সফরকারী ইংল্যান্ডকে তৃতীয় টেস্টে ৪২৩ রানে বিধ্বস্ত করে শেষ পর্যন্ত হোম সিরিজে জয় নিশ্চিত করেছে নিউজিল্যান্ড। এর আগের দুই ম্যাচে ইংল্যান্ড জয়ী হয়ে আগেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছিল। এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে কিউই পেসার টিম সাউদির টেস্ট ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটেছে। বড় জয়ে তাই সাউদির বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখলো সতীর্থরা। প্রথম দুই টেস্টে সহজেই জয়ী হয়েছিল ইংল্যান্ড। যে কারনে নিউজিল্যান্ডের জন্য হ্যামিল্টন টেস্ট অনেকটাই অস্তিত্ব রক্ষার ম্যাচে পরিণত হয়। ফলাফল বিচারে নিউজিল্যান্ড রানের দিক থেকে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড স্পর্শ করেছে। ২০১৮ সালে ক্রাইস্টচার্চে শ্রীলংকাকে এই একই ব্যবধানে পরাজিত করেছিল কিউইরা, যা এখনো রেকর্ড হয়ে আছে। গতকাল টেস্টর চতুর্থ দিনে নিউজিলান্ডের বোলারদের তোপে ৪১.২ ওভারে সাত উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ডের ইনিংস ২৩৪ রানে গুটিয়ে যায়। সিডন পার্কে নিজের ঘরের মাঠে খেলতে নেমে পেসার সাউদি ক্যারিয়ারের ১০৭তম টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৪ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। এর মাধ্যমে নিউজিল্যান্ডের অন্যতম সেরা একজন বোলারের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের সমাপ্তি হলো। নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী রিচার্ড হ্যাডলির পর ৩৯১ উইকেট নিয়ে সাউদি ক্যারিয়ার শেষ করলেন। ম্যাচ শেষে ৩৬ বছর বয়সী সাউদি বলেছেন, ‘নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট আমার জন্য যা কিছু করেছে সেজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমার পরিবার সবসময়ই পাশে ছিল, তারা ক্যারিয়ারের উত্থান—পতন দেখেছে। দীর্ঘ এই যাত্রায় আমার সতীর্থরা প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ্য করে তুলেছিল। প্রতিটি মুহূর্তকে আমি ভালবেসেছি। সর্বোপরী আমার ভক্তরা। তাদের সামনে খেলতে পারাটা সবসময়ই আনন্দের ছিল। এই সপ্তাহে দারুন কিছু ভক্তের উপস্থিতিতে সিডন পার্কে খেলার মুহূর্তটি ছিল সত্যিই বিশেষ কিছু।’ ইংলিশ অধিনায়ক বেন স্টোকস ব্যাটিংয়ে না নামায় দুর্দান্ত এই জয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে কিউইদের ৯ উইকেটের প্রয়োজন ছিল। সোমবার স্টোকস হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়েছেন। কয়েক মাস আগেই বাঁ—পায়ের হ্যামস্ট্রিংয়ে এই একই সমস্যায় পড়েছিলেন স্টোকস। এবারের ইনজুরির মাত্রা এখনো জানা যায়নি। কিন্তু সব মিলিয়ে স্টোকসের ইনজুরির সাথে বড় এই পরাজয়ে ইংল্যান্ডকে বেশ হতাশই দেখা গেছে। স্টোকস বলেছেন এই টেস্টে ইংল্যান্ড একেবারেই দাঁড়াতে পারেনি, ‘সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে আমরা নিউজিল্যান্ডের উপর আধিপত্য দেখিয়েছি। এই ম্যাচটি তার থেকে একেবারেই ভিন্ন ছিল। একটি দল হিসেবে এই ধরনের পরাজয় সত্যিই হতাশার। কারন সবসময়ই জয়ের লক্ষ্য নিয়েই আমরা মাঠে নামি। এই ম্যাচটিতে নিজেদের সামর্থ্যের আশেপাশেও আমরা ছিলাম না।’ ১৮ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করা ইংল্যান্ডকে দেখে কখনই মনে হয়নি ৬৫৮ রানের টার্গেট তাড়া করতে পারবে। বিশেষ করে মধ্যাহ্ন বিরতির আগে জ্যাকব বেথেল (৭৬), জো রুট (৫৪) ও হ্যারি ব্রুক মাত্র এক রানে সাজঘরে ফেরার পর ইংল্যান্ডের সব আশা শেষ হয়ে যায়। রুটের বিদায়ের আগ পর্যন্ত প্রথম ঘন্টাখানেক ইংল্যান্ডকে স্বাভাবিক মনে হয়েছে। তৃতীয় উইকেটে বেথেলের সাথে রুট ১০৪ রানের জুটি উপহার দেন। বাঁ—হাতি স্পিনার মিচেল সান্টনারের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন ইংল্যান্ডের সর্বকালের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক রুট। যদিও রিভিউর মাধ্যমে নিউজিল্যান্ড এই আউটটি নিশ্চিত করতে সমর্থ হয়। ৩৩ বছর বয়সী রুট পঞ্চম খেলোয়াড় হিসেবে টেস্টে ১৩ হাজার রান থেকে আর মাত্র ২৮ রান দুরে আছেন। প্রথম দুই টেস্টে ম্যাচ জয়ী সেঞ্চুরি হাঁকানো ব্রুক সিডন পার্কে দ্বিতীয় বারের মত বড় স্কোর গড়তে ব্যর্থ হয়েছে। উইল ও’রুরকের বলে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে তিনি ফেরার আগে মাত্র ১ রান করেছেন। বাঁ—হাতি ব্যাটার বেথেল স্বাচ্ছন্দ্যে খেলে ১৩টি বাউন্ডারি ও একটি ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৭৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। পেসার ম্যাট হেনরির কলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড আউট হন ওলি পোপ (১৭)। গাস এ্যাটকিন্সন ৪১ বলে করেছেন ৪৩ রান। এরপর দ্রুত ম্যাথু পট ও ব্রাইডন কার্সের উইকেট হারিয়ে হতাশ করে ইংল্যান্ড। অল রাউন্ডার সান্টনার ৮৫ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। সব মিলিয়ে সাত উইকেট ছাড়াও দুই ইনিংসে ব্যাট হাতে করেছেন যথাক্রমে ৭৬ ও ৪৯ রান। প্রথম দুই টেস্টে ৮ উইকেট ও ৩২৩ রানে হারের পর ব্ল্যাক ক্যাপসরা উদগ্রীব হয়েছিল অন্তত সাউদির জন্য হলেও তৃতীয় টেস্টে ভাল কিছু উপহার দেবার। ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক ৩—০ ব্যবধানের জয়ের রেকর্ড নিয়ে এই সিরিজে খেলতে নেমেছিল নিউজিল্যান্ড। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে গুরুত্বপূর্ণ ৩ উইকেট নেয়া নতুন পেসার ও’রুরকের প্রশংসা করেছেন কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথাম, ‘সে সত্যিই দুর্দান্ত বোলিং করেছে। ফেব্রুয়ারিতে টেস্ট অভিষেক হবার আগে তার খুব বেশী প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলার প্রয়োজন পড়েনি। অবশ্যই তার পাঁচ উইকেট কিংবা কোন মাইলফলক স্পর্শ করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু আমি মনে করি দলের প্রতি সে যা অবদান রাখছে সেটাই যথেষ্ট।’