রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:০০ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
কলারোয়ার তুলসীডাঙ্গায় বিএনপির মতবিনিময় সভা শ্যামনগরে ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির নির্বাচনে সভাপতি আসাদুল্লাহ, সম্পাদক হাফিজুর ব্রহ্মরাজপুরে সেলুন মালিক কল্যাণ সমিতির কমিটি গঠন সভাপতি শম্ভু সম্পাদক মানিক সাতক্ষীরা জেলা চিংড়ি পোনা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সভা সাতক্ষীরা স্কাউটস্ ত্রৈ—বার্ষিক কাউন্সিল কমিশনার শাহজাহান সম্পাদক মনোরঞ্জন পুরাতন সাতক্ষীরা সরলাপাড়া যুব সংঘের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিল পীরমাতা ব্লাড ব্যাংক নলতা শরীফ’র প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও মিলন মেলা অনুষ্ঠিত আশাশুনির খাজরা ও বড়দল সীমান্তে কালকী স্লুইস গেট পরিদর্শনে রবিউল বাশার শ্যামনগরে মটর সাইকেল দূর্ঘটনায় চালক নিহত ও আহত ১ কালিগঞ্জে সু—নাগরিকের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন তামিম

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৭ জুলাই, ২০২৩

এফএনএস স্পোর্টস: ঝড়ের পূর্বাভাস ছিল আগেই। কোনো ক্রিকেটারের এভাবে নিজ উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন ডাকার ঘোষণা তো বাংলাদেশের ক্রিকেটে রোজ ঘটে না। শেষ পর্যন্ত যা হলো, সেটিকে বলা যায় ঘূর্ণিঝড়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন তামিম ইকবাল। চট্টগ্রামের একটি হোটেলে বৃহস্পতিবার দুপুরে এই ঘোষণা দেন তামিম। আগের দিন আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে দলকে নেতৃত্ব দেন তিনিই। নিজ শহরের মাঠে সেই ম্যাচটিই হয়ে থাকল তার ক্যারিয়ারের শেষ। ৩৪ বছর বয়সী ওপেনার বিদায় বলে দিলেন সিরিজের মাঝপথেই। বিদায়ের কথা বলতে গিয়ে একপর্যায়ে ধরে আসে তার কণ্ঠ। মাথা নিচু করে চোখের পানি মুছতে দেখা যায় তাকে। সিদ্ধান্তটি হুট করে নেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি। “আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই ম্যাচটিই আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। এই মুহূর্ত থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি।” “এটার পেছনে হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। এটা নিয়ে ভাবছিলাম আমি… এটার ভিন্ন ভিন্ন কারণ আছে, যেটা আমার মনে হয় না এখানে বলার দরকার আছে। এটা না যে হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বেশ কিছু দিন ধরেই কথা বলছিলাম, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলছিলাম। আমার মনে হয়েছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর উপযুক্ত সময় এটিই।” সা¤প্রতিক সময়টাতে চোট নিয়ে বেশ ভুগছিলেন তামিম। চোটের কারণে গত ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে সিরিজে খেলতে পারেননি তিনি। পিঠের নিচের অংশের পুরনো ব্যথা মাথাচাড়া দেওয়ায় কিছুদিন আগে খেলতে পারেননি আফগানিস্তানের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে। চলতি ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগের দিনও তিনি জানান যে, শতভাগ ফিট নন। প্রথম ম্যাচ খেলার পর অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেবেন। শেষ পর্যন্ত তার সেই সিদ্ধান্ত চোট-টোটের সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছে গেল ক্যারিয়ারের শেষ বিন্দুতে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার বিচরণ শুরু সেই ২০০৭ সালের ফেব্রæয়ারিতে। চাচা আকরাম খান ও বড় ভাই নাফিস ইকবালকে অনুসরণ করেই তিনি পা রাখেন ক্রিকেটের পথে। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট ও ঘরোয়া ক্রিকেটে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের ঝড় তুলে ১৮ ছুঁইছুঁই বয়সেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়ে যায় ২০০৭ সালের ফেব্রæয়ারিতে। ¯্রফে চার ওয়ানডের অভিজ্ঞতায় বিশ্বকাপে খেলতে নেমে প্রথম ম্যাচেই ভারতের বিপক্ষে স্মরণীয় এক জয়ে দাপুটে ফিফটি করে নজর কাড়েন ক্রিকেট বিশ্বের। এরপর নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ক্রমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান হিসেবে। বাংলাদেশের ব্যাটিং রেকর্ডের অনেকগুলোই নিজের করে নেন তিনি। বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক ‘প্রথম’ কিছুর জন্ম হয় তার হাত ধরে। বিদায় বেলায় তার নামের পাশে ৭০ টেস্টে ৩৮.৮৯ গড়ে রান ৫ হাজার ১৩৪। সেঞ্চুরি ১০টি, ফিফটি ৩১টি। টেস্টে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ও সেঞ্চুরি তার। ওয়ানডে ২৪১টি খেলে ৩৬.৬২ গড়ে রান ৮ হাজার ৩১৩। ১৪ সেঞ্চুরির পাশে এখানে ফিফটি ৫৬টি। এই সংস্করণে দেশের হয়ে রান, সেঞ্চুরি, ফিফটি, সবকিছুতেই তিনি সবার ওপরে। ৭৪ ম্যাচে ১ হাজার ৭০১ রান নিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলেছেন গত জুলাইয়েই। এই সংস্করণে দেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান তিনি। তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১৫ হাজার রান করা দেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার সেঞ্চুরি ২৫টি। বাংলাদেশের হয়ে ২০ সেঞ্চুরিও নেই আর কারও। ২০১৭ সালে নিউ জিল্যান্ড সফরে নিয়মিত অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের চোটের কারণে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে দেশের হয়ে প্রথম অধিনায়কত্বের স্বাদ পান তামিম। ২০১৯ বিশ্বকাপের পরপর শ্রীলঙ্কা সফরে তিন ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেন তিনি মাশরাফি বিন মুর্তজার চোটে পড়ায়। ২০২০ সালে মাশরাফি নেতৃত্ব ছাড়ার পর ওয়ানডে দলের নিয়মিত অধিনায়কের দায়িত্বও পান তিনিই। সব মিলিয়ে ৩৭টি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি, জয়ের দেখা পেয়েছেন ২১টিতে। অন্তত ৫টি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে সাফল্যের শতকরা হারে বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক তিনিই। বর্ণাঢ্য এই ক্যারিয়ারে নিশ্চিতভাবেই একটি বড় আক্ষেপ হয়ে থাকবে বিশ্বকাপ। চারটি ওয়ানডে বিশ্বকাপে ২৯ ম্যাচ খেলে তার সেঞ্চুরি নেই। চারটি ফিফটিতে ৭১৮ রান করেছেন কেবল ২৪.৭৫ গড়ে। ২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৩১৯ রান তাড়ায় ৯৫ রানের ইনিংসটিই বিশ্বকাপে তার ক্যারিয়ার। এবারের বিশ্বকাপে সেই আক্ষেপ ঘোচানের হাতছানি ছিল ব্যাটিংয়ে ও নেতৃত্বে। কিন্তু থমকে গেলেন তিনি নিজেই। তার বিদায়ে শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশ ক্রিকেটের একটি অধ্যায়েরও। এদেশের ক্রিকেটে মাঠ থেকে বিদায় নিতে না পারা গ্রেটদের তালিকাও এতে দীর্ঘ হলো আরেকটু।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com