রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৭:২২ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
সাতক্ষীরায় ট্রাকের ধাক্কায় ১ ভ্যান চালকের করুন মৃত্যু সাতক্ষীরায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা শ্যামনগরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত কদমতলা পি ডি কে মিতালী সংঘের উদ্যোগে তাফসিরুল কোরআন মাহফিল অনুষ্ঠিত আবারও ছড়িয়ে পড়েছে তাপদাহ ঃ আবহাওয়ার সুখবর নেই হামাসের হামলায় বার দখলদার সেনা নিহত ঃ আহত পঞ্চাশ খানপুর ছিদ্দিকীয়া এতিমখানা পরিদর্শন করলেন উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা প্রতাপনগরে ২ দিন ব্যাপী তাফসিরুল কুরআন মাহফিল বিষ্ণুপুর ২দিন ব্যাপি মাহফিল সম্পন্ন কবি মানিক ঘোষের পিতা-মাতার স্মারণে বিশেষ প্রার্থনা

‘আবহাওয়ার সংকেত শুনলি পরানডা কাঁইপে ওঠে’

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৩

শাহজাহান সিরাজ, কয়রা থেকে ॥ মানষে কইতাছে আবার নাকি ঝড় আসপে। কমলা রঙের জামা গায় একদল পোলারা (সিপিপি) মোড়ে মোড়ে রাঙা পতাকা বানতেছে লর লাঠির মাথায়। তারা মোদের কয়ে গেল সাবধান থাকতি হবে ঝড় আইতাছে। আমাগের আর সাবধানের কি আছে সব তো শেয়াষ। ঝড় আসলি তো ওয়াপদা (বাঁধ) ভাঙবে, আর ওয়াপদা ভাঙলি তো ঘর দোর সব ভাসাইয়া নেবে। ঘর দোর ভাঙলি রাতি দিনি থাকতি যে কত কষ্ট হয় তা বুঝবে কিডা। প্রত্যেক বছর এই সময়ডা আসলি ভয়তে থাকি- এই বুঝি সংকেত আইলো। তয় সংকেত শুনলি পরানডা চমকে ওডে। সিপিপি সেচ্ছাসেবকদের হ্যান্ডমাইকে ঘূর্ণিঝড় আসার আগাম সতর্ক সংকেত শুনে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন খুলনার কয়রা উপজেলার জোড়সিং গ্রামের কামাল মোল্লা। বিগত বছরে ঘূর্ণিঝড় আইলায় তার ঘরবাড়ী নদী গর্ভে চলে গেছে আর আম্পান ও ইয়াসে দু’বার তার ঘর ভেঙেছে।। অনেক কষ্টে না খেয়ে না দিয়ে নতুন করে বাঁধের পাশে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। আবারও ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত শুনে এবং গতকাল জোড়সিং এলাকার বেড়িবাঁধের ফাটল দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তিনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে এক বছর আগে এ কাজের সংস্কার করা হয়। বছর না যেতে বাঁধে ফাটল ও ধসে যাওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন ও শঙ্কা বিরাজ করছে।এদিকে জোড়সিং এলাকার ব্রোজেন মন্ডলের বাড়ীর সামনের অংশটুকু বেশি ঝুকিতে রয়েছে ফলে ভাঙন হুমকিতে পড়েছে বাঁধ সংলগ্ন জোড়সিং, আংটিহারা, গোলখালি, বিনা পানি গ্রাম সহ দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার মানুষ। এছাড়া ভাঙনরোধে দ্রুত পাউবোর পক্ষ থেকে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে প্রায় দুই হাজার একর আমনের খেতসহ অসংখ্য মাছের ঘের নদীর লোনা পানিতে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন। ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর দীর্ঘ ১ যুগের মধ্যে বয়ে গেছে কয়রা উপজেলার উপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় নারগিছ, মহাসেন, ফণি, আম্পান ইয়াস, বুলবুলসহ ছোট বড় প্রায় ২ ডজন সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস। এসব ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের আঘাতে বিভিন্ন সময় উপজেলার একাধিক গ্রামে লবণ পানিতে ভেসে গেছে। যার ক্ষত আজও কয়রায় বিভিন্ন ইউনিয়নে রাস্তাঘাট ও মানুষের বাড়ীঘর দেখলে বোঝা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘূর্ণিঝড় আইলার স্মৃতি আজও দেখা যায় মহারাজপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মঠবাড়ী গ্রামে। কেননা এই গ্রামকে দু’ ভাগ করেছে লবণ পানির স্্েরাতে এবং আজও কোমলমতি ছাত্রছাত্রী সহ এলাকাবাসী খেয়া নৌকায় পারাপার হয়ে থাকে। এছাড়া আম্পান, ইয়াস, ফণি, বুলবুলের মত ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের আঘাতে একাধিক গ্রামের মানুষ আজও খুজে পায়নি তাদের পূর্বপুরুষের ভিটা। এমন একটি গ্রামের সন্ধান মেলে উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের হাজত খালী গ্রাম। কারন আজও এই গ্রামের একাধিক পরিবার বেড়িবাঁধের উপর বসবাস করে, কেননা তাদের বাড়ীঘর আম্পানে পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে ছোট খাট খালে পরিণত হয়েছে। এছাড়া আইলা , আম্পান ও ২০২২ সালে ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে গৃহহারা হয়েছে গাতির ঘেরি, গাববুনিয়া, গাজী পাড়া, হরিনখোলা, ৫ নং কয়রা, ২ নং কয়রা, ও দশালিয়া গ্রামের শত শত পরিবার। উল্লেখ্য এসব গ্রামের গৃহহারা মানুষ কেউ বেড়িবাঁধে, কেউ নদীর চরে, আবার অনেকে অন্যত্রে জমি ক্রয় করে বাড়ীঘর করেছে। এমনকি যে সব পরিবার নিঃস্ব হয়েছে তারা উপজেলার বাহিরে এমনকি ভারতেও অনেকেউ বসবাস করছে। তবে চলতি বছর ২০২৩ সালে কয়রা উপজেলার একাধিক গ্রামে নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধ কোন প্রকার দূর্যোগ ছাড়াই নদীতে পানির স্রোতের কারনে ধ্বসে পড়েছে। জানা গেছে, সম্প্রতি ২০২২ সালে সেনাবাহিনীর তত্বাবধায়নে নির্মিত ২ নং কয়রা, গাজী পাড়া ও জোড়সিং গ্রামের বেড়িবাঁধে ধস নামতে দেখা গেছে। অথচ এসব এলাকায় জাইকা ও বিশ^ ব্যাংকের অর্থায়নে ২০২১/২২ অর্থ বছরে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে এবং আজও তার কার্যক্রম চলমান আছে। এদিকে খবর নিয়ে জানা গেছে, কয়রা উপজেলায় ১৩-১৪/ ১ ও ২ নং পোল্ডারে ১১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ যা চলতি বছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার অধিনে আনা হলেও বিগত অর্থ বছরের সকল বরাদ্ধ অথ্যাৎ ১০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আজও সাতক্ষীরার অধিনে থাকায় কার্যক্রম কচ্ছপ গতিতে এগিয়ে চলছে। এবং মাত্র ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ দেখভাল করছেন পাউবো খুলনা। এবিষয় পাউবো খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল আলমের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, কাগজ কলমে মন্ত্রণালয় থেকে কয়রা উপজেলা খুলনার অধিনে আসলেও বাস্তবে শত কিলোমিটার বাঁধ আজও সাতক্ষীরা পাউবো নিয়ন্ত্রন করে।তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্ধের কার্যক্রম ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে ১৩-১৪/ ১নং পোল্ডারে এবং একই সাথে সেখানে জাইকার কাজও চলমান। ১৩-১৪/২ নং পোল্ডারে ইতোমধেই জাইকা ও বিশ^ ব্যাংকের অর্থায়নে কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং আগামী শুকনা মৌসুমে সমগ্র কয়রায় ব্যাপকভাবে বেড়িবাধের কার্য়ক্রম শুরু হবে। তিনি আরও বলেন, জোড়সিং এলাকার ফাটলের খবর পেয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংসদ সদস্য আলহাজ¦ আকতারুজ্জামান বাবু বলেন, দেশের দুর্যোগপূর্র্ণ উপকূলীয় উপজেলার মধ্যে তার নির্বাচিত এলাকা কয়রা-পাইকগাছা প্রথম স্থানে থাকায় তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে গত সাড়ে ৪ বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজে বরাদ্ধ পাওয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রী কে ধন্যবাদ জানিয়ে তার দীর্ঘায়ু কামনা করেছেন।সংসদ সদস্য বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে পাওয়া দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্ধের কার্যক্রমে শুরু হয়েছে এবং জাইকা ও বিশ^ ব্যাংকের প্রাপ্ত বরাদ্ধের কিছু কাজ শেষ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে কয়রা উপজেলায় টেকসই বেড়িবাধের জন্য জমি অধিগ্রহনের কাজ শেষ হয়েছে এবং বর্ষা মৌসুম শেষ হলেই সমগ্র কয়রার মানুষ মুখের কথায় নয় বাস্তবে দেখতে পাবে বেড়িবাঁধ নির্মান কাজের ঠিকাদারদের ব্যস্ততা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com