শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৯ অপরাহ্ন

আসাদ বাহিনীর নির্বিচার হত্যা, ভিডিও ফাঁস!

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বুধবার, ৮ জুন, ২০২২

এফএনএস বিদেশ : নয় বছর আগের ছয় মিনিটের একটি ভিডিও খুব সাড়া জাগিয়েছে। দুই সিরীয় যোদ্ধাকে চোখ বাঁধা, নিরস্ত্র মানুষদের হত্যা করতে দেখা গেছে সেই ভিডিওতে। খবর ডয়চে ভেলে। ওয়াসিম সিয়াম ২০১৩ সালের ১৪ এপ্রিল নিজের বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। এরপর আর দামেস্কে নিজেদের বাড়িতে ফেরেননি তিনি। ৩৪ বছর বয়সি ওয়াসিমের কাজ ছিল তাদামোন শহরের দক্ষিণাঞ্চলের এক সরকারি বেকারিতে ময়দা পৌঁছে দেয়া। সেদিন সেই কাজেই বেরিয়েছিলেন। ধারণা করা হয়, ময়দা পৌঁছে দিতে ঘর থেকে বের হয়ে কোনো এক সেনা ছাউনির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আটক করা হয় তাকে। ওয়াসিম ঘর থেকে বের হবার সময় যেই সাদা টি-শার্ট আর জিন্স পরেছিলেন, ছয় মিনিটের ভিডিওতে ঠিক সেই পোশাকেই দেখা যায় তাকে। তবে ভিডিওতে তাকে চেনা খুব কঠিন হয়ে পড়েছিল। ওয়াসিমের বোন তাসনিম জানান, নিজের ভাইকে দেখে প্রথমে তিনি চিনতেই পারেননি। ওয়াসিমকে প্রথম শনাক্ত করেন তার বাবা। তাসনিম বলেন, তাকে (ওয়াসিম) দেখতে খুব অন্যরকম লাগছিল। ততক্ষণে হয়তো খুব পেটানো হয়েছে, কিংবা সে খুব ভয় পাচ্ছিল বলেই হয়তো তাকে বেশ অন্যরকম লাগছিল। ওয়াসিম নিখোঁজ হওয়ার পর তার পরিবার সিরিয়া ছেড়ে জার্মানি চলে আসেন। ১১ বছর ধরে সিরিয়ায় যুদ্ধ চলছে। এ যুদ্ধে জড়িত সব পক্ষের বিরুদ্ধেই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে। ছয় মিনিটের ভিডিওটি করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ১৬ এপ্রিল, অর্থাৎ ওয়াসিম সিয়াম বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হওয়ার ঠিক দুদিন পরে। ভিডিওতে দেখা যায়, বাশার আল আসাদ বাহিনীর অনুগত বাহিনীর দুই সদস্য সাদা রঙের একটি ডেলিভারি ভ্যান থেকে ধরে ধরে চোখ বাঁধা মানুষদের নিয়ে আসছেন আর গুলি করে হত্যা করছেন। হত্যাকারীকে চিহ্নিত করা আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হলোকস্ট এবং গণহত্যা বিষয়ের অধ্যাপক উগুর উমিত উংগোর ২০১৯ সালে ভিডিওটি হাতে পান। সেই থেকে অজ¯্রবার দেখে, খুঁটিনাটি বিষয় বিচার-বিশে−ষণ করে দুই হত্যাকারীকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন তিনি। এ কাজে তাকে সহায়তা করেছেন সহকর্মী আনসার শাদুদ। তিন বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করার পর ওই দুই ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে পেরেছেন তারা। জানা গেছে, দুই হত্যাকারীর একজন নাজিব আল-হালাবি তখন প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অনুগত এক আধা সামরিক বাহিনীতে কাজ করতেন। তবে তিনি এখন বেঁচে নেই। মাছ ধরার টুপি পরা অন্য ব্যক্তি আমজাদ ইউসেফ এখনো জীবিত। এখন তিনি আসাদ সরকারের গোয়েন্দা বাহিনীর কর্মকর্তা। দুই হত্যাকারীকে চিহ্নিত করার পর আরো তথ্য সংগ্রহের জন্য ‘আনা শ’ ছদ্ম পরিচয়ে প্রেসিডেন্ট আসাদের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করেন আনসার শাদুদ। আসাদের ঘনিষ্ঠদের তিনি বলেন, তার বাড়ি হোমসে এবং তিনিও প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের মতো আলাওয়াত গোষ্ঠীর সন্তান। এরপর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সিরিয়ার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সঙ্গে আনা শ’র বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একসময় হত্যাকারী আমজাদের সঙ্গেও পরিচয় হয়ে যায় আনসার শাদুদের। কয়েক দিনের মধ্যে দুজনের সম্পর্ক এমন হয়ে যায় যে, আমজাদ ব্যক্তিগত আনন্দ-বেদনার কথাও বলতে শুরু করেন। এভাবে ব্যক্তিগত কথা বলতে বলতেই একদিন আমজাদ বলে ফেলেন, আমি তো বহু মানুষকে হত্যা করেছি। তার ওই বক্তব্য পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রেকর্ড করা হয় এবং সেই রেকর্ড পৌঁছে দেয়া হয় জার্মান এবং ডাচ আইনজীবীদের কাছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আলেকজান্ডার শোয়ার্ৎসও ছয় মিনিটের ভিডিটি দেখেছেন। তিনি বলেন, সিরিয়ার দুই সৈন্য নিরস্ত্র, চোখ বাঁধা মানুষগুলোকে যেভাবে হত্যা করেছে তা স্পষ্টতই যুদ্ধাপরাধ। তিনি মনে করেন, পরিকল্পিতভাবেই এই হত্যাকান্ড চালানো হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com