এফএনএস: পবিত্র রমজান সামনে রেখে আটটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে নগদ মার্জিনের হার নূন্যতম পর্যায়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি ও খেজুরের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখাসহ পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গতকাল রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। সার্কুলারে বলা হয়, ‘আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি ও খেজুরের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখাসহ পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে ওই পণ্যগুলোর আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে সংরক্ষিত নগদ মার্জিনের হার ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে নূন্যতম পর্যায়ে রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হলো। ‘এই নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর করা হবে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এ নির্দেশ বহাল থাকবে।’ এর আগে ৪ ডিসেম্বর রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমদানিতে সর্বোচ্চ সহায়তা দিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর আবদুর রউফ তালুকদার। ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈঠকে এ নির্দেশ দেন তিনি। বৈঠকে বলা হয়, অর্থ পাচার রোধে অপ্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি বন্ধ রাখা হয়েছে। আর রোজার সময় কোনো পণ্যের যাতে ঘাটতি না হয় এবং মূল্য স্থিতিশীল থাকে সে জন্য তেল, চিনি, ডাল ও ছোলার এলসি খুলতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সভায় উপস্থিত ব্যাংকাররা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে চলার প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর কোনো নীতি-সহায়তা দরকার হলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেয়া হবে। সাধারণভাবে পণ্য দেশের আসার পর বিল পরিশোধ করতে হয়। তবে আমদানি ঋণপত্র খোলার সময় গ্রাহককে ব্যাংকে পণ্য মূল্যের একটি অংশ জমা দিতে হয়, যাকে এলসি মার্জিন বলে। এই মার্জিনের বিষয়টি নির্ধারিত হয় ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে। ব্যাংকের সঙ্গে গ্রাহকের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ভালো হলে নূন্যতম মার্জিনেও এলসি খোলা হয়। আবার গ্রাহক যদি ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচিত হন, সেক্ষেত্রে শতভাগ মার্জিন নিয়ে এলসি খোলা হয়। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে মূল্যস্ফীতি, ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন ঠেকাতে পণ্য আমদানিতে লাগাম দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। একের পর এক নির্দেশনা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আমদানি কমাতে প্রথম পদক্ষেপ নেয়া হয় ১৭ এপ্রিল। ওইদিন এক সার্কুলারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শিশুখাদ্য, জ¦ালানিসহ অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, স্থানীয় ও রপ্তানিমুখী শিল্প এবং কৃষি খাত-সংশ্লিষ্ট পণ্য ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানির বিপরীতে ঋণপত্র স্থাপনের (এলসি) নগদ মার্জিন হার নূন্যতম ২৫ শতাংশ সংরক্ষণের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর ১০ মে বিলাস পণ্য আমদানি কমাতে আরও কড়াকড়ি আরোপ করে আরেকটি সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সার্কুলারে বলা হয়, সব ধরনের মোটরকার, হোম অ্যাপ্লায়েন্স হিসেবে ব্যবহৃত ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীর আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে নূন্যতম ৭৫ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে হবে। একইসঙ্গে অতি জরুরি পণ্য ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে হবে। সবশেষ ৫ জুলাই আরও কড়াকড়ি আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সার্কুলার জারি করে বলা হয়, সব ধরনের মোটরকার, হোম অ্যাপ্লায়েন্স হিসেবে ব্যবহৃত ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, প্রসাধনী, স্বর্ণালংকার, তৈরি পোশাক, গৃহস্থালি বৈদ্যুতিক সামগ্রী বা হোম অ্যাপ্লায়েন্স, পানীয়সহ বেশ কিছু পণ্য আমদানিতে এখন থেকে ব্যাংক থেকে কোনো ধরনের ঋণ সুবিধা পাবেন না আমদানিকারকরা। এসব পণ্যের আমদানি ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে শতভাগ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে হবে, এর আগে যা ছিল ৭৫ শতাংশ।