দৃষ্টিপাত রিপোর্ট \ বিনোদন প্রিয় বাঙ্গালীর অন্যতম মাধ্যম সংস্কৃতি। আর এই সংস্কৃতির অন্যতম পুরোধা বাংলা চলচ্চিত্র তথা বাংলা সিনেমা জীবন ঘনিষ্ঠ, মর্মস্পর্শী, হৃদয় বিদারক এক কথায় জীবন থেকে নেওয়া বাংলা সিনেমার দীর্ঘ দিনের ইতিহাস ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে আকাশ সংস্কৃতি, প্রযুক্তি নির্ভর কাহিনী এবং বিদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসনে। তবে খুশির খবর এবারের ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা সিনেমা গুলো দেখতে হল মুখি হচ্ছে দর্শকরা। সাতক্ষীরার বাস্তবতায় সিনেমা হলগুলোতে দর্শকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জীবনের সাথে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত বিনোদন, বাংলা চলচ্চিত্রের বাহিনী, সংলাপ, চিত্রনাট্য, সবই গ্রামীন, প্রান্তীক পর্যায়ের বিধায় দর্শকের চাহিদা মেটানোর সব ধরনের উপক্রম বিদ্যমান। কিন্তু নব্বই দশকের শুরুতে বিদেশী ছবির আমদানী, আগ্রাসনের পাশাপাশি বাংলা সিনেমায় অশ্লীলতা প্রকাশ পেতে শুরু করলে পরিবারের সকল সদস্য মিলে ছবি দেখার পরিবেশ নির্বাসনে যেতে থাকে। পাশাপাশি আর্থিক দুরবস্থা ও কিছুটা দায়ী। সাতক্ষীরার বিনোদন প্রেমী জনগোষ্ঠী আশি এবং নব্বুই দশকে ব্যাপক ভিত্তিক সিনেমা হল মুখি হতো এবং সামাজিক, সাধারন মানুষের জীবন নির্ভর ছবি উপভোগ করতো, সাতক্ষীরা কালিগঞ্জ সড়কের যানবাহন গুলোতে চেপে দর্শকরা হলমুখি হতো, যে কারনে শহরের সঙ্গীতা, লাবনী এবং হাল আমলে রক্সি মোড় হিসেবে পরিচিতি পায়। উলেখিত হল তিনটিতে গাড়ী রাখলে যাত্রীরা নামতে রিতিমত প্রতিযোগিতা করতো, হল গুলোর ছবির টিকিট সংগ্রহে ছিল যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব, লাইনে দাঁড়িয়ে আবার শক্তির জোরে ঠেলে ঠুলে টিকিট সংগ্রহের দৃশ্য ছিল প্রতিনিয়ত। সৌখিন ছবি প্রেমীরা অতিরিক্ত মূল্যে কালো বাজারী টিকিট ক্রয় করতো। তাইতো সেদিনের ঘটনা প্রবাহ, কিন্তু সময়ের ব্যবধানে হলগুলো দিনে দিনে দর্শক শুন্য হতে চলেছে সা¤প্রতিক বছর গুলোতে উপজেলা ভিত্তিক সিনেমা হলগুলো কোন কোনটি বন্ধ হয়েছে। কাহিনী নির্ভর ছবি নির্মিত এবং প্রদর্শিত হলে দর্শকদের আনাগোনা বৃদ্ধি পাবে, আকাশ সংস্কৃতি, ভিনদেশী চ্যানেল সিনেমা আর সংস্কৃতিকে মোকাবিলা করতে সাধারন মানুষের প্রত্যাশানুযায়ী ছবি নির্মানের বিকল্প নেই। শিক্ষামূলক, মানবিক, দেশ প্রেমিক নৈতিকতা নির্ভর ছবি দেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে রক্ষা করতে পারে। ছবির কাহিনী দর্শককে হল মুখি করবে, বাংলা চলচ্চিত্রের কালজয়ী, মর্মস্পর্শী, জীবন থেকে নেওয়া, ভাত দে, ছুটির ঘন্টা, মেঘে ঢাকা তারা, পদ্মা নদীর মাঝি, মাটির ময়না, ওরা এগারজন, সিরাজউদ্দৌলা, চোখের জলে, আধার আলো এদেশ তোমার আমার, মুখ ও মুখোশ, আবার তোরা মানুষ হ, আকাশ আর মাটি, শুনতে কি পাও, অশিক্ষিত, মাটির ঘর, সত্যের মৃত্যু নেই, শ্রাবন মেঘের দিন, সীমানা পেরিয়ে, আলোর মিছিল, মুক্তির গান, আগুনের পরশমনি, এসকল ছবি বাস্তবতার কথাবলে, জীবনের কথা বলে, আজও দর্শক হৃদয়ে বিশেষ স্থান করে রেখেছে। সেই দিনের অভিনেতা নায়ক রাজ রাজ্জাক, আনোয়ার হোসেন, প্রবীর মিত্র, শওকত আকবর, এটিএম শামসুজ্জামান, জাফর ইকবাল, জসিম, মিসা সওদাগর, খলিল, শাবানা, ববিতা, শাবনাজ, সুচারিতা, টেলিসামাদ, রবিউল, আফজাল হোসেন, অমল বোস, আজিম, কবরি, খালেদা আক্তার, গোলাম মোস্তফা, দিলদার, ফারুক, ফাতেহা লোহনী, বুলবুল আহমেদ, সালমান শাহদের অভিনয় শিল্পিদের আজ বড্ড প্রয়োজন। সিনেমা কেবল বিনোদন নয়, শিক্ষানীয় ক্ষেত্র ও বটে, দেশের অপারসম্ভাবনাময় চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে, নতু বা দেশ তার নিজস্ব সংস্কৃতি হতে বঞ্চিত হবে। বর্তমান প্রজন্ম এবং আগামী প্রজন্ম বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সঙ্গীত, হতে বঞ্চিত হবে বিদেশী সংস্কৃতির প্রভাবে অশ্লীলতা, ছিনতাই, বোমাবাজি, সংঘাত, হত্যা, চুরি, বিপর্যস্থ সমাজ ব্যবস্থা হাতছানি দিতে উদ্যত হবে। বর্তমান প্রজন্মকে দেশী সংস্কৃতির প্রতি আগহ্রী করে তুলতে হবে। সখের খবর সরকারি সহযোগিতা চলচ্চিত্র নির্মিত হওয়ায় নির্মাতাদের জন্য বিশেষ সুবিধা হচ্ছে। সুস্থ বিনোদন ধর্মী চলচ্চিত্র যে দর্শক গ্রহণ করে তা বর্তমান সময়ে আবারও প্রমানীত হচ্ছে।