এফএনএস স্পোর্টস: আগের ছক্কায় ম্যাচের ফয়সালা একরকম হয়েই গিয়েছিল। রান চলে এসেছিল সমতায়। জেমস স্যালেসের পরের বল লং অন দিয়ে দিনেশ বানা উড়িয়ে মারা মাত্রই সতীর্থরা ছুটতে শুরু করেন ক্রিজের দিকে। বল যতক্ষণে সীমানা পার হলো, ততক্ষণে ভারত দলের অনেকেই ঢুকে গেছেন মাঠের ভেতরে! ইংলিশদের হারিয়ে যুব বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের উৎসবে মাতোয়ারা ভারত। অ্যান্টিগায় শনিবার ফাইনালে ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দল। অলরাউন্ড নৈপুণ্েয তাদের জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রাজ বাওয়ার। ৩১ রানে ৫ উইকেট নেওয়ার পর ৩৫ রানের ইনিংসে জেতেন ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। বাওয়া ও রবি কুমারের ছোবলে ৯১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে একশর আশপাশে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ছিল ইংল্যান্ড। সেখান থেকে দলটি ১৮৯ পর্যন্ত যায় জেমস রুর ৯৫ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস ও স্যালেসের সঙ্গে তার ৯৩ রানের দারুণ জুটির সুবাদে। ছোট পুঁজি নিয়েও দারুণ লড়াই করেন ইংলিশ বোলাররা। তবে শেখ রশিদ ও নিশান্ত সিন্ধুর ফিফটি ও বাওয়ার কার্যকর ইনিংসে ১৪ বল বাকি থাকতেই লক্ষ্েয পৌঁছে যায় ভারত। আগে থেকেই ভবিষ্যতের তারকাদের লড়াইয়ের এই মঞ্চে সফলতম দল তারা। পঞ্চম এই শিরোপায় তারা ব্যবধান বাড়াল তিনবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে। স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে রবি ও বাওয়ার সুইংয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে ইংল্যান্ড। শুরুটা করেন রবি। তার চমৎকার ইন সুইং ও সিম মুভমেন্টে ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই জ্যাকব বেথেলকে হারায় ইংল্যান্ড। নিজের পরের ওভারে অধিনায়ক জেমস প্রেস্টকে শূন্য রানে থামান রবি। ডানা মেলতে শুরু করা জর্জ টমাসকে বিদায় করে শিকার শুরু করেন বাওয়া। ৩০ বলে ২৭ রান করা ওপেনার চেষ্টা করছিলেন পাল্টা আক্রমণে দ্রুত রান তোলার। কিন্তু ফিরে যান কাভারে ক্যাচ দিয়ে। ডানহাতি পেসার পরের ওভারে ধরেন জোড়া শিকার। উইলিয়াম লাক্সটনকে কট বিহাইন্ড করার পরের বলে একইভাবে বিদায় করেন জর্জ বেলকে। এক ওভার পর থামান রেহান আহমেদকে। কিপার-ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স হর্টনকে বিদায় করে ইংল্যান্ডের বিপদ আরও বাড়ান কৌশল তাম্বে। তখন দেড়শ রানই ছিল অনেক দূরের পথ। কিন্তু রু ও স্যালেসের জুটিতে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকে ইংল্যান্ড। দুই জনে দলকে এমন জায়গায় নিয়ে যান যেখান থেকে ২২০-২৩০ রানও অসম্ভব কিছু ছিল না। কিন্তু ছক্কায় সেঞ্চুরির চেষ্টায় ডিপ স্কয়ার লেগে রু ধরা পড়লে পাল্টে যায় খেলার চিত্র। দ্বিতীয় চেষ্টায় এক হাতে ক্যাচ মুঠোয় জমান তাম্বে। রুর ১১৬ বলে খেলা ৯৫ রানের ইনিংস গড়া ১২ চারে। এরপর ৫ রানের মধ্েয থমকে যায় ইংল্যান্ডের ইনিংস। এক প্রান্তে দুই চারে ৩৪ অপরাজিত থাকেন স্যালেস। জশুয়া বয়ডেনকে ফিরিয়ে নিজের পঞ্চম উইকেট নেন বাওয়া। রান তাড়ায় ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই শূন্য রানে ভাঙে ভারতের শুরুর জুটি। তবে হারনুর সিং ও রশিদ এগিয়ে নিতে থাকেন দলকে। হারনুরের থিতু হয়ে বিদায়ের পর রশিদ ও অধিনায়ক ইয়াশ ধুল জুটি গড়ার চেষ্টা করেন। পঞ্চাশ ছোঁয়ার পরপরই রশিদকে (৮৪ বলে ৫০) ফিরিয়ে ৪৬ রানের জুটি ভাঙেন স্যালেস। পরের ওভারে বিদায় করেন ধুলকে। দ্রুত ২ উইকেট নিয়ে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে ইংল্যান্ড। তবে সিন্ধু ও বাওয়া কক্ষপথেই রাখেন দলকে। ৫৪ বলে দুই চার ও এক ছক্কায় ৩৫ রান করে বাওয়া আউট হওয়ার পর দ্রুত ফিরেন তাম্বে। শেষ ৩ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১২ রান, হাতে ছিল ৪ উইকেট। স্যালসের প্রথম বলে চার মারার পর ১ রান নিয়ে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন সিন্ধু (৫৪ বলে ৫০)। পরের দুই বলে দুই ছক্কায় ম্যাচ শেষ করে দেন কিপার-ব্যাটসম্যান বানা। ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তির মাঠে ভারতের ভবিষ্যৎ তারকারা মাতে উৎসবে। হেরে স্বাভাবিকভাবেই হতাশায় নিমজ্জিত ইংল্যান্ড দল। কারো কারো চোখে দেখা যায় জল। গত আসরে ঠিক এই জায়গায় ছিল ভারত। সেবার তাদের হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। যারা এবার হয়েছে অষ্টম। সংক্ষিপ্ত স্কোর: ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দল: ৪৪.৫ ওভারে ১৮৯ (টমাস ২৭, বেথেল ২, প্রেস্ট ০, রু ৯৫, লাক্সটন ৪, বেল ০, রেহান ১০, হর্টন ১০, স্যালেস ৩৪*, এস্পিনওয়াল ০, বয়ডেন ১; হাঙ্গারগেকার ৭-১-৩৬-০, রবি ৯-১-৩৪-৪, বাওয়া ৯.৫-১-৩১-৫, সিন্ধু ৬-১-১৯-০, অস্তওয়াল ৬-০-৩১-০, তাম্বে ৫-০-২৯-১, রঘুভানশি ২-০-৮-০)। ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দল: ৪৭.৪ ওভারে ১৯৫/৬ (রঘুভানশি ০, হারনুর ২১, রশিদ ৫০, ধুল ১৭, সিন্ধু ৫০, বাওয়া ৩৫, তাম্বে ১, বানা ১৩*; বয়ডেন ৭-১-২৪-২, স্যালেস ৭.৪-০-৫১-২, প্রেস্ট ১০-১-২৯-০, রেহান ১০-২-৩২-০, এস্পিনওয়াল ৯-০-৪২-২, বেথেল ৪-০-১৭-০ )। ফল: ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দল ৪ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দা ম্যাচ: রাজ বাওয়া।