শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:১০ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
আটুলিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্বশীল শিক্ষা শিবির অনুষ্ঠিত শ্যামনগরে ইয়াবা ও নগদ টাকা সহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার দেবহাটা পুলিশের আনন্দ আয়োজনের ব্যাটমিন্টন খেলার ফাইনাল অনুষ্ঠিত প্রাথমিকের শিক্ষকদের যমুনা অভিমুখে পদযাত্রায় পুলিশের বাধা সেচ সংকোচন সিদ্ধান্তে বরেন্দ্র অঞ্চলের অর্ধেক জমিতে বোরোর আবাদ হবে না রাবিতে বহিরাগত শিক্ষার্থীর মৃত্যু পরিবারের দাবি পিটিয়ে হত্যা জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ৭ জনকে পাঠানো হলো সিঙ্গাপুরে হাসিনার আমলে উচ্চ প্রবৃদ্ধির বিষয়টি ভুয়া রয়টার্সকে ড. ইউনূস মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মবার্ষিকী আজ পাগলের প্রলাপের মতো গুজব ছড়ানো হচ্ছে, আমরা ভালো আছি: আসিফ নজরুল

আমরা পেছনকে পেছনে ফেলে দিতে চাই: জামায়াত আমির

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০২৫

এফএনএস: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা পেছনকে (অতীত) পেছনে ফেলে দিতে চাই। আমরা প্রতিহিংসার পক্ষে না। এখন জাতি সামনে এগোতে চায়। জাতিকে সামনে এগোতে হলে সিসাঢালা প্রাচীরের ঐক্য লাগবে। গতকাল শুক্রবার সকালে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় আমিরের উপস্থিতিতে এই সম্মেলন ছিল জেলায় প্রথমবারের মতো উন্মুক্ত স্থানে জামায়াতের কর্মী সম্মেলন। হাজারো নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে সকাল ৯টায় সম্মেলন শুরু হয়ে বেলা ১২টায় শেষ হয়। ৪০ মিনিটের বক্তব্যে জামায়াতের আমির পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলজুড়ে হওয়া বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড এবং জুলুম—নিপীড়নের শিকার জনতার প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন তিনি। সবাইকে ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়ে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিও জানান। মক্কা বিজয়ের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে জামায়াতের আমির বলেন, সেদিন রাসুল (সা.) সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু নিরীহ মানুষকে খুনকারী কিছু খুনির নাম ধরে তাদের খুনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। খুন কখনও মাফ হয় না। আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি খুনের বিচার চাই। শুধু আমাদের নেতৃবৃন্দ না, আমাদের কর্মী না। যত মানুষকে অন্যায়ভাবে খুন করা হয়েছে সবার বিচার চাই। এক এগারোর সরকার আওয়ামী লীগ এনেছিল অভিযোগ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘মঈনুদ্দিন—ফখরুদ্দিনের সব অপকর্মের দায়মুক্তির ওয়াদা করে তারা ক্ষমতায় বসে। ক্ষমতা গ্রহণের পর পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে নারকীয় হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে হত্যার যাত্রা শুরু করে। এরপর ক্ষুধার্ত আওয়ামী লীগ জাতীয় সম্পদ চুরি শুরু করলো। সর্বত্র চাঁদাবাজি—লুটপাট। ঘুষের মাত্রা বাড়িয়ে দিলো। তাদের অর্থমন্ত্রী বললো, এটা ঘুষ না, স্পিড মানি। শিক্ষামন্ত্রী বললো, আমার মন্ত্রণালয়ে তোমরা ঘুষ খাইয়ো কিন্তু একটু কমাইয়া খাইয়ো। তারা শিক্ষিত নাকি কুশিক্ষিত আল্লাহই ভালো জানেন। বিএনপিসহ সমসাময়িক রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনা করে জামায়াত আমির বলেন, একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক সংগঠন জামায়াতের দিকে হাত বাড়ালো। যখন বিপদ আসলো তখন আমাদের রাজনৈতিক বন্ধুদের অনুরোধ করেছিলাম, বিপদের ঢেউ জামায়াত পর্যন্ত এসে থামবে না। এই ঢেউ সবাইকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে যদি সম্মিলিতভাবে ঠেকাতে না পারি। আমাদের আহাজারি বোঝাতে পারিনি, শোনাতে পারিনি। একের পর এক প্রতিহিংসামূলক রায়ের মাধ্যমে আদালতকে ব্যবহার করে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে ফাঁসিতে ঝোলানো হলো। বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের মানুষের আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস স্মরণ করে জামায়াত আমির বলেন, দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিজমকে বিদায় করতে গিয়ে একটা মানুষ শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের ইতিহাসে তার নামটা লেখা হয়ে গেছে। এই সন্তানটাও বৃহত্তর রংপুরের। তার নাম আবু সাঈদ। সে আমাদের বিপ্লবের প্রতীক। আমাদের নেতা, আমাদের সিপাহসালার, আমাদের বীর সেনাপতি। তার রাস্তা ধরে এবার যারাই জীবন দিয়েছেন, মহান রবের দরবারে দোয়া করি– আল্লাহতায়ালা সবাইকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন। কুড়িগ্রামের রৌমারীর বড়াইবাড়ি সীমান্তে বিএসএফের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর সাহসী প্রতিরোধ ভূমিকার প্রশংসা করে জামায়াত আমির বলেন, যে যুদ্ধটা আপনারা রাতের অন্ধকারে করে শিক্ষা দিয়েছিলেন, সেই শিক্ষার প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছিল বিডিআরের পিলখানা হত্যাকাণ্ডে। কিন্তু আপনাদের গর্বিত ইতিহাস এখনও চকচক করছে। জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ডা. শফিকুর বলেন, যারা পঙ্গু হয়েছে তাদের আমরা যেন গর্বের সঙ্গে সম্মান করতে পারি, শ্রদ্ধার সঙ্গে বুকে ধারণ করতে পারি। আমরা শহীদের কোনও দলীয় সম্পত্তিতে পরিণত করতে চাই না। শহীদ এবং পঙ্গু সবার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু এই ঋণগুলো শোধ করার শক্তি জাতির নেই। তবে যে কারণে তারা শহীদ হয়েছেন আমরা তাদের কথা দিচ্ছি, আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে কথা দিচ্ছি– দুর্নীতিমুক্ত, সুষম, বৈষম্যহীন, মানবিক বাংলাদেশ না গড়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ। উপস্থিত জনতার উদ্দেশে হাতজোড় করে জামায়াত আমির বলেন, বিনয়ের সঙ্গে সবাইকে বলছি, শহীদদের আকাঙ্ক্ষার বাইরে যায়, এমন কাজ দয়া করে কেউ করবেন না। জুলাই—আগস্ট অভ্যুত্থানে ছাত্র—জনতার স্লোগান ‘আবু সাঈদ—মুগ্ধ/ শেষ হয়নি যুদ্ধ’ উচ্চারণ করে তিনি বলেন, হ্যঁা যুদ্ধ সেদিনই শেষ হবে যেদিন মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে। তার আগ পর্যন্ত এই যুদ্ধ ইনশাআল্লাহ চলবে। আমরা সমাজে অনাচার হলে তার প্রতিবাদ করবো। অনাচার যিনি রবেন তার ব্যাপারে আমরা মুখ বন্ধ করে থাকবো না। আমরা এ জন্যই রাজনীতি করি। সংখ্যালঘু শব্দ ব্যবহারে আপত্তি জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, আমরা তেমন করে কাউকে বিবেচনা করতে চাই না। এই দেশ আমাদের সবার। আমরা সবাই এই দেশের নাগরিক। সংখ্যালঘু শব্দ ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ ফায়দা হাসিল করার চেষ্টা করেছে। অতীতে সবকিছুর জন্য জামায়াতকে দায়ী করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ১৯৭২ সাল থেকে শুরু করে ২০২৫ সালের বর্তমান সময় পর্যন্ত এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় কারা এ দেশের বিভিন্ন ধর্মের মানুষকে জুলুম অত্যাচার করেছে, তাদের জমি দখল করেছে, ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করেছে, সম্পদ লুণ্ঠন করেছে, তাদের ইজ্জতে হাত দিয়েছে– এই দুষ্কৃতকারীদের তালিকা প্রস্তুত করে জনগণের সামনে প্রকাশ করা হোক। জনগণ জানুক তারা কারা। খুনি—ধেঁাকাবাজ কে? জনগণ তা জানতে চায়। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সমালোচনা করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, কথায় কথায় আমাদের হাতে টিকিট ধরিয়ে দিতো। অমুক দেশে চলে যাও, তমুক দেশে চলে যাও। তো তোমরা বিনা টিকিটে অন্য দেশে চলে গেলে কেন? এই দেশই যদি তোমাদের দেশ হয়, মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে! প্রমাণ করতা তোমরা দোষী বা নির্দোষ! জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা নিজাম উদ্দিনের সঞ্চালনা ও জেলা আমির মাওলানা আব্দুল মতিন ফারুকীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন– কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কর্ম পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন ও অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলালসহ জেলা নেতৃবৃন্দ। পরে জামায়াতের আমিরসহ নেতৃবৃন্দ সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের শিকার ফেলানী খাতুনের বাবা—মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে নাগেশ্বরীর রামখানা ইউনিয়নে তাদের বাড়িতে যান।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com