কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি ঃ চলতি রোপা আমন মৌসুম প্রায় শেষের পথে হলেও অনাবৃষ্টির কারনে কয়রায় কৃষকরা শেষ মহুর্তে রোপনের কাজ শেষ করতে ব্যস্ত। তবে কৃষকদের ধারনা, চলতি ভাদ্র মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগবে রোপন কাজ শেষ করতে। সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই অনেকে পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ করছেন। কেউ জমি প্রস্তুত করছেন, কেউ বীজতলা থেকে ধানের চারা তুলছে আবার কেউ ভাটিয়ালি গানের সুরে জমিতে চারা রোপন করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এবিষয় একাধিক অভিজ্ঞ কৃষক জানায়, বর্ষা মৌসুমের শ্রাবণ মাসের মধ্যে আমন ধানের চাষ রোপন কাজ শেষ না করলে শেষে অনাবৃষ্টির কারনে অনেক জমিতে ফসল কম হয়। যে কারনে উক্ত অভিজ্ঞ মহল আরও জানায়, চলতি বর্ষা মৌসুমে আষাঢ় ও শ্রাবনের মাঝামাঝি পর্যন্ত অনাবৃষ্টির কারনে কোন কৃষক মাঠে বীজতলা ফেলতে পারেনি। ফলে দেরিতে বীজ তলা ফেলায় রোপন কাজ পিছিয়ে পড়েছে। আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস নিয়ে বর্ষাকাল। এ কালের প্রথম থেকেই আকাশে ঘন কালো মেঘের ঘনঘটা ও সাথে সাথে বৃষ্টিপাত যেন চিরায়ত। আবার বৃষ্টির ধরণ কখনও গুড়িগুড়ি, কখনও ভারি ও মুষলধারে। তবে কালের বিবর্তনে ও জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের ঋতুগুলো পিছিয়ে যাচ্ছে। এদিকে ভাদ্র মাসেও বর্ষার স্বরুপ দেখা দিয়েছে। এদশে আমন চাষ হচ্ছে বৃষ্টি নির্ভর। কিন্তু চলতি বর্ষাকালে কয়রা উপজেলায় কোথাও বৃষ্টিপাত হয়নি। এদিকে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর জানায়, এ উপজেলায় ১৪৬২০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হলে তা বেড়ে ১৫৫৭০ হেক্টর জমিতে চাষ হওয়ার আশা করছেন, সে জন্য ৯৫০ হেক্টর জমিতে বীজ তলা ফেলা হয়েছে। অপর দিকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের কাছে খবর নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় অনেক উচু জমিতে আজও চাষ করা সম্ভব হয়নি। তারা আরও জানায়, চলতি ভাদ্র মাসের প্রথমে একটু বৃষ্টি হওয়ায় রোপন কাজ শুরু করেছেন। তবে, রোপন মৌসুমের শেষ সময়ে ধান রোপন করে ফসল কেমন হবে তা নির্ভর করছে বৃষ্টির উপর। এ বিষয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান জানান, দেশের উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকায় আগাম আমন ধান চাষ না করা হলে শেষে অনাবৃষ্টির কারনে জমির মাটি ও পানিতে লবণাক্ত দেখা দেয়। যে কারনে চলতি আমন মৌসুমে অনেক দেরিতে বৃষ্টি হওয়ায় চাষের কাজ অনেক পিছিয়ে গেছে। তিনি বলেন, এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় চাষের লক্ষ্যমাত্রা বেশি ধরা হয়েছিল এবং কৃষকরা বিআর-১০, ১১, ২৩, ৩০ ও ব্রিÑধান ৭৫, ৮৭ জাত বেশি পরিমাণ বীজতলা ফেলেছে। তিনি কৃষকদের সাথে একমত পোষণ করে বলেন, পিছিয়ে পড়া আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ভর করছে বৃষ্টির পানির উপর। মহারাজপুর গ্রামের কৃষক হানিফ গাজী ও খোকন ঢালী জানায়, সময়মত বৃষ্টি না হওয়ায় বীজ তলা দেরিতে ফেলায় এ বছর রোপন কাজ পিছিয়ে পড়েছে এবং আরও বৃষ্টি না হলে অনেক উচু জমিতে ধান রোপন সম্ভব নয়।