শাহজাহান কয়রা থেকে \ আর মাত্র ক’দিন পরেই কোরবানির ঈদ। দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা। নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট পশুকে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পশু জবেহ করাকে কোরবানি বলে। আর এই আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কামার শিল্পীরা। টুংটাং শব্দই বলছে ঈদ লেগেছে কামার পাড়ায়। দিন রাত চলছে কামার শিল্পের নিখুত হাতুড়ির আঘাতে তৈরি চাপাতি, দা, বটি, ছুরি, চাকু, কুড়ালসহ ধারালো সব পশু কাটার যন্ত্রপাতি ও শানের কাজ। নাওয়া খাওয়া ভূলে নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের। কয়লার দগদগে আগুনে লোহাকে পুড়িয়ে পিটিয়ে তৈরি করছেন এসব ধারালো সামগ্রী। তবে এসব তৈরিতে এখনও আধুনিকতার ছোয়া লাগেনি। পুরানো সেকালের নিয়মেই চলছে আগুনে পুড়ে লোহা হতে ধারালো সামগ্রী তৈরির কাজ। কয়রার আমাদী বাজারের রফিকুল ইসলাম (৬৭)কর্মকার জানান, আমি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকে আমার বাবার সাথে ল্যাংটা বেলা থেকে কাজ করে কাজ শিখেছি। আমি প্রায় ৬০ বছর যাবৎ এ পেশায় জড়িত। আমার ১ ছেলে ও ২ মেয়ে, ছেলে শাহাবুদ্দীন সেও আমার কাছ থেকে কাজ শিখেছে, সে এখন কর্মকার। আমার ছেলের ছেলে (পোতা) সে ৪র্থ শ্রেনিতে পড়ে সেও আমার কাছে কাজ শিখেেতছে, সেও বড় হয়ে আমার পেশায় নিয়োজিত হবে। তিনি বলেন, আমরাও এ দিনের অপেক্ষায় থাকি যে কোরবানির ঈদ আসলে এক সপ্তাহ আমাদের বেচাকেনা বেশি হয়। এদিকে উপজেলার দীপক কর্মকার বলেন, সারা বছর বেচাকেনা কিছুটা কম থাকে। কোনরকম দিন যায়। এই সময়ের জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকি। কোরবানির ঈদের আগে এক থেকে দুই সপ্তাহ ভাল বেচাকেনা হয়। ওই সময় দামও ভালো পাওয়া যায়। লোহার ভাল জবেহ ছুরি ৮০০ থেকে ১১০০ টাকা, বিভিন্ন সাইজের চাপাতি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, ছুরি ১০০ থেকে ২০০ টাকা, দা, ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা এবং কুড়াল কেজিতে বিক্রি করি কেজি প্রতি ৮০০ টাকায়। অন্যদিকে ফকির কর্মকার জানান, এক সময় তাদের বেশ কদরও ছিল, বর্তমানে তা আর নেই। তাই সারা বছর তেমন কোন কাজ থাকে না। তবে ধান কাটার মৌসুমে ও কোরবানির উপলক্ষে তাদের কাজ বেড়ে যায়। এসময় তাদের দৈনিক ১০০০-১৫০০ টাকা পর্যন্ত আয় হলেও ব্যয় বাদে তাদের হাতে থাকে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। তারা আরও বলেন, বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতেই মূলত কিছু কামার এখনও এ পেশায় জড়িয়ে আছেন। এছাড়া পরিশ্রমের তুলনায় এ পেশায় সাধারণত আয় ও সম্মান উভয়ই কম। তাই অনেকেই এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। তারা এ পেশার ভবিষ্যৎ নিয়েও এখন চিন্তিত, কারন এ কাজের সময় আওয়াজ হয় বলে তেমন কেউ তাদের দোকান ঘর ভাড়া দিতে চায় না। আগামীতে এ পেশা টিকিয়ে রাখা খুব কষ্ট হয়ে পড়বে বলেও তারা মত প্রকাশ করবেন। কর্মকার ওসমান বলেন, এই এক মাসের কাজের উপর তাদের পরিবারের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া জামা কাপড়সহ বছরের খোরাকি নির্ভর করে । যদিও কামার শিল্পের আনুসাঙ্গিক কয়লা ও লোহার দাম লাগামহীন ভাবে উঠানামা করতে থাকে। তাই কামাররা বাপ-দাদার এ পেশাকে ধরে রাখতে কয়লা ও লোহার দাম নিয়ন্ত্রন ও সহজ শর্তে ঋণের দাবি জানিয়েছেন। কয়েকজন ক্রেতা জানান, কোরবানির ঈদের আর ক’দিন বাকি তাই আগেই পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম কেনার কাজটি সেরে ফেলেছেন। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবার ছুরি , চাকু, চাপাতির দাম একটু বেশি বলে জানান তিনি। লোহার পাশপাশি স্টিলের চুরি চাকুও বিক্রি হয়। ক্রেতা রবিউল ও গণি বিশ^াস বলেন, কামাররা দেশীয় প্রযুক্তিতে লোহা গরম করে পিটিয়ে দা, ছুরি তৈরি করেন । এখানে নিজেদের সুবিধামত ওইসব জিনিস তৈরি করা যায়। সেগুলো খুব টেকসই হয়।