শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ১২:৩৬ অপরাহ্ন

আশাশুনির গর্ব উশু ও কাবাডি খেলোয়াড় কচি রাণী মন্ডল

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

এম এম নুর আলম \ আশাশুনি উপজেলার গর্ব বাংলাদেশ জাতীয় ও আনসার দলের কাবাডি এবং উশু খেলোয়াড় কচি রাণী মন্ডল। ইতিমধ্যে তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ দু’টি খেলায় অংশ নিয়ে জিতেছেন সাতবার স্বর্ণপদক, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদকসহ অসংখ্য পুরষ্কার। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাবাডি ও উশু খেলোয়াড় হিসাবে রয়েছে তার যথেষ্ট সুখ্যাতি। জানাগেছে, আশাশুনি উপজেলা সদরের প্রয়াত শিক্ষক অমল কৃষ্ণ মন্ডলের মেয়ে কচি রাণী মন্ডল ২০০৭ সালে আশাশুনি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। তিনি ছোট বেলা থেকেই তার বাবা মায়ের অনুপ্রেরণায় খেলাধুলার প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। স্কুল জীবনের বিভিন্ন সময়ে তিনি স্থানীয়, ও আঞ্চলিক পর্যায়ে বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশগ্রহন করে পেয়েছিলেন অনেক পুরষ্কার। তিনি ৮ অক্টোবর ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আনসার ব্যাটেলিয়ান এর সিপাহী হিসাবে যোগদান করেন। এরপর তিনি ২০১০ সালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। এদিকে, চাকরিতে বাংলাদেশ আনসার একাডেমী, গাজীপুর থাকাকালে ২০১০ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশ আনসার দলের হয়ে কাবাডি খেলা শুরু করেন। ঐ বছরেই তিনি জাতীয় কাবাডি দলে ডাক পেয়ে চিনে অনুষ্ঠিত এশিয়ান কাবাডি গেমস এ বাংলাদেশ দলের হয়ে অংশ নেন। ঐ টুর্ণামেন্টে বাংলাদেশ দল ব্রোঞ্জপদক অর্জন করেন। এরপর ২০১২ সালে বীজ কাবাডি টুর্ণামেন্টে চিনে বাংলাদেশ দলের হয়ে অংশ নেন। ঐ টুর্ণামেন্টেও বাংলাদেশ দল ব্রোঞ্জপদক অর্জন করেন। এছাড়াও ২০১২ সালে প্রথম মহিলা কাবাডি বিশ্বকাপে ভারতে বাংলাদেশের হয়ে অংশগ্রহন করেন আশাশুনির মেয়ে কচি। ঐ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দল পঞ্চম স্থান অধিকার করেন। এরপর ২০১৮ সালে তিনি ইন্দোনেশিয়ায় এশিয়ান গেমস কাবাডিতে বাংলাদেশের হয়ে অংশগ্রহন করেন। শুধু কাবাডিতে থেমে থাকেনি আশাশুনির মেয়ে কচির স্বপ্ন। তিনি ২০১৩ সাল থেকে আনসার দলের হয়ে উশু খেলা শুরু করেন। এ দু’টি খেলায় অংশ নিয়ে কমপক্ষে সাতবার জিতেছেন স্বর্ণপদক। এছাড়াও তিনি আরও পদক ও পুরষ্কার জিতে গড়েছেন কৃতিত্ব। তিনি ২০১৩ সালে ভারতে বঙ্গবন্ধু কাপ কাবাডি খেলায় স্বর্ণপদক পান। ২০১৪ সালে অষ্টম বাংলাদেশ গেমস এ উশুতে স্বর্ণপদক জিতে নেন। ২০২১ সালে নবম বাংলাদেশ গেমস এ অংশ নিয়ে তিনি আনসার দলের হয়ে উশু খেলায় জিতে নেন স্বর্ণপদক। এছাড়াও সর্বশেষ তিনি ২০২২ সালের ২৭-২৮ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত ১৬তম জাতীয় উশু চ্যাম্পিয়নশীপে (মিরপুরের শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে) অংশ নিয়ে সেখান থেকেও সানদা ৭০ কেজি ওজন শ্রেণীতে স্বর্ণপদক জিতেছেন। জাতীয় উশুতে ২০১৩ সাল থেকে নিয়মিত অংশ নেয়া ২৯ বছর বয়সী আশাশুনির মেয়ে কচির এটি সপ্তম স্বর্ণ জয়। আশাশুনির মেয়ে হলেও তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে কাবাডি ও উশু খেলায় অংশ নিয়ে দেশের সুনাম বয়ে এনেছেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ আনসার দলের হয়ে দেশের মাটিতে বহু কাবাডি টুর্ণামেন্ট ও উশু খেলায় অংশ নিয়ে আনসার দলকে নিয়ে গেছেন এক অন্যান্য উচ্চতায়। কাবাডি খেলোয়াড় হিসেবে এশিয়ান গেমস, বিশ্বকাপ, বিচ এশিয়ান গেমস এবং বাংলাদেশ গেমসে খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কচি খেলোয়াড় হিসেবে বিশেষ অবদান রাখায় নিজ সংস্থা আনসারের কাছ থেকে ২০১২ সালে পেয়েছেন বিশেষ পুরস্কার। এছাড়াও কাবডি ও উশুতে বিভিন্ন সময়ে জিতেছেন স্বর্ণপদক, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদকসহ অসংখ্য পুরষ্কার। এক মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের জননী কচি রাণী মন্ডল বর্তমানেও বাংলাদেশ আনসার একাডেমী, গাজীপুর এ কর্মরত আছেন। ২০১৪ সালে তার বিয়ে হয় কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার আলিয়াবাদ গ্রামে। তার স্বামী পার্থ সারথী সাহা আগে মহিলা অধিদপ্তরের চাকুরী করলেও বর্তমানে তিনি একজন ব্যবসায়ী। আশাশুনির প্রয়াত শিক্ষক অমল কৃষ্ণ মন্ডলের ছয় মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে কচি ৫ম। খেলোয়াড় হিসাবে এ অর্জনে রয়েছে তার নিজ সংস্থা আনসার এর কর্মকর্তাবৃন্দ, বাবা, মা, শ্বশুর, শ্বাশুড়ী ও স্বামীর বিশেষ অবদান। সব সময় তারা তাকে সাহস ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। আশাশুনির গর্ব কৃতি খেলোয়াড় কচি রাণী মন্ডল দৈনিক দৃষ্টিপাতকে জানান, সাতবার স্বর্ণ জিততে পেরে আমি দারুণ খুশি। বলতে পারেন জেতার ব্যাপারে আমার ওভার কনফিডেন্স ছিল। এর জন্য বিভিন্ন সময়ে কঠোর অনুশীলন করেছি। তিনি আরও জানান, তার ছেলে সন্তান হওয়ার পর এই সাফল্যে ধরে রাখতে তাকে ৮/১০ কেজি ওজন কমাতে হয়েছে। শীতের সময় যেটা অনেক কষ্টসাধ্য। তিনি বলেন, ২৭-২৮ দিন ভাতই খাইনি! শুধু সবজি খেয়েছি। বিভিন্ন সময়ে উশু ও কাবাডিতে সাফল্য পাওয়ার জন্য সাড়ে পাঁচ বছরের মেয়ে ধরিত্রী সারথী এবং আড়াই বছর বয়সী ছেলে শ্যাম সুন্দরকে ওদের বাবার কাছে রেখে দিনের পর দিন খেলতে হয়েছে। ছোট ছেলেটা প্রায়ই কান্না করে বলত, “আমি মায়ের কাছে যাব”! ওদের ছেড়ে খেলতে গিয়ে আমার অনেক কষ্ট হতো। তারপরও মনকে শক্ত করে খেলেছি। সেটারই ফল পেয়েছি। কচি বলেন, উশুতে স্বর্ণপদক জেতার জন্য অনেক কষ্ট করেছি। কাবাডিতেও সাফল্য পেতে কম কষ্ট করিনি। আমার সেই কষ্ট সার্থক হয়েছে। আশাশুনির এই মেয়ে জানান, আশাশুনিবাসীর সহযোগিতা পেলে বা তারা চাইলে উপজেলার আগ্রহী খেলোয়াড়দের তত্বাবধায়ন করে বিভিন্ন পর্যায়ে কাবাডি ও উশু খেলোয়ার হিসাবে তিনি ছড়িয়ে দিতে চান। তিনি আরও বলেন, আমার উপজেলার তরুন প্রতিভা খুঁজে বের করে যদি প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন স্তরে কাবাডি এবং উশু খেলোয়োর হিসাবে স্থান করিয়ে দিতে পারি সেটাই হবে আমার স্বার্থকতা। এসময় তিনি বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা কাবাডি দল ও আনসার মহিলা কাবাডি দল এবং উশু খেলোয়াড়দের জন্য সকলকে দোয়া ও আর্শিবাদ করার আহবান জানান।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com