এফএনএস: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, কেবল একটি পরিবার ও তাদের সহযোগীরা মিলে কমপক্ষে আড়াই লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। এসব টাকা কোন কোন দেশে আছে তা খুঁজে বের করতে আন্তর্জাতিক ট্রেসিং ফার্মের সঙ্গে কাজ করছে সরকার। আগামী ৬ মাসের মধ্যে এসব সম্পদ ফ্রিজ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। এরপর পাচার হওয়া প্রতিটি টাকা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। গত শুক্রবার বিকেলে অর্থ পাচার প্রতিরোধ ও সমসাময়িক ব্যাংকিং ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, মানি লন্ডারিংয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় ভিকটিম। একটি পরিবার ও গোষ্ঠী সব টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে। পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি ভবিষ্যতে আর কেউ যাতে টাকা পাচার করতে না পারে সেই পথটি বন্ধ করা বর্তমান সরকারের প্রধান লক্ষ্য। পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনা একটু জটিল প্রক্রিয়া। কারণ, শুধু বাংলাদেশের আইন দিয়ে এই টাকা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। এর জন্য যে সব দেশে টাকা আছে সেসব দেশের সরকার ও আইনের সঙ্গে সমন্বয় করতে হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ দেশ সরকারকে সহযোগিতা করছে। খুব শিগগিরই ইতিবাচক ফলাফল আসতে শুরু করবে। গভর্নর আরও বলেন, বিগত সরকারের রেখে যাওয়া ভঙ্গুর অর্থনীতিকে মেরামত ও সামগ্রিক অর্থনীতিতে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছে বর্তমান সরকার। গত ৮ মাসে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ। রফতানি প্রবৃদ্ধি এখনও ডাবল ডিজিটে আছে। ১৪ শতাংশের মুল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামিয়ে আনা গেছে। রিজার্ভ বাড়ায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ভর্তুকি বাড়ানো গেছে। রুগ্ন ব্যাংকগুলোও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে এসেছে। চলতি বছরের মধ্যেই জাতীয় অর্থনীতি একটি শক্ত ভিত্তির ওপরে দাঁড়াবে বলেও আশার কথা জানান আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, চট্টগ্রামেরই বড় গ্রুপের অন্ততপক্ষে সোয়া লাখ কোটি টাকা থেকে দেড় লাখ কোটি টাকা নিয়েছে ব্যাংকিং খাত থেকে। আরও কিছু গ্রুপ আছে। ২০, ৪০, ৫০ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। আমার ধারণা বড় গ্রুপগুলোর আড়াই—তিন লাখ কোটি টাকা হতে পারে। ছোটগুলো বাদে। সেগুলোও আদায় করতে হবে অর্থঋণ আদালতসহ অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়ায়। গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আমাদের মূল দায়িত্ব হচ্ছে সামগ্রিক অর্থনীতিতে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা। আমরা মনে করি, আমরা সেখানে বেশ কিছু সাফল্য অর্জন করেছি, পুরোপুরিভাবে হয়নি। আরও হবে আশা করি। আমরা সঠিক পথে আছি। আমাদের রিজার্ভ স্থিতিশীল আছে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে। আমাদের রফতানি বাড়ছে। বিভিন্ন রকমের গোলযোগ আন্দোলন সত্ত্বেও রফতানি মুখ থুবড়ে পড়েনি, বাড়ছে। ডাবল ডিজিট গ্রোথ দেখতে পাচ্ছি। রেমিট্যান্সের প্রবাহ উৎসাহব্যঞ্জক। এর ধারাবাহিকতা থাকবে বলে আশা করছি। সব মিলিয়ে ম্যাক্রো ইকোনমিক এক্সটারনাল সেক্টরে একটা স্বস্তির জায়গায় আমরা চলে এসেছি। কোনও ধরনের কোনও রকমের ক্রাইসিস আছে বলে আমি মনে করি না এবং হবে বলে আমি মনে করি না। আমরা একটা সুদৃঢ় অবস্থানে এসেছি। এ সময় বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান কর্মকর্তা এ এফ এম শাহীনুল ইসলামসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।