এফএনএস এক্সক্লুসিভ: মিল মালিকদের কারসাজিতে আমনের ভরা মৌসুমেও বাড়ছে চালের দাম। রংপুর—দিনাজপুর অঞ্চলে চালের দাম হঠাৎ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ৪ থেকে ৫ টাকা। পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চালের বাজার এখন সিন্ডিকেটের দখলে থাকায় বেড়েছে দাম। তবে চালের আড়তদার ও মিল মালিকদের দাবি— ধানের সংকট দেখা দেওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। রংপুরের চালের আড়তে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি ২৫ কেজি ওজনের চালের বস্তায় দাম বেড়েছে ২০০ টাকা থেকে আড়াইশ টাকা। রংপুরের চালের পাইকারি বাজারেও একই অবস্থা। ফলে খুচরা পর্যায়ে চাল কেজিতে ৩ টাকা থেকে ৪ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে এর চেয়ে কম ছিলো। বাজারে এখন মোটা জাতের স্বর্ণা চালের দাম বেড়েছে। বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৪৩ থেকে ৪৬ টাকায়। গত এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা। একইভাবে এক সপ্তাহ আগে চিকন জাতের চাল মিনিকেট ৬৯ টাকা থেকে ৭২ টাকা কেজিতে বাজারে পাওয়া গেলেও এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ থেকে ৭৩ টাকা প্রতি কেজি। রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন হাট—বাজারেও চালের দাম একইভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সিন্ডিকেটের কারসাজিতে চালের বাজারদর প্রতি ২৫ কেজি চালের বস্তা ২০০ টাকা থেকে আড়াইশ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। গ্রামের হাট—বাজারেও এখন চাল প্রতি কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। দিনাজপুর থেকে বিভিন্ন জেলায় দেশের মোট চাহিদার প্রায় ৩৫ ভাগ চাল সরবরাহ হয়। দিনাজপুরের প্রধান চালের বাজার বাহাদুর বাজারসহ বিভিন্ন হাটবাজােওর রংপুর জেলার হাট—বাজারের মতো একই হারে চালের দাম বেড়েছে। দিনাজপুরে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিআর—২৮ জাতের চাল প্রতি কেজি ৬০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা দরে, মিনিকেট চাল প্রতি কেজি ৬৮ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে প্রকার ভেদে ৭২ ও ৭৪ টাকায়, গুটি স্বর্ণা প্রতি কেজি ৫০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকা দরে। এছাড়াও কাটারি সিদ্ধ ১১০ টাকা দরে, নাজিরশাইল ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ৪ থেকে ৫ টাকা, ৫০ কেজির বস্তায় বেড়েছে ২শ থেকে ২৫০ টাকা। তবে মোটা জাতের দাম ব্যাপক বাড়লেও চিকন চালের দাম বেড়েছে সামান্য। সূত্র জানায়, মিল মালিকরা হঠাৎ চালের দাম বৃদ্ধি করায় চালের দাম বেড়েছে। মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল এনে চাল ব্যবসায়ীরা বিক্রি করে। নতুন ধান ওঠায় যেখানে দাম কমার কথা, সেখানে মিল মালিকরা হঠাৎ দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। হঠাৎ বাড়তি দামে চাল বিক্রি করতে গিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের প্রায়ই বচসা বাঁধছে। তাছাড়া চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেচাকেনা কমে গেছে। এদিকে এ ব্যাপারে দিনাজপুর জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মোসাদ্দেক হুসেন জানান, বাজারে নতুন ধান উঠেছে ঠিকই, কিন্তু প্রতিদিন বাড়ছে ধানের দাম। নতুন মোটা জাতের ধান বিক্রি কিনতে হচ্ছে প্রতি বস্তা(৭৫ কেজি) ২ হাজার ৬শ টাকা দরে। মিলগুলো ধান কিনে চাল তৈরি করে বিক্রি করে। বাজারে ধানের দাম বাড়লে মিলগুলোকেও অবশ্যই বেশি দামে চাল বিক্রি করতে হবে। না হলে মিল বন্ধ করে দিতে হবে। তাছাড়া বোরো ধান কৃষকরা ঘরে রাখতে না পারলেও আমন ধান বাড়িতে রাখতে পারে। এজন্য কৃষকরা বাড়তি দামের আশায় তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ধান বিক্রি করছে। ফলে বাজারে বেড়েছে ধানের দাম।