এফএনএস এক্সক্লুসিভ: অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে সরকারের নানান উদ্যোগের পরও নিয়ন্ত্রণে আসছে না আলুর বাজার। আলুর দাম বেড়ে এখন আকাশচুম্বী। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বাজারে ৭০ টাকার নিচে আলু মিলছে না। এমনকি অর্ধেক দামে আমদানি করা আলুও দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। মূলত অসাধু আলু ব্যবসায়ীরা সারা দেশের মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে। তাদের কারণে আলুর দাম কমছে না। এক্ষেত্রে কোল্ড স্টোরেজ ব্যবসায়ীরা অনেকখানি দায়ী। আলু প্রতি কেজিতে লাভসহ দাম নির্ধারণ করে দিলেও তারা তা মানছে না। ব্যবসায়ীরা আলু পচিয়ে নদীতে ফেলে দেয়। তারপরও বাজারে কম দামে বিক্রি করছে না। তারা মনে করছে ৭০ টাকা আলু বিক্রি করলে দ্বিগুণ লাভ থাকে। সুতরাং কিছু আলু নষ্ট হলেও তাদের লোকসান নাই। মুন্সীগঞ্জে লাখ লাখ বস্তা আলু থাকলেও তারা বিক্রি করছে না। এভাবে সরকারকে ব্ল্যাকমেল করছে। বাজার এবং কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ ১৩ টাকা ৯০ পয়সা। উৎপাদক পর্যায়ে এক কেজি আলু ১৯ টাকা ৪৮ পয়সা বিক্রি হওয়ার কথা। আর পাইকারিতে এক কেজি আলু বিক্রি হওয়ার কথা ২৩ টাকা ৩০ পয়সা। সব ধরনের খরচ মিলে এক কেজি আলুর সর্বোচ্চ দাম হতে পারে ৪৬ টাকা। বাজারের দাম বাড়িয়ে কেজিপ্রতি বাকি ২৪ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। সরকারি তথ্যমতে বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকায়। গত সপ্তাহে ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। গত বছর এ সময়ে আলুর দাম ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। ভোক্তা পর্যায়ে আলুর যৌক্তিক দাম ৪৬ টাকা। কিন্তু বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা। শুল্ক কমানোর আগে আলু বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এক মাস আগেও আলু বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আর গত বছরের এ সময় আলুর দাম ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় আলুর দাম বেড়েছে ৪০ দশমিক ৮২ শতাংশ। স¤প্রতি এক প্রজ্ঞাপনে এনবিআর আলু আমদানিতে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। একই সঙ্গে আলু আমদানিতে ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়ছে। আলু আমদানিতে এ শুল্ক সুবিধা বহাল থাকবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। এসব সুবিধা নিয়ে টনে টনে আমদানি করা আলু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। অর্থাৎ আমদানিতে সুফলও পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। অসাধু ব্যবসায়ীরা কম দামে আমদানি করে বাজারে প্রচলিত দামে বিক্রি করছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে হিমাগারে থাকা আলুর সরবরাহ শেষের দিকে। পাইকারি বিক্রেতারা চাহিদা অনুসারে আলুর সরবরাহ পাচ্ছে না। আর এ বছর অক্টোবর মাসে অতিবৃষ্টির কারণে আলুর বীজ রোপণে দেরি করেছে কৃষকেরা। ফলে বাজারে আগাম আলু আসতে দেরি হচ্ছে। এসব কারণে আলুর দাম বাড়ছে। সূত্র জানায়, অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে আলুর বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। কম দামে আমদানি করা আলুও বাজারে ৭০ টাকার নিচে মিলছে না। হাজার হাজার টন আলু আমদানি করে বাজারে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে প্রতারিত হচ্ছে সরকার এবং ভোক্তা উভয়ই। ব্যবসায়ীদের দাবি, বর্তমানে শেষের দিকে হিমাগারে থাকা আলুর সরবরাহ। পাইকারি বিক্রেতারা চাহিদা অনুসারে আলুর সরবরাহ পাচ্ছে না। বরং হিমাগার পর্যায়ে আলুর দাম বেড়ে ৬২ টাকায় উঠেছে। এমন দাম আগে কখনো দেখা যায়নি। মূলত আলুর বাড়তি চাহিদার কারণে মজুতদারেরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। সূত্র আরো জানায়, সাধারণ তাপমাত্রায় আলু বেশি দিন ভালো থাকে না। এ জন্য পণ্যটি দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য হিমাগারে রাখা হয়। সাধারণত নভেম্বরের শুরুতে নতুন আলু আসা শুরু করে। ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে সরবরাহ পুরো স্বাভাবিক হয়ে যায়। এরপর ফেব্রুয়ারি—মার্চ মাস নাগাদ হিমাগারে আলু সংরক্ষণ শেষ হয়। কয়েক মাস বিক্রির পরে বছরের এ সময় এমনিতেই হিমাগারে থাকা আলুর সরবরাহ কমে আসে। এতে দাম কিছুটা বাড়ে। তবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এখন আলুর দাম অনেকটা বেশি। এদিকে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের হিসাবে, গত বছর এই সময়ে খুচরা বাজারে আলুর কেজি ছিল ৪৫—৫০ টাকা, যা এখন ৬৫—৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে হিসাবে এক বছরে দাম বেড়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ। গত বছরও আলুর দাম বেড়ে ৮০ টাকা হয়েছিল, তবে সেটা ডিসেম্বরের শেষ দিকে। অর্থাৎ এ বছর বেশ আগেই আলুর দাম বাড়ল। অন্যদিকে আলু উৎপাদনের সরকারি—বেসরকারি তথ্যে গরমিল রয়েছে। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশে বছরে আলুর চাহিদা ৯০ লাখ টন। চলতি বছর আলু উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৩ লাখ টন। তবে হিমাগারমালিকদের দাবি ভিন্ন। তাঁরা বলছেন, এ বছর আলু উৎপাদন হয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টন। সে হিসাবে চাহিদার তুলনায় ১০—১৫ লাখ টন আলুর ঘাটতি রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী জানান, গত জুন মাসে হিমাগার থেকে প্রতি কেজি আলু ৪২—৪৫ টাকায় পাইকারি বিক্রি হয়েছিল। সেই দাম এখন বেড়ে ৬২ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। হিমাগার পর্যায়ে এমন দাম আগে কখনো দেখা যায়নি। আলুর বাড়তি চাহিদার কারণে মজুতদারেরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। হিমাগার থেকে আলুর কেজিতে বাড়তি যে লাভ রাখা হচ্ছে, তার পুরোটাই মজুতদারেরা নিচ্ছেন। গত বছর এমন সময়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের তদারকির কারণে মজুতদারেরা এমন সুযোগ পাননি। কিন্তু এ বছর সে ধরনের অভিযান দেখা যায়নি।