এফএনএস: ‘‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই, ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’’- কবিতার মতো করেই শহীদ বুদ্ধিজীবীরা বেঁচে আছেন, থাকবেন। রক্তের আখরে, কষ্টের প্রস্রবণে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিবাহী দিনটি বছর ঘুরে আবার এলো। আজ শনিবার সেই বেদনাঘন ১৪ ডিসেম্বর। আমাদের জাতীয় জীবনের আরেক শোকাবহ দিন এটি। বিজয়ের চূড়ান্তক্ষণে ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশ তার বিশিষ্ট ও শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারায়। ধীমান, অনন্য মনীষা সেসব ব্যক্তিত্বের প্রতি জাতির সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও তাদের স্মরণে প্রতি বছরই যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হয়। এ উপলক্ষে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়েছে।
ইতিহাস বলে, ঊনিশশ একাত্তর সালে টানা নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে যখন শত্রুদের হাত থেকে জাতি পরম মুক্তির প্রহর গুণছিলো, ঠিক তখনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও ঘাতকচক্রের হাতে প্রাণ হারান বাংলাদেশের মেধা ও মননের ধারক, প্রথিতযশা সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, দার্শনিক এবং শিক্ষাবিদগণ। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের অভ্যুদয়ের পূর্ব মুহূর্তে দেশকে মেধা, শিক্ষা ও সংস্কৃতিশূন্য করার হীনমানসিকতা থেকেই একচল্লিশ বছর আগে এমনি এক দিনের নীলনকশা অনুযায়ী ঠান্ডা মাথায় মানব সভ্যতার অন্যতম বর্বর ও কাপুরুষোচিত এই হত্যাকান্ড পরিচালিত হয়। গোটা জাতির আবেগঘন শ্রদ্ধা ও ফুলেল ভালোবাসায় শীহদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হচ্ছে।
গা শিউরে উঠা সেই দিনে অকল্পনীয় নিষ্ঠুর কায়দায় হত্যা করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব (জিসি দেব), অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন, অধ্যাপক আ ন ম মনিরুজ্জামান, অধ্যাপক আনওয়ার পাশা, সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন আহমেদ, শিলালিপি সম্পাদিকা বেগম সেলিনা পারভীন, সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেন, ডা. আলীম চৌধুরী, ডা. আবুল খায়ের, ডা. রাশিদুল হাসান, ডা. ফজলে রাববী, ডা. আজাদ, ডা. গোলাম মুর্তাজা, ডা. ফজলুর রহমান, অধ্যাপক মোহাম্মদ সাদেক, ড. ফয়জুল মুতী, আব্দুল মুক্তাদীর, সন্তোষ ভট্টাচার্য, আবুল বাশার চৌধুরী, সাহিত্যিক-সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ বুদ্ধিজীবীগণকে। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে ঢাকার রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন বধ্যভূমিতে অনেকের গলিত লাশ খুঁজে পাওয়া যায়। বাকিরা রয়ে যায় নিখোঁজ, অজ্ঞাত। এই বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতি চিরজাগরুক রাখতে ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনার্থে রাজধানীর মিরপুরে নির্মাণ করা হয় শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ।
একাত্তরে আজকের এই দিনে মুক্তিবাহিনীর অব্যাহত অগ্রযাত্রায় স্বাধীন পতাকা উড়ানো হয় বগুড়া জেলা শহর ও কাহালু উপজেলা, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, মানিকগঞ্জ শহর ও ধামরাই উপজেলা, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও নাটোরের লালপুরসহ আরো কয়েকটি জনপদে। দখলদারমুক্ত হওয়ায় ঘটনাগুলো প্রতি মুহূর্তেই মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধে সংগঠকদের মনে উদ্যম ও শক্তি সঞ্চার করে।