মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:২২ পূর্বাহ্ন

আস্থা সংকটে বিদেশে চিকিৎসা নিতে বিপুল টাকা ব্যয় করে বাংলাদেশীরা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০২৫

এফএনএস : দেশের চিকিৎসা সেবার প্রতি আস্থা সংকটে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী বিদেশে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। তাতে ব্যয় হচ্ছে বিপুল পরিমাণ টাকা। চিকিৎসার জন্য বিদেশমুখী রোগীর স্রোত কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। প্রতি বছর বাংলাদেশি রোগীরা শুধুমাত্র ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করাতে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা খরচ করে। কিন্তু স¤প্রতি দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনায় গুরুতর রোগী ছাড়া ভারত ভিসা দিচ্ছে না। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে দেশজুড়ে স্বাস্থ্য খাত ঢেলে সাজানোর আলোচনা চলছে। স্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রতি বছর উন্নত চিকিৎসার জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। অথচ একই চিকিৎসা বাংলাদেশে করতে যে ব্যয় হয়, ভারতে প্রায় দ্বিগুণ খরচ করতে হয়। আর থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে তিন থেকে ১০ গুণ বেশি। তারপরও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবানদের মধ্যে স্থানীয় হাসপাতালগুলোর প্রতি অনীহা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অথচ দেশে চিকিৎসা সেবা নিয়ে রোগীরা সন্তুষ্ট হলে তারা বিদেশমুখী হতো না। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশের বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলোও মান বাড়ানোর মাধ্যমে চিকিৎসা সেবায় বিদেশমুখীরা কমানো সম্ভব। সূত্র জানায়, প্রতি বছরে বাংলাদেশ থেকে ২৫ লাখের মতো রোগী ভারত যায়। স্বাস্থ্যসেবা নিতে তাদের প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়। গত বছর জুনে প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী একক দেশ হিসেবে ভারতেই বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে সবচেয়ে বেশি খরচ করে। দেশের বাইরে ক্রেডিট কার্ডে মোট খরচের চার ভাগের এক ভাগ হয় ভারতে হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারত ভ্রমণে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ৭৩ কোটি টাকা খরচ করে। আর মার্চে অর্থ ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০৩ কোটি টাকা। এর বড় একটি অংশই চিকিৎসা খাতে খরচ হয়েছে। চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার সময় রোগীরা খরচ মেটাতে ডলার, ইউরো কিনছে। এতে ডলার, ইউরোর বাজারেও চাপ বাড়ছে। এদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ—ই—মাহবুব জানান, দেশের মানুষ নানা কারণে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যায়। এর মধ্যে মানসিক আস্থার সংকট অন্যতম। দেশেল মানুষের জন্য যত ভালো মানের হাসপাতাল থাকার কথা, তা সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে নেই। সেজন্যই ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে অনেকে প্রতিবেশী দেশে যায়। দেশের চিকিৎসাব্যবস্থায় প্রযুক্তির উন্নয়ন তেমন ঘটেনি। কাজেই রোগীরা বিদেশমুখী হয়। দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা উন্নত হলে বিদেশযাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব। বর্তমানে ভারত—বাংলাদেশের চলমান কূটনৈতিক উত্তেজনার কারণে একেবারে গুরুতর রোগী ছাড়া ভারত আর কোনো বাংলাদেশিকে মেডিকেল ভিসা দিচ্ছে না। ক্যান্সার, কিডনি, হৃদরোগ, লিভারের ক্ষতজনিত সমস্যার মতো ১২ ধরনের দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্তরা চিকিৎসা নিতে ভারতে যায়। এখন ভিসা না পাওয়ার কারণে ওই রোগীরা বিপাকে পড়েছে। চিকিৎসার জন্য ভারতের বিকল্প হিসেবে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরে যাচ্ছে অনেক বাংলাদেশি রোগী। তবে তবে অনেকেরই ওই দেশগুলোয় চিকিৎসার খরচ ও ভ্রমণ ব্যয় বহন করার সামর্থ্য নেই। অন্যদিকে এ ব্যাপারে অতিস¤প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেছেন, দেশের চিকিৎসকদের মান নিয়ে কোনো সংশয় নেই। কিন্তু রোগ শনাক্তে ডায়াগনস্টিক টেস্ট রিপোর্টের ক্ষেত্রেও সে মান ধরে রাখতে হবে। একটা টেস্ট কেন তিন জায়গায় মানুষ করাবে! মানুষকে মানসম্মত সেবা দিতে পারলে তারা আর বিদেশে যাবে না। চিকিৎসা ব্যবসা নয়। শুধু সরকারকে বললে হবে না, সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। চিকিৎসায় সমন্বয়হীনতা রয়েছে, জনবল, যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে। কোথাও জনবল আছে যন্ত্র নেই, আবার কোথাও যন্ত্র আছে জনবল নেই। ক্যান্সার চিকিৎসায় আমরা কিছুটা পিছিয়ে আছি। যেখানে হাত দিচ্ছি সেখানেই সমস্যা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com