রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৬ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

আজ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২২

এফএনএস: আজ ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এদিনে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আ¤্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। পরে এই বৈদ্যনাথতলাকেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়। এর আগে একই বছরের ১০ এপ্রিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৭ এপ্রিল বৈদ্যনাথতলায় এই সরকার শপথ গ্রহন করে। পরের দিন ১১ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ দেশবাসীর উদ্দেশে বেতার ভাষণ দেন। তার এই ভাষন আকাশবাণী থেকে একাধিকবার প্রচারিত হয়। এ ভাষণে তিনি দেশব্যাপী পরিচালিত প্রতিরোধ যুদ্ধের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন। এছাড়াও ১৭ এপ্রিল মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের তারিখ নির্ধারিত হয়। তাজউদ্দিনের ভাষণের মধ্য দিয়েই দেশ-বিদেশের মানুষ জানতে পারেন বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম পরিচালনার লক্ষ্যে একটি আইনানুগ সরকার গঠিত হয়েছে। এরই পথপরিক্রমায় ১৭ এপ্রিল সকালে মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানোর পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনা করেন। পরে ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র রূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়। একই সাথে প্রবাসী সরকারের এক অধ্যাদেশে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সাবেক জন প্রশাসন বিষযক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রী পরিষদ সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন, ১০ এপ্রিল পাকিস্তানের নির্বাচিত জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি গোপনস্থানে মিলিত হয়ে প্রবাসী সরকার গঠন করেন। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি (অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি) নির্বাচিত করা হয়। সৈয়দ নজরুল ইসলাম পরে তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেন। মন্ত্রী সভার অন্য সদস্যরা হলেন, এম মনসুর আলী (অর্থ বাণিজ্য ও শিল্প) এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান (স্বরাষ্ট্র, সরবরাহ, ত্রাণ, পুনর্বাসন ও কৃষি)। পরবর্তি সময়ে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীসভার সবচেয়ে ঘৃনিত ব্যক্তি খন্দকার মোশতাক আহমদও (পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদ) মন্ত্রী সভার সদস্য ছিলেন। জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী অস্থায়ী সরকারের মুক্তিবাহিনীর প্রধান কমান্ডার এবং মেজর জেনারেল আবদুর রব চীফ অব স্টাফ নিযুক্ত হন। মুজিবনগর সরকারকে ১৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ভাগ করা হয়। এ ছাড়া কয়েকটি বিভাগ মন্ত্রিপরিষদের কর্তৃত্বাধীনে থাকে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যুদ্ধরত অঞ্চলকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে প্রতিটিতে একজন করে সেক্টর কমান্ডার নিয়োগা করা হয়। তবে ১০নং বা নৌ সেক্টরে কোন সেক্টর কমান্ডার ছিল না, কমান্ডোরা যখন যে এলাকায় অভিযান করতেন সে সেক্টরের কমান্ডারের অধীনে থাকত। মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী গ্রাম বৈদ্যনাথতলায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আবদুল মান্নান এম.এন.এ এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অধ্যাপক ইউসুফ আলী এম.এন.এ। নবগঠিত সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে এখানে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছিল মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠান। আর সেই অনুষ্ঠানে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেছিলেন ১৭ বছরের এক কিশোর মো. বাকের আলী। এদিকে ১৭ এপ্রিল মুজিব নগর সরকারের মন্ত্রীরা শপথ নিলেও ১৮ এপ্রিল মন্ত্রী পরিষদের প্রথম সভায় মন্ত্রীদের দপ্তর বন্টন করা হয়। মুজিব নগর সরকারের সফল নেতৃত্বে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় অর্জনের মধ্যদিয়ে স্বাধীনতা লাভ করে। শুধু ৎইা নয়, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের এই প্রথম সরকারের কুটনৈতিক প্রচেষ্টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে ভারত এবং ভুটান এই সরকারকে স্বীকৃতি দেয়। কর্মসূচি: মুজিবনগর দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্রে সকাল ৯ টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসটির সূচনা হবে। এরপর মুজিবনগরের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্রে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। মুজিবনগর আ¤্রকাননে বীর মুক্তিযোদ্ধা,পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও ভিডিবি, বিএনসিসি, স্কাউটস, গার্লস গাইড এবং স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী কর্তৃক গার্ড অব অনার প্রদান এবং বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে। এদিন সকাল ১০টায় মুজিবনগরে গীতিনাট্য ‘জল মাটি ও মানুষ’ প্রদর্শিত হবে। সকাল পৌনে ১১টায় মুজিবনগরের শেখ হাসিনা মঞ্চে এ দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী প্রদান করেছেন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এ দিন সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বেতার ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। এদিন মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলায় সরকারি ছুটি। রাজধানী ঢাকা এবং মুজিবনগরে এ দিবস উপলক্ষে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ভবনসমূহ আলোকসজ্জা এবং সড়কদ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হবে। এদিন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলোচনাসভা ও দোয়া/প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে অনুরূপ কর্মসূচি পালন করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com