বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:১৯ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
খুলনায় গাজা সহ আটক দুই নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠানের উদ্বোধন ব্রহ্মরাজপুরে জনতা ব্যাংকের শাখা পরিদর্শনে সাতক্ষীরা উপ—মহাব্যবস্থাপক তরুণরাই যেকোনো সমাজের মূল শক্তি তারুণ্যের মেলায় জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আনন্দের একটি বিষয় —খুলনা বিভাগীয় কমিশনার জাপা নেতা সাত্তার মোড়লের জানাজায় মুসুল্লীদের ঢল বিষ্ণুপুর গাছ কাটতে গিয়ে এক শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু কালিগঞ্জে মাসিক আইন—শৃঙ্খলা কমিটির সভা আশাশুনি ইউনিয়ন বিএনপির দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ১৫ সম্মেলন পন্ড, ১৪৪ ধারা জারি কলারোয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় ট্রাকের হেলপার নিহত

আমন সংগ্রহে গতি না আসায় বাড়ছে না মজুদ

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০২৫

এফএনএস : আমন সংগ্রহে গতি না আসায় বাড়ছে না সরকারের খাদ্য মজুদ। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে চলতি আমন মৌসুমে ধান—চাল সংগ্রহের লক্ষ্য ১০ লাখ টন নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ১৭ নভেম্বর থেকে আমন মৌসুমের সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই কর্মসূচির আওতায় সরকার মাত্র ৩ লাখ ২৩ হাজার ৩৫ টন ধান—চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে। অর্থাৎ সরকার প্রায় দুই মাসে নির্ধারিত লক্ষ্যের এক—তৃতীয়াংশও সংগ্রহ করতে পারেনি। আর নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ অভিযান চলবে। ওই সময়ের মধ্যে বাকি ধান—চাল সংগ্রহ করা যাবে কিনা সে বিষয়ে খোদ খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও সন্দিহান। খাদ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারের চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে মজুদ ব্যবস্থাপনা প্রধানতম হাতিয়ার। বাজারে অস্থিতিশীলতার মুহূর্তে সরকারি মজুদ থেকে খোলাবাজারে কম দামে চাল বিক্রির মাধ্যমে বাজার ব্যবস্থাপনা স্বাভাবিক রাখার কৌশল প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু ডলার সংকট ও আন্তর্জাতিক বাজারে দামের ঊর্ধ্বমুখিতার কারণে সরকারের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতেও কার্যক্রম শুরুর দুই মাসেও লক্ষ্যের এক—তৃতীয়াংশ পূরণ করতে না পারায় চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের অবস্থানকে আরো দুর্বল করে দেয়ার বড় আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া উৎপাদন কম হওয়ায় এবার কৃষক পর্যায়ে উদ্বৃত্তও অনেক কম। এমন পরিস্থিতিতে সময় থাকতেই আমদানির মাধ্যমে ঘাটতি পূরণের উদ্যোগ না নেয়া হলে পরে যেকোনো সময় চালের বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। সূত্র জানায়, আমন মৌসুমে এবার ধান আকারে সরকারের সংগ্রহের লক্ষ্য ছিল সাড়ে তিন লাখ টন। তবে এখন পর্যন্ত ১২ হাজার টনের কিছু বেশি সংগ্রহ হয়েছে। আর সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্য সাড়ে পাঁচ লাখ টন। এর বিপরীতে হয়েছে ২ লাখ ৬৮ হাজার টন। আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্য ছিল ১ লাখ টন। এর বিপরীতে হয়েছে ৪৬ হাজার ৬০৬ টন। সব মিলিয়ে ১০ লাখ টন লক্ষ্যের বিপরীতে এখন পর্যন্ত খাদ্য অধিদপ্তর ৩ লাখ ২৩ হাজার ৩৫ টন ধান—চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে। যদিও ধান সংগ্রহের লক্ষ্য বরাবরই কিছুটা বেশি নির্ধারণ করা থাকে, যাতে কৃষক বাজার থেকে ন্যূনতম যৌক্তিক মূল্য তুলে নিতে পারে। আর চাল সরবরাহ করেন মূলত মিলাররা। সেজন্য চাল সংগ্রহের লক্ষ্যও বেশি ধরা হয়। যদিও এবার অনেক উপযুক্ত চালকল চাল সরবরাহের চুক্তি করেনি। মন্ত্রণালয় থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সূত্র আরো জানায়, এবার প্রত্যাশা অনুযায়ী আমন উৎপাদন হয়নি। সর্বোচ্চ দেড় কোটি টন উৎপাদন হতে পারে। যদিও কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর থেকে বেশি পরিমাণে উৎপাদনের তথ্য দেয়া হচ্ছে। উৎপাদন বেশি হলে বাজারে চালের দাম বাড়তো না। আবার সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারে দাম বেশি। চাতাল মালিকরা মাঠ থেকেই ধান কিনলেও সরকার এখন আর মাঠ থেকে ধান কেনে না। যে কারণে কৃষকও কয়েক মাইল ওসব ধান বহন করে কম দামে সরকারি গুদামে বিক্রি করতে আগ্রহী নয়। যে কারণে সরকারের সংগ্রহও লক্ষ্য অনুযায়ী হচ্ছে না। মজুদ কম হলে সরকারের খোলাবাজারে চাল বিক্রির সক্ষমতা কমে আসবে। সেক্ষেত্রে চালের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে এবার আমন সংগ্রহের সময় প্রতি কেজি ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩ টাকা। সেদ্ধ ও আতপ চালের ক্ষেত্রে ওই দর নির্ধারণ করা হয়েছে কেজিপ্রতি যথাক্রমে ৪৭ ও ৪৬ টাকা। এবার চালের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে গত আমন মৌসুমের তুলনায় কেজিতে ৩ টাকা বেশি। সেক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যয় গতবারের চেয়ে কেজিতে দুই—আড়াই টাকা বেশি হয়েছে ধরে নিয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বাজারে এখন ধান—চালের দাম সরকারের সংগ্রহ অভিযানের জন্য নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি। মূলত ওই কারণেই সরকার তা লক্ষ্যমাফিক সংগ্রহ করতে পারছে না। অন্যদিকে অনেক এলাকায়ই ধান সংগ্রহ কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। যদিও মিলারদের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে চালের লক্ষ্য কিছুটা পূরণ করা হয়েছে। বগুড়ায় আমন মৌসুমে ধান—চাল সংগ্রহ অভিযানে গতি কম। বগুড়ার ১২ উপজেলা মিলিয়ে ধান—চাল সংগ্রহের লক্ষ্য ধরা হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টন। চলতি বছর আমন মৌসুমে এখান থেকে সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২ হাজার ২৮৪ টন। সেখানে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার টন। আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৬১৮ টন। সেখানে সংগ্রহ হয়েছে ১ হাজার ৮১৭ টন। ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার ৬১০ টন। এর বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৮১ টন। ওই জেলায় চলতি বছর ৮৯৭ মিলারের মধ্যে ধান—চাল সংগ্রহে তালিকাভুক্ত ৬৯৭ জন। প্রায় ২০০ জন তালিকাভুক্ত হননি। মিলাররা বলছেন, বাজারে চাল ও ধানের দাম বেশি। দাম কম থাকলেও পরিবহন খরচ দিয়ে দাম বেশি পড়ে যাচ্ছে। শ্রমিকের মজুরি বেড়ে গেছে। যে কারণে সরকারের ধান—চাল সংগ্রহ অভিযানে বেশকিছু মিলার অংশ নেননি। তাছাড়া নওগাঁ জেলায় এ বছর ১৩ হাজার ৮০৪ টন ধান, ২০ হাজার ৫৭৪ টন সেদ্ধ চাল ও ৭ হাজার ৬২৫ টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলার ২০টি খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহের জন্য ৩০০টি হাসকিং ও ৬২টি অটোমেটিক রাইস মিলের মালিকরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এরই মধ্যে ১২ হাজার ৪১৩ টন সেদ্ধ ও ৬ হাজার ৬৫ টন আতপ চাল সংগ্রহ হয়েছে। তবে খোলাবাজারে দাম বেশি থাকায় মাত্র এক টন ধান সংগ্রহ করা গেছে। আরকুষ্টিয়া জেলায় চাল সংগ্রহ লক্ষ্যের বিপরীতে ৫৯ শতাংশ অর্জন হয়েছে। রাজবাড়ী জেলায় এখন পর্যন্ত ধান সেভাবে সংগ্রহ করা যায়নি। তাছাড়া গত অর্থবছরে দেশে কোনো চাল আমদানি হয়নি। তবে সরকারের এবার পাঁচ লাখ টন চাল আমদানির লক্ষ্য রয়েছে। বেসরকারিভাবে প্রায় চার লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হলেও নির্ধারিত সময়ে চাল আমদানি না হওয়ায় দুই দফা ওই অনুমোদনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। বর্ধিত অনুমোদনের মেয়াদ আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তাছাড়া সরকারিভাবে জিটুজি ভিত্তিতে এক লাখ টন চাল আমদানির কথা রয়েছে। তবে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে দেশে চাল আমদানি হয়েছে মাত্র দেড় লাখ টনের মতো। বাজার স্থিতিশীল রাখতে এখন চাল আমদানিতে উৎসাহিত করছে বর্তমান সরকার। সেজন্য শুল্কহার ব্যাপক মাত্রায় নামিয়ে আনা হয়েছে। এরই মধ্যে তা ৬২ থেকে মাত্র ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু দেশে চাল আমদানিতে এখনো তেমন কোনো গতি দেখা যাচ্ছে না। সার্বিক বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের সংগ্রহ বিভাগের পরিচালক মো মনিনজ্জিামান জানান, মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত ধান—চাল সংগ্রহ অভিযান পরিচালনা করা হবে। সুতরাং আরো প্রায় দুই মাস সময় পাওয়া যাবে। ওই সময়ের মধ্যে লক্ষ্যের কাছাকাছি চলে যাওয়া যাবে। আর যেটুকু বাকি থাকবে তা আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হবে। বন্যায় প্রায় ৮—১০ লাখ টন উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই ১০ লাখ টন চাল আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাঁচ লাখ টনের টেন্ডার হয়ে গেছে। ৫০ হাজার টন এসে গেছে। চলতি মাসে আরো এক লাখ টন আসছে। মিয়ামনমার, ভিয়েতনাম ও পাকিস্তানের সঙ্গে চাল আমদানি নিয়ে কাজ চলছে। তবে পৃথিবীর সব দেশের তুলনায় দেশের বাজারে চালের দাম কম থাকায় বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি বাড়ছে না।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com