রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:০৪ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
কলারোয়ার তুলসীডাঙ্গায় বিএনপির মতবিনিময় সভা শ্যামনগরে ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির নির্বাচনে সভাপতি আসাদুল্লাহ, সম্পাদক হাফিজুর ব্রহ্মরাজপুরে সেলুন মালিক কল্যাণ সমিতির কমিটি গঠন সভাপতি শম্ভু সম্পাদক মানিক সাতক্ষীরা জেলা চিংড়ি পোনা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সভা সাতক্ষীরা স্কাউটস্ ত্রৈ—বার্ষিক কাউন্সিল কমিশনার শাহজাহান সম্পাদক মনোরঞ্জন পুরাতন সাতক্ষীরা সরলাপাড়া যুব সংঘের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিল পীরমাতা ব্লাড ব্যাংক নলতা শরীফ’র প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও মিলন মেলা অনুষ্ঠিত আশাশুনির খাজরা ও বড়দল সীমান্তে কালকী স্লুইস গেট পরিদর্শনে রবিউল বাশার শ্যামনগরে মটর সাইকেল দূর্ঘটনায় চালক নিহত ও আহত ১ কালিগঞ্জে সু—নাগরিকের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ

আমার লক্ষ্য দেশবাসীর ভাগ্য পরিবর্তন করা: প্রধানমন্ত্রী

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ৩ জুলাই, ২০২৩

এফএনএস: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, তার লক্ষ্য দেশবাসীর ভাগ্য পরিবর্তন করা। ঈদুল আজহা উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ার সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা ও মতবিনিময়কালে তিনি সূচনা বক্তব্যে বলেন, আমার লক্ষ্য বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু দেশবাসীর মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন যার জন্য তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ হত্যা এবং একই বছরের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দেশের অগ্রগতি থামিয়ে দেওয়ার জন্যই এই হত্যাকাÐ চালানো হয়। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকে এমন সময়ে হত্যা করা হয়েছিল যখন দেশ অর্থনৈতিক মুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ‘মাই হাউস, মাই ফার্ম’, কমিউনিটি ক্লিনিক, ডিজিটাল বাংলাদেশ, ‘মাই ভিলেজ, মাই টাউন’ বাস্তবায়ন এবং শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়ে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া আসনের সংসদ সদস্য শেখ হাসিনা তার নির্বাচনী এলাকার জনগণকে কৃতিত্ব দিয়ে বলেন, তারা তার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তাকে আরও সময় দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, সাধারণত অন্যান্য নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যরা শুধুমাত্র তাদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার দেখাশোনা করেন। আমাকে ৩০০টি নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়নের জন্য কাজ করতে হয়। কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়ার বাসিন্দারা তার নির্বাচনী এলাকার দায়িত্ব নেয়ায় আমি তা করতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশবাসীর ভাগ্য পরিবর্তনে ছয় বছরের নির্বাসন থেকে দেশে ফেরার পর তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের এমন কোনো অঞ্চল নেই যেখানে আমি যাইনি। আমি নৌকা, সাম্পান, লঞ্চ ও রিকশা-ভ্যানে চড়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমি এমনভাবে দেশ ভ্রমণ করেছি এবং সারা দেশে ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে বাংলাদেশকে এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে এসেছি। মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়ার উন্নয়ন নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের অভিজ্ঞতা শুনতে চান। শেখ হাসিনা বার্ধক্যজনিত কারণে অবসরে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করলে স্থানীয় জনগণ তাকে দেশ ও জনগণের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকার অনুরোধ জানান। তারা শেখ হাসিনাকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখার আকাক্ষা ব্যক্ত করেন। শেখ হাসিনাই দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন এ লক্ষ্যে কাজ করার এবং আগামী সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সাহায্য করার দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। এ সময় বাংলাদেশ সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে বরদাস্ত করব না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি খুব ভালো, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা সেই নীতিই মেনে চলি। কিন্তু আমাদের উন্নয়নে বা আমাদের অগ্রযাত্রায় কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করুক, সেটা আমরা চাই না, সেটা আমরা বরদাস্ত করব না। বিরোধীদের বিদেশিদের কাছে অভিযোগ করার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, যাদের নিজের মাটিতে খুঁটায় জোর থাকে না, নিজের দেশের মানুষের আস্থা-বিশ্বাস যাদের থাকে না, দেশের মানুষের কল্যাণ করতে পারে না; ওই তারাই যেয়ে ওখানে… আর নালিশ। আর ওই সোশ্যাল মিডিয়াতে নানা কথা, গুজব ছড়ানো ওই তারা করে বেড়ায়। তিনি বলেন, কিছু লোক আছে, কথায় কথায় নালিশ করে, তো নালিশ করে কী হয়, ওই যে কথায় আছে না নালিশ করে বালিশ পাবে। ওরা কিন্তু ওটাই পাওয়ার যোগ্য। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের মাটি ও মানুষের সংগঠন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন। এই সংগঠন দিয়ে তিনি দেশকে স্বাধীন করেছেন। এই সংগঠন দিয়ে তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলেছিলেন। বিএনপি-জামায়াত যাতে আবার ক্ষমতায় আসতে না পারে সে জন্য নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহŸান জানিয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীরা যদি আবার ক্ষমতায় আসে, আবার এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে, দেশের সর্বনাশ করে দেবে। কাজেই সেটা যেন তারা করতে না পারে সে জন্য সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। আমরা চাই আমাদের দেশে এগিয়ে যাক। বিএনপির কাছে ক্ষমতা মানে ‘অর্থ বানানোর মেশিন’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, এদের কাছে রাজনীতি বলে কিছু নেই, ক্ষমতা হচ্ছে তাদের অর্থ বানানোর মেশিন, ক্ষমতা হচ্ছে জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা। বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে কেউ যেন আর ছিনিমিনি খেলতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকার আহŸান জানান প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি জামায়াতের যে সন্ত্রাসী রূপ, এটাতে এদেশের মানুষ দেখেছে। তারা দেশের কোন উন্নতি না, নিজের অর্থ-সম্পদ গড়েছে, বিদেশে পাচার করেছে, খালেদা জিয়ার ছেলেদের পাচার করা ৪০ কোটি টাকা আমরা ফেরতও এনেছি। ওই অর্থ পাচার, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, মানুষকে গুম করা, ভোট চুরির জন্য ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরি করা, এই সমস্ত অপকর্ম তারা করে গেছে। বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, কানাডার ফেডারেল কোর্ট এই কথাই বলেছিল যে বিএনপি একটা সন্ত্রাসী সংগঠন। ওই সন্ত্রাসী সংগঠনের কোনো অধিকার নেই বাংলাদেশের মানুষ নিয়ে কথা বলার। বিএনপির হাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতিত হওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ এ ক্ষমতায় এসে হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টান কেউই বাদ যায়নি তাদের অত্যাচার নির্যাতন থেকে। মানুষকে গুলি করে মারা, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে মারা, চোখ তুলে নেওয়া, হাত কেটে নেওয়া, এমন কোনো সন্ত্রাসী কাজ নাই বিএনপি না করেছে। বিএনপি-জামায়াত সরকার আমল এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনের সময়কার বিভিন্ন হত্যাকাÐ এবং সন্ত্রাসে জড়িতদের বিচার নিশ্চিতে আওয়ামী আইনজীবীদের কাজ করার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। শেখ হাসিনা বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ পুড়িয়ে মারা, পুলিশ মারা, বিভিন্ন সময় আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা করা, বহু আসামি এখন ঘুরে বেড়ায়। এরা যেন ঘুরে বেড়াতে না পারে। এদের যেন যথাযথ শাস্তি হয়। এদের যেন বিচার হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফিউজিটিভ (পলাতক) হয়ে ওই লন্ডনে বসে এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় বড় বড় কথা বলে। চোরের বড় গলা কথায় আছে, সেই চোরের বড় গলাই আমরা শুনি। এত সাহস থাকলে বাংলাদেশে আসে না কেন? তা তো আসতে পারে না। ওই সাহস তো দেখাতে পারে না। শেখ হাসিনা বলেন, ১০ ট্রাক অস্ত্র, একুশে আগস্ট গেনেড হামলা করে আমাদের হত্যার চেষ্টা, আইভী রহমানসহ আমাদের ২২ জন নেতাকর্মী হত্যা করেছে, মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি এমন কোনো অপকর্ম নেই যে না করে গেছে। আজকে সাজাপ্রাপ্ত, পলাতক। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণের প্রত্যয় পুর্নব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার দোয়া-আশীর্বাদ চাই, আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা এটাই আমাদের লক্ষ্য। আমার বাবা যে কাজটা শুরু করেছিলেন সেটা সম্পন্ন করা। শেখ হাসিনা বলেন, আমিও আমার বাবার মতো জীবনটা উৎসর্গ করেছি, এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে। তিনি বলেন, আজকে সেই কষ্ট-ব্যথা বুকে নিয়েই আমার প্রতিজ্ঞা হচ্ছে, এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে যেন আর কখনো কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে, এদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত সমৃদ্ধ একটি জাতি। মতবিনিময়কালে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধিরা টুঙ্গিপাড়ার বিভিন্ন উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মতবিনিময় সভায় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ আবুল বশার খায়ের। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল শেখ। এর আগে গোপালগঞ্জে দুই দিনের সফরের অংশ হিসেবে গত শনিবার সকালে গণভবন থেকে সড়ক পথে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া যান। সেখানে তিনি নবনির্মিত কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় উদ্বোধন করেন এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। কোটালীপাড়ার কর্মসূচি শেষে দুপুরের পর বঙ্গবন্ধুকন্যা টুঙ্গিপাড়ার নিজের গ্রামের বাড়িতে যান এবং রাতে সেখানে অবস্থান করেন। সফরের দ্বিতীয় দিন টুঙ্গিপাড়ার কর্মসূচি শেষে বিকেলে গণভবনে ফিরে আসেন প্রধানমন্ত্রী। এ সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন তার ছেলে ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com