সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৪১ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
শুল্কমুক্ত সুবিধায় হাজার হাজার টন চাল আমদানিতেও বাজারে প্রভাব পড়েনি বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ শীতজনিত রোগীর চাপ রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি হাসপাতালে বাড়ছে সাতক্ষীরা পৌর—মেয়রের বরখাস্তের আদেশ অবৈধ: হাইকোর্ট স্কুল থেকে ফেরার পথে ট্রেনে কাটা পড়ে শিশুর মৃত্যু সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জে দুই পক্ষের সংঘর্ষে বিএনপি নেতা নিহত মোবাইল—ইন্টারনেটে কর প্রত্যাহার না হলে এনবিআর ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি ভারত থেকে এলো ২৭ হাজার মেট্রিক টন চাল টিউলিপের উচিত ক্ষমা চাওয়া: ইউনূস বিজিবি—জনগণ ‘শক্ত অবস্থান’ নেওয়ায় ভারত পিছু হটেছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আখেরি মোনাজাতে শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব \ ভোগান্তিতে ঘরমুখো মুসলি­রা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২৩

এফএনএস: আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে মোনাজাত শুরু হয়। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা মুহাম্মদ জুবায়ের আহমেদ। দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি-সমৃদ্ধি কামনা করে সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে মোনাজাত শেষ হয়। এর আগে গতকাল ফজর নামাজের পর থেকে বয়ান শুরু হয়। বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আবদুর রহমান। হেদায়েতি বয়ানের শেষে শুরু করা হয় আখেরি মোনাজাত। মোনাজাত পরিচালনা করেন কাকরাইলের শুরা সদস্য ক্বারী মোহাম্মদ জুবায়ের। মোনাজাতে মুসলিম বিশ্বের কল্যাণ ও শান্তি চেয়ে লাখো মুসলি­ আল­াহর কাছে প্রার্থনা করেন। বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মাহফুজ জানান, আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে গত শনিবার রাত থেকেই ইজতেমাস্থল টঙ্গীর তুরাগ নদের তীর অভিমুখে মানুষের ঢল নামে। সকাল ৯টার দিকে ইজতেমা ময়দানের আশপাশের এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। শীত-ধুলো-বালি উপেক্ষা করে ৫-৬ কিলোমিটার দূরে বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, কার, ট্যাক্সি ও অন্যান্য যানবাহন রেখে হেঁটেই মুসুলি­রা ছুটে যান ময়দানের দিকে। মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে বিমান বন্দর থেকে বোর্ডবাজার-গাজীপুরা-টঙ্গী-আশুলিয়াসহ বিভিন্ন সড়ক মুসুলি­তে একাকার হয়ে যায়। যে দিকেই চোখ যায় শুধু পাঞ্জাবি-টুপি পরা মানুষ আর মানুষ। ইজতেমা মাঠ বিস্তৃত হয়ে পড়ে গোটা মহাসড়ক, অলিগলি থেকে শুরু করে বাড়ি-ঘরের ছাঁদ সর্বত্রই ছিল মুসলি­। মোনাজাতে অংশ নিতে অনেকে ইজতেমার মূল ময়দানে ঢুকতে না পেরে পত্রিকা, পাটি, চট, জায়নামাজ, পলিথিন বিছিয়ে রাস্তায় বসে পড়েন মুসলি­রা। অনেকেই আবার মোবাইল ফোনে দূর-দূরান্ত থেকে মোনাজাতে শরিক হন। মূল ইজতেমা ময়দানে তাদের বসার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তারা ময়দানের বাইরে খালি জায়গায়, কলকারখানা ও বসতবাড়ির ছাদসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে দেখা গেছে। টঙ্গী শহীদ আহসান উল­াহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে অবস্থান নেন শতাধিক নারী। কারোনা মহামারির সময় পেরিয়ে একত্রে আবারও সমবেত হতে পারায় মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন বারবার। তাদের মধ্যে নেই ভেদাভেদ ও বৈষম্য। সরেজমিন দেখা গেছে, ভোর ৪টা থেকে মুসলি­রা আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে ইজতেমা ময়দানের দিকে ছুটে যাচ্ছেন। অনেক মুসলি­ পায়ে হেঁটে ইজতেমা ময়দানে গিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করেছেন। আখেরি মোনাজাতে নিরাপত্তার বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার মোল­্যা নজরুল ইসলাম বলেন, সাদা পোশাকে মুসলি­দের বেশে পুলিশ মোতায়েনসহ ১০ হাজার পুলিশ ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় রয়েছে। তারা আখেরি মোনাজাতের পর মুসলি­দের বাড়ি ফেরা পর্যন্ত থাকবে। খুব দ্রুত ও নিরাপদে মুসলি­রা যেন ময়দান ত্যাগ করতে পারে সে জন্য বাস, ট্রেনসহ সব ধরনের যানবাহনের ব্যবস্থা রয়েছে। উলে­খ্য, বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২০, ২১ ও ২২ জানুয়ারি। মাওলানা সাদ কান্ধালভীর অনুসারীরা দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেবেন। ১২০ টাকার ভাড়া ২৫০, ভোগান্তিতে ঘরমুখো মুসলি­রা : আখেরি মোনাজাতের পর গণপরিবহন সঙ্কটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ইজতেমাফেরত ঘরমুখো মুসলি­রা। আর এই সুযোগে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাস না পেয়ে অনেকেই পিকআপ ভ্যান ও ট্রাকে রওনা দিচ্ছেন। বাধ্য হয়ে হেঁটেই বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছেন কেউ কেউ। আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে মোনাজাত শুরু হয়। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা মুহাম্মদ জুবায়ের আহমেদ। দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি-সমৃদ্ধি কামনা করে সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে মোনাজাত শেষ হয়। মোনাজাতের সময় সড়ক বন্ধ থাকায় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বাড়ি ফেরার জন্য মুসলি­দের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। অনেক মুসলি­ ট্রেন, নৌপথ ও সড়কপথে হেঁটে বাড়ির দিকে রওনা হয়েছেন। আব্দুল মান্নান নামে এক মুসলি­ বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার শেরপুরের নকলা থেকে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে আসি। তবে ইজতেমা ময়দানে জায়গা হয়নি। অনেক কষ্ট হলেও আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে পেরেছি। এ কারণে খুব ভালো লাগছে। এখন বাস না পেয়ে হেঁটেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি।’ ময়মনসিংহে যাওয়ার জন্য গাজীপুরের মালেকের বাড়ি থেকে আলম এশিয়া পরিবহনে ওঠেন হুমায়ুন কবির। নির্ধারিত ভাড়া ১২০ টাকা হলেও দ্বিগুণ ভাড়া ২৫০ টাকা নিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে অনেকে ইজতেমায় আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।’ আলম এশিয়া পরিবহনের চালক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সারাদিনে এই একটি ট্রিপ চালাতে পারবো। ভাড়া বেশি না নিলে মালিকের কাছে জমা দিয়ে কিছুই থাকবে না। ঘরে চাল না নিয়ে গেলে বউ-পোলাপান খাবে কী? আমাদের (কন্ডাক্টর ও হেলপার) তো চলতে হবে।’ জয়দেবপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় কথা হয় টাঙ্গাইলের সখিপুর এলাকার যাত্রী সফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘চান্দনা থেকে নিয়মিত ভাড়া ৬০ টাকা। সেখানে পরিবহনের কর্মীরা ১২০ টাকা ভাড়া চাচ্ছে। দ্রুত বাড়িতে যাওয়ার জন্য বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে বাসে উঠতে হয়েছে।’ কোনাবাড়ীগামী তাকওয়া পরিবহনে ২০ টাকার ভাড়া ৬০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। ওই এলাকার পোশাক কারখানার কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির এই অভিযোগ করেন। একই অভিযোগ করেছেন কালিয়াকৈরগামী অপর যাত্রী নাদির পারভেজ। নৌপথ পথ বেছে নেওয়া মুসলি­ আলকাছ মিয়া বলেন, ‘হেঁটে যেতে পারবো না। আমার অনেক বয়স হয়েছে। তাই নৌকায় রওনা দিলাম। দেখি নৌকা িেদয় কতটুকু যেতে পারি। আশুলিয়ায় গিয়ে গাড়িতে উঠবো।’ ময়মনসিংহের ত্রিশালের বগার বাজার এলাকার মুসলি­ আবু সাঈদ অভিযোগ করেন, ‘সুযোগ বুঝে পিকআপ, থ্রি-হুইলার এবং লেগুনার চালকরা বেশি ভাড়া নিচ্ছেন। এগুলো উচিত না।’ টঙ্গী রেলস্টেশণৈ কথা হয় গফরগাঁও উপজেলার পাইথর গ্রামের নসুমুদ্দির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অনেক কষ্টে ভোরে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেওয়ার জন্য এসছিলাম। আসতে যেমন কষ্ট হয়েছে, এখন যাওয়ার সময় তার চেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে। আয়োজক কমিটি অতিরিক্ত গাড়ি দিয়েছে। কিন্তু বিরতি না দিয়ে একসঙ্গে দুটি ট্রেন ছাড়লে একবারে যাত্রীরা আনন্দ নিয়ে বাড়ি যেতে পারতো।’ গাজীপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কথা হয় পিকআপ চালক জসিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘একবার গেলে আর ফেরত আসতে পারবো না। ময়মনসিংহ যেতে সময় লাগবে অন্তত ৪-৫ ঘণ্টা। সেই হিসাবে ১৫০-২০০ টাকা খুব বেশি না।’ এদিকে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় পিকআপ, থ্রি-হুইলার মহাসড়ক দখল করে নিয়েছে। জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তা পর্যন্ত জনপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা ভাড়া নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ এই রুটের ভাড়া মাত্র ৫০ টাকা। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার আলমগীর হোসেন বলেন, ‘অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। যদি এরকম হয়ে থাকে তাহলে ইজতেমাফেরত ঘরমুখো মুসলি­দের কাছ থেকে যেন নির্ধারিত ভাড়া নেওয়া হয়, সে ব্যাপারে এখনই পরিবহন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবো।’

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com