ভারতের বিপক্ষে হার দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরু করেছে বাংলাদেশ। সেই হারের হতাশাটা দুবাইয়ে রেখে এবার মূল আয়োজক দেশ পাকিস্তান থেকে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। প্রতিপক্ষ এবার নিউজিল্যান্ড। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মূল আয়োজক পাকিস্তান হলেও হাইব্রিড মডেলে ভারত নিজেদের ম্যাচগুলো খেলছে দুবাইয়ে। ভারতের প্রথম ম্যাচ ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। যে কারণে বাংলাদেশের শুরুটাও হয়েছে দুবাই থেকে। পাকিস্তানের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য অনেকটা বাঁচামরার। ম্যাচ হেরে গেলে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়ঘণ্টা বাজার সম্ভাবনাই বেশি। জিতে গেলে বেঁচে থাকবে আশা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অবশ্য অনেক সুখস্মৃতি আছে বাংলাদেশের। ২০১০ সালে ৪—০ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজে কিউইদের হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে ৩—০। তবে সেসবই ঘরের মাঠে। কিউইদের কন্ডিশনে আবার রাজত্ব দেখিয়েছে কিউইরাই। নিরপেক্ষ ভেন্যু হলেও পাকিস্তানের জল—হাওয়া—বাতাস কিউইদের বেশ ভালো করেই চেনা। দলে পেসার যেমন আছেন বেশ কজন, সাথে আছেন মানসম্পন্ন সব স্পিনার। ব্যাটিং ইউনিট তো আগে থেকেই বেশ শক্তিশালী। অনেক কঠিন এক চ্যালেঞ্জের সামনেই তাই দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরুর আগে পাকিস্তানের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলেছে নিউজিল্যান্ড। অপরাজিত থেকে জিতেছে টুর্নামেন্টের শিরোপাও। সেই সিরিজে দুইবার হারিয়েছে পাকিস্তানকে। পরে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচেও গুঁড়িয়ে দিয়েছে স্বাগতিকদের। নিউজিল্যান্ডের ফর্মটা এখন সপ্তম স্বর্গে। এই নিউজিল্যান্ডকে মাটিতে নামাতে হলে নিজেদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের পারফরম্যান্সটাই করতে হবে বাংলাদেশকে। ভারত ম্যাচে বাংলাদেশকে আরও একবার ভুগিয়েছে ব্যাটিং। শুরুতে মাত্র ৩৫ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারানোয় পরে বহু চেষ্টার ফলেও টেনেটুনে ২২৮ তুলতে পারে বাংলাদেশ। এমন ব্যাটিং কলাপ্স অবশ্য প্রায়ই ঘটে থাকে বাংলাদেশের ইনিংসে। কিউই বধ করতে হলে এখানে অনেক উন্নতি করতে হবে। সেই সাথে উন্নতি লাগবে ফিল্ডিংয়ে। ভারত ম্যাচে লোকেশ রাহুলের লোপ্পা ক্যাচ ছেড়েছিলেন জাকের আলী অনিক। যদিও ম্যাচের গতিবিধিতে তার প্রভাব অত বেশি ছিল না, তবুও ক্যাচ মিস কখনওই কাম্য নয়। বোলিং ইউনিটটা তুলনামূলক ভালো বাংলাদেশের। শক্তি বাড়াতে মুস্তাফিজুর রহমানকে বসিয়ে নিউজিল্যান্ড ম্যাচে নাহিদ রানাকে একাদশে আনতে পারে বাংলাদেশ। রানার গতি রাওয়ালপিন্ডির উইকেটে ভালোই কার্যকর হওয়ার কথা। সেই সাথে তাসকিন আহমেদ, তানজিম হাসান সাকিবরা তো থাকছেনই। স্পিন ইউনিটে ভারতের বিপক্ষে দারুণ করা লেগি রিশাদ হোসেনের সাথে থাকবেন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। নিউজিল্যান্ড ম্যাচের আগে বড় প্রশ্ন দুইটি। চোট কাটিয়ে ফিরতে পারবেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ? এবং রিয়াদ ফিরলে একাদশের বাইরে যাবেন কে? দুটি প্রশ্নের কোনোটিরই নিশ্চিত উত্তর এই মুহূর্তে দেওয়া যাচ্ছে না। ফিজিও, ট্রেনারদের পর্যবেক্ষণে থাকা রিয়াদ ম্যাচ খেলার ফিটনেস অর্জন করতে পারলে ঢ়ুকবেন একাদশে। জাকের আলী অনিক এবং তাওহিদ হৃদয়ের একাদশে জায়গা নিয়ে যা শঙ্কা ছিল তা ভারত ম্যাচের পর আপাতত নেই। রিয়াদকে একাদশে জায়গা দিতে হলে তাই বাইরে যেতে হতে পারে সৌম্য সরকারকে। ওপেনিংয়ে তানজিদ হাসান তামিমের সাথে জুটি বাঁধতে হতে পারে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বা মেহেদী হাসান মিরাজকে। তবে তার আগে ফিরতে হবে রিয়াদকে, যা এখনও অনিশ্চিত। রাওয়ালপিন্ডির ভেন্যু বাংলাদেশেরও খুব একটা অচেনা নয়। গত বছর পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকে ২—০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ, দুই ম্যাচই হয়েছে রাওয়ালপিন্ডিতে। অনুপ্রেরণা খোঁজা যাবে আরও এক জায়গা থেকেও। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সর্বশেষ আসরে এই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই স্মরণীয় এক জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ, যা পরে নিশ্চিত করে দেয় বাংলাদেশের সেমিফাইনালও। দারুণ প্রত্যাবর্তনের সেই ম্যাচে খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। ৮ বছরে অনেকখানি বদলেছে নিউজিল্যান্ড দল, বদলেছে বাংলাদেশও। তবে প্রেক্ষাপটে খানিকটা মিল আছে এবারও। ভারতের কাছে হেরে চাপে থাকা বাংলাদেশের সামনে সেমির পথ খোলা রাখতে হলে জিততেই হবে। প্রয়োজন শুধু আরও একটি দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের। আজ সোমবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টায় শুরু হবে বাংলাদেশ—নিউজিল্যান্ড লড়াই। দুই দলের সম্ভাব্য একাদশ—
বাংলাদেশ : তানজিদ হাসান তামিম, সৌম্য সরকার/মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), মেহেদী হাসান মিরাজ, তাওহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম, জাকের আলী অনিক, রিশাদ হোসেন, তানজিম হাসান সাকিব, তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানা।
নিউজিল্যান্ড : উইল ইয়ং, ডেভন কনওয়ে, কেইন উইলিয়ামসন, ড্যারিল মিচেল, টম ল্যাথাম, গ্লেন ফিলিপস, মাইকেল ব্রেসওয়েল, মিচেল স্যান্টনার (অধিনায়ক), নাথান স্মিথ, উইল ও’রউরকে, ম্যাট হেনরি।