রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫৭ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে আবারও ফাইনালে ভারত

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বুধবার, ৫ মার্চ, ২০২৫

স্পোর্টস ডেস্ক \ ক্যাচ ছাড়ার মহড়ায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম সেমি—ফাইনালে লড়াই সেভাবে জমাতেই পারল না বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে আবারও ফাইনালে ভারত। ভিরাট কোহলিকে কেন ওয়ানডের ‘রাজা’ বলা হয়, তা আরেকবার দেখালেন ভারতীয় তারকা। রান তাড়ায় খেললেন চমৎকার ইনিংস। টুর্নামেন্টে আরও একবার ফিনিশারের ভূমিকা পালন করলেন লোকেশ রাহুল। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে উঠল ভারত। প্রথম সেমি—ফাইনালে ক্যাচ ছাড়ার মহড়ায় লড়াই সেভাবে জমাতেই পারল না অস্ট্রেলিয়া। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা ৪ উইকেটে হেরে বিদায় নিল টুর্নামেন্ট থেকে। দুবাইয়ে মঙ্গলবার ভারতের জয়ের ভিত গড়ে দেন বোলাররা। ৩৬ ওভার শেষে ৪ উইকেটে ১৯৫ রানের শক্ত অবস্থানে থেকেও অস্ট্রেলিয়া ২৬৪ রানে গুটিয়ে যায় তিন বল বাকি থাকতে। সেই রান ভারত পেরিয়ে যায় ১১ বল হাতে রেখেই। ওয়ানডে ও টি—টোয়েন্টি মিলিয়ে টানা তিনটি আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালে জায়গা করে নিল ভারত। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে আহমেদাবাদে গ্যালারি ভরা দর্শকের সামনে তারা হেরেছিল অস্ট্রেলিয়ার কাছে। তারপর এই সংস্করণে দুই দলের প্রথম দেখায় অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে পুরোনো ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ দিতে পারল ভারত। রোহিত শার্মার নেতৃত্বে ২০২৪ টি—টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর আরেকটি আইসিসি ট্রফি জয়ের দুয়ারে পৌঁছে গেল তারা। দুবাইয়েই আগামী রোববার শিরোপা লড়াইয়ে তারা খেলবে নিউ জিল্যান্ড অথবা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ভারতের সফলতম বোলার মোহাম্মদ শামি। আইসিসি টুর্নামেন্টে আরেকবার নিজের কার্যকারিতা মেলে ধরে ৪৮ রানে ৩ উইকেট শিকার করেন অভিজ্ঞ পেসার। শুরুতে ব্রেক থ্রু এনে দেওয়ার পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ স্কোরার স্টিভেন স্মিথের (৭৩) গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নেন তিনি। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে দুটি করে শিকার ধরেন দুই স্পিনার ভারুন চক্রবর্তি ও রাভিন্দ্রা জাদেজা। তাদের সবাইকে ছাপিয়ে ম্যাচের সেরা অবশ্য কোহলি। টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত সেঞ্চুরিতে দলকে জেতানো এই তারকা এবার ৯৮ বলে খেলেন ৮৪ রানের আরেকটি দারুণ ইনিংস। অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডিংয়ের দায়ও আছে এখানে। ৫১ রানে কোহলির ক্যাচ ফেলে তারা। এ ছাড়া শুরুতে রোহিত জীবন পান দুই দফায়। বিশাল ছক্কায় ম্যাচের ইতি টেনে ৩৪ বলে ৪২ রানে অপরাজিত থাকেন রাহুল। ভিন্ন উইকেটে খেলা হয় এ দিন। এই মাঠে টুর্নামেন্টের আগের ম্যাচগুলোর চেয়ে এবার ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভালো ছিল উইকেট। আগের ম্যাচের মতো যথারীতি চার স্পিনার নিয়ে নামে ভারত। দুই লেগ স্পিনারসহ তিন স্পিনার নিয়ে একাদশ সাজায় অস্ট্রেলিয়া। চোটে পড়া ম্যাথু শর্টের জায়গায় সুযোগ পেয়ে আসরে প্রথমবার খেলতে নেমে ভুলে যাওয়ার মতো ম্যাচ কাটান অস্ট্রেলিয়ার স্পিনিং অলরাউন্ডার কুপার কনোলি। ব্যাট হাতে ওপেনিংয়ে ৯ বলে শূন্য রানে আউট হওয়ার পর ফিল্ডিংয়ে দ্বিতীয় ওভারে পয়েন্টে রোহিতের ক্যাচ ফেলেন তিনি। পরের ওভারে আবার বেঁচে যান রোহিত। এবার মিড—অফ থেকে বেশ খানিকটা দৌড়ে গিয়ে বল মুঠোয় জমাতে ব্যর্থ হন মার্নাস লাবুশেন। ১৩ ও ১৪ রানে জীবন পেয়ে ২৮ রানের বেশি অবশ্য করতে পারেননি রোহিত। বোলিংয়ে এসে নিজের প্রথম ওভারে ভারত অধিনায়ককে এলবিডব্লিউ করে প্রায়শ্চিত্ত করেন কনোলি। তার আগেই শুবমান গিলকে ফেরান বেন ডোয়ার্শিস। আট ওভারের মধ্যে ৪৩ রানে দুই ওপেনারকে হারালেও দলের ওপর চাপ জেঁকে বসতে দেননি কোহলি ও শ্রেয়াস আইয়ার। ম্যাচ পরিস্থিতি বুঝে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নেন দুজন। কোহলি ফিফটি পূর্ণ করেন ৫৩ বলে। পরের ওভারে কনোলির বলে শর্ট কাভারে কোহলির ক্যাচ ছাড়েন অস্ট্রেলিয়া দলের দুর্দান্ত ফিল্ডারদের একজন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। শ্রেয়াসকে (৬২ বলে ৪৫) ফিরিয়ে ৯১ রানের জুটি ভাঙেন লেগ স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পা। জীবন পেয়ে এগিয়ে যান কোহলি। আকসার প্যাটেলের সঙ্গে ৪৪ ও রাহুলের সঙ্গে ৪৭ রানের কার্যকর দুটি জুটিতে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন তিনি। আরেকটি সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে তার ৫টি চারের ইনিংস থামে জ্যাম্পার বলে লং অনে ক্যাচ দিয়ে। এই ইনিংসের পথে দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে রান তাড়ায় আট হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন কোহলি (৮ হাজার ৬৩)। প্রথমজন আরেক কিংবদন্তি সাচিন টেন্ডুলকার (৮ হাজার ৭২০)। আরেকটি জায়গায় তিনি ছাড়িয়ে যান পূর্বসূরিকে। আইসিসির ওয়ানডে টুর্নামেন্টে কোহলির পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস হলো ২৪টি, টেন্ডুলকারের আছে ২৩টি। কোহলির বিদায়ের সময় ভারতের দরকার ছিল ৪৪ বলে ৪০ রান। সেই ব্যবধান দ্রুত কমিয়ে আনেন হার্দিক পান্ডিয়া। লেগ স্পিনার তানভির স্যাঙ্ঘাকে ছক্কায় ওড়ানোর পর জ্যাম্পাকে টানা দুটি ছক্কা মারেন তিনি। জয় থেকে ৬ রান দূরে থাকতে শেষ হয় পান্ডিয়ার ২৪ বলে ২৮ রানের ক্যামিও ইনিংস। ছক্কায় ম্যাচ শেষ করে ফেরেন রাহুল। সংক্ষিপ্ত স্কোর: অস্ট্রেলিয়া: ৪৯.৩ ওভারে ২৬৪ (হেড ৩৯, কনোলি ০, স্মিথ ৭৩, লাবুশেন ২৯, ইংলিস ১১, কেয়ারি ৬১, ম্যাক্সওয়েল ৭, ডোয়ার্শিস ১৯, জ্যাম্পা ৭, এলিস ১০, স্যাঙ্ঘা ১*; শামি ১০—০—৪৮—৩, পান্ডিয়া ৫.৩—০—৪০—১, কুলদিপ ৮—০—৪৪—০, ভারুন ১০—০—৪৯—২, আকসার ৮—১—৪৩—১, জাদেজা ৮—১—৪০—২) ভারত: ৪৮.১ ওভারে ২৬৭/৬ (রোহিত ২৮, গিল ৮, কোহলি ৮৪, শ্রেয়াস ৪৫, আকসার ২৭, রাহুল ৪২*, পান্ডিয়া ২৮, জাদেজা ২*; ডোয়ার্শিস ৭—০—৩৯—১, এলিস ১০—০—৪৯—২, কনোলি ৮—০—৩৭—১, জ্যাম্পা ১০—০—৬০—২, স্যাঙ্ঘা ৬—০—৪১—০, ম্যাক্সওয়েল ৬.১—০—৩৫—০, হেড ১—০—৬—০) ফল: ভারত ৪ উইকেটে জয়ী, ম্যান অব দা ম্যাচ: ভিরাট কোহলি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com