রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৬ অপরাহ্ন

আসন্ন শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে না বিনামূল্যের সব পাঠ্যবই

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

এফএনএস : আসন্ন শিক্ষাবর্ষের শুরুতে শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যের সব পাঠ্যবই পাবে না। মূলত শিক্ষাক্রম পরিবর্তন, বই পরিমার্জন, নতুন দরপত্র দেয়াসহ ছাপাসংক্রান্ত কাজে বিলম্বের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার অগ্রগতি ভালো হলেও চতুর্থ থেকে নবম—দশম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপা শুরুর প্রক্রিয়াগুলো পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। বিগত ২০১০ সাল থেকে দেশে উৎসব করে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেয়ার রেওয়াজ শুরু হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব নতুন বই দেয়া যায়নি। আর এবার উৎসব করে পাঠ্যবই দেয়া হবে না। এবার বিনামূল্যে বিতরণের জন্য প্রাক্—প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত মোট পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা ৪০ কোটির বেশি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ওসব পাঠ্যবই প্রণয়ন ও ছাপার কাজের দায়িত্বে রয়েছে। এনসিটিবি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাক্—প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১০ কোটি বই ছাপা হয়ে যাবে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির বইও ছাপা শুরু হয়েছে। আর নবম—দশম শ্রেণির বই ছাপার বিষয়ে ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। খুবই দ্রুত ছাপার কার্যাদেশ দেয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে মাধ্যমিকের বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের বই আগে ছাপানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এভাবে প্রাথমিকের ১০ কোটি এবং মাধ্যমিকের প্রায় ১০ কোটি মিলিয়ে মোট ২০ কোটি বই ১ জানুয়ারির মধ্যে দেয়া যাবে। আর বাকি বই পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে ছাপা হয়ে যাবে। সূত্র জানায়, বিনামূল্যে বিতরণের জন্য এবার প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ কোটি। সেগুলোর ছাপার কাজ চলছে। এনসিটিবির লক্ষ্য হলো, ওসব বই ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে ছাপা শেষ করা। আর চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবই চার কোটিরও বেশি। ওসব বই ছাপার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। সাধারণত চুক্তির পর প্রায় দেড় মাসের মধ্যে বই ছাপিয়ে দিতে বলা হয়। তবে প্রাথমিকের স্তরে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় দুই লাখ পাঠ্যবই ছাপার কাজ চলছে। এছাড়া প্রাক্—প্রাথমিকের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা ৬২ লাখের মতো। তাছাড়া ষষ্ঠ থেকে নবম—দশম শ্রেণির জন্য এবার মোট বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৩১ কোটি। এর মধ্যে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার কার্যাদেশ দেয়ার পর এখন চুক্তির কাজ চলছে। তবে কার্যাদেশের পর কাজ শুরু করতে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয় না। তাছাড়া নবম—দশম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার কাজের জন্য অর্থের বিষয়ে সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সূত্র আরো জানায়, বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপার গুণ—মান দেখার জন্য এনসিটিবি ও মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের বাইরে আলাদা পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান কাজ করে। দরপত্রের মাধ্যমে পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান ঠিক করা হয়। মাধ্যমিকে এবার পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান ঠিক করতে দেরি হয়েছে। যদিও চলতি বছর পর্যন্ত প্রথম থেকে তৃতীয় এবং ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম চলেছে। বাকি শ্রেণিগুলোতে আগামী বছর নতুন শিক্ষাক্রম চালুর কথা ছিলো। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার নতুন শিক্ষাক্রম বাদ দিয়ে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যবই পরিমার্জন করে ছাপানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ওই প্রক্রিয়ায় বই পরিমার্জনের কাজ ও কিছু ক্ষেত্রে নতুন করে দরপত্রের কারণে ছাপার কাজে কিছুটা দেরি হচ্ছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ধারণার চেয়েও ছাপার কাজ শেষ হতে আরো বেশি দিন লাগতে পারে। এদিকে বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপা বিষয়ে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান জানান, এবার বিভিন্ন কারণে ছাপার কাজ দেরিতে শুরু হয়েছে। আবার কাগজের সংকটও আছে। আশা করা যাচ্ছে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির বই শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগে শতভাগ দেয়া সম্ভব হবে। আর চতুর্থ থেকে নবম—দশম শ্রেণিতে কয়েকটি করে পাঠ্যবই দিয়ে শিক্ষাবর্ষ শুরু করার ব্যবস্থা করতে এনসিটিবিকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এনসিটিবি তা বিবেচনা করছে। অন্যদিকে অতীতে দেখা গেছে বছরের শেষ সময়ে একশ্রেণির মুদ্রণকারী নিম্নমানের পাঠ্যবই দেয়ার পাঁয়তারা করে থাকে। এবারও এমন অভিযোগ উঠেছে। যেমন নতুন করে ছাপা দ্বিতীয় শ্রেণির একটি পাঠ্যবইয়ে এক পৃষ্ঠার ছবি আরেক পৃষ্ঠায় দেখা যায়। আবার কাগজের নির্ধারিত পুরুত্ব ও উজ্জ্বলতা অনুযায়ী সব বই পাওয়া যাবে কি না তা নিয়েও শঙ্কা আছে। এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান এ কে এম রিয়াজুল হাসান জানান, ইতিমধ্যে কয়েকটি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের ৬০—৭০ হাজারের মতো বই বাতিল করা হয়েছে। মানের বিষয়ে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com