আর বের হতে চাইছি, কিন্তু বৃষ্টি থামেনি, ঘর হতে বের হতে পারিনি, দিন চলবে ঋন দেনায়। বৃষ্টি আর ঝড়ো হাওয়ার এমনও হাজারো সাগের আলীর জন্য ছিল গতকাল অভিশাপ। চিরচেনা সাতক্ষীরা শহরের কর্মব্যস্ততা থমকে যায় বৃষ্টির কল্যানে, দুপুর বারটার পর হতে দৃশ্যতঃ সাতক্ষীরা শহর ফাঁকা হয়ে পড়ে। হাসপাতাল ও ক্লিনিক গুলোতে কিছু সংখ্যক লোকসমাগম লক্ষ্য করা গেলেও পুরো শহর ছিল ফাঁকা। আগামী বছরের জন্য প্রস্তুত করা চিংড়ী ঘের, চাষীরা জমিতে পানি ভরে যাওয়ায় চাষীদের কে পুনরায় চাষের জন্য সময় ও অর্থ খরচ হবে। বৃষ্টির ঝড়ো হাওয়া ছিল দিনের চিত্র, রাতে বৃষ্টির পাশাপাশি মেঘের মুহুর মুহুর গর্জন, বজ্রপাতের শব্দে রাতের নিরবতার পরিবর্তে আতঙ্ক ছড়াচ্ছিলো।