এফএনএস : বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় গত জুলাই মাস থেকেই স্পট মার্কেট (খোলাবাজার) থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে কমে গেছে এলএনজির সরবরাহ। বর্তমানে জাতীয় গ্রিডে দুটি ফ্লটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) থেকে দিনে কম-বেশি ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস যোগ হচ্ছে। যা সক্ষমতার অর্ধেক। কিন্তু রিগ্যাসিফিকেশন না করলেও বাকি সক্ষমতার জন্য এফএসআরইউর উদ্যোক্তারা ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে প্রায় ২ কোটি টাকা পাচ্ছে। পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এলএনজি বা তরল প্রাকৃতিক গ্যাসকে রূপান্তরে (রিগ্যাসিফিকেশন) দৈনিক ২ কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি কমে গেছে। তাতে কক্সবাজারের মহেশখালীর অদূরে গভীর সমুদ্রে স্থাপন করা দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালে সরবরাহ কমে যাওয়ায় অর্ধেক হয়ে গেছে উৎপাদন। কিন্তু চুক্তি অনুসারে সক্ষমতা অনুযায়ী ওই দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। সূত্র জানায়, এলএনজি টার্মিনাল বা ফ্লটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিটে (এফএসআরইউ) তরল গ্যাসকে পূর্বের গ্যাসীয় অবস্থায় রূপান্তর করে দেশের অভ্যন্তরে বা জাতীয় গ্রিডে পাঠানো হয়। কিন্তু আমদানি কমে যাওয়ায় ইউনিট দুটির ক্ষমতার অর্ধেক ব্যবহার না হলেও পেট্রোবাংলাকে দিনে প্রায় ২ কোটি টাকা (২ লাখ ডলার) ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। ১০০ কোটি ঘনফুটের জন্য দুই এফএসআরইউর দৈনিক রিগ্যাসিফিকেশন চার্জ প্রায় ৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা (সাড়ে ৪ লাখ ডলার)। তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জির চার্জ ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা (২ লাখ ৩৭ হাজার ডলার) এবং দেশীয় সামিট গ্র“পের এফএসআরইউর জন্য চার্জ ২ কোটি ৬ লাখ টাকা (দুই লাখ ১৭ হাজার ডলার)। সূত্র আরো জানায়, গ্যাসের ঘাটতি মেটাতে বাংলাদেশ ২০১৮ সালে এলএনজি আমদানি শুরু করে। জ¦ালানি ও বিদ্যুৎ দ্রুত সরবরাহ আইনের আওতায় বিনা টেন্ডারে দুটি কোম্পানিকে এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের কাজ দেয়া হয়। দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস রিগ্যাসিফিকেশন ক্ষমতার এক্সিলারেট এনার্জির টার্মিনালটি ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে কার্যক্রম শুরু করে। আর সামিটের টার্মিনাল অপারেশনে আসে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল। চালুর প্রথম দিকেও পাইপলাইন সীমাবদ্ধতায় দীর্ঘদিন পূর্ণ সক্ষমতায় গ্যাস নিতে না পারলেও পেট্রোবাংলাকে দুই এফএসআরইউকে পুরো চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছিল। এদিকে ক্যাপাসিটি চার্জ প্রদান প্রসঙ্গে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ¦ালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম জানান, বিনা দরপত্রে সমঝোতার মাধ্যমে ওই চুক্তিগুলো করা হয়েছে। ফলে চার্জ নির্ধারণে দেশের স্বার্থ ক্ষুণœ হয়েছে। রিগ্যাসিফিকেশন করুক বা নাই করুক পুরো চার্জ দিতেই হবে এমন শর্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তারপরও চুক্তি হয়েছে। তাতে বছর বছর শত শত কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে। প্রতিযোগিতা থাকলে এমন হওয়ার সুযোগ কম ছিল। অন্যদিকে এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, পেট্রোবাংলা চুক্তিপত্র যাচাই করে রিগ্যাসিফিকেশন চার্জ সমন্বয়ের বিষয়টি বিবেচনা করছে।