এফএনএস বিদেশ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে চলা সবচেয়ে বড় স্থলযুদ্ধ পাঁচ মাসে পড়ার দিন ইউক্রেইনের উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণের একাধিক শহরে বৃষ্টির মতো রুশ ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বলে জানিয়েছে কিইভ। এর আগে গত শুক্রবার রাশিয়ার কামান ও বিমান হামলা লুহানস্কের জোড়া শহর সিয়েভিয়ারোদোনেৎস্ক ও লিসিচ্যাংস্ককে চ‚র্ণবিচ‚র্ণ করার পাশাপাশি কয়েকশ বেসামরিক আটকা পড়া একটি রাসায়নিক কারখানাকেও গুড়িয়ে দিয়েছে বলে দাবি করেছেন ইউক্রেইনের এক কর্মকর্তা। একইদিন ইউক্রেইন তাদের বাহিনীকে সিয়েভিয়ারোদোনেৎস্ক থেকে সরে যেতেও নির্দেশ দিয়েছিল; কয়েক সপ্তাহের তুমুল লড়াইয়ের পর শহরটির বেশিরভাগ অংশ আগেই রাশিয়ার দখলে চলে গিয়েছিল। মে-তে মারিউপোল হাতছাড়া হওয়ার পর সিয়েভিয়ারোদোনেৎস্ক থেকে পিছু হটা ইউক্রেইনের জন্য বড় ধরনের পরাজয় হিসেবে বিবেচিত হবে, বলছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ইউক্রেইনকে ‘নিরস্ত্র’ ও ‘নাৎসিমুক্ত’ করতে ফেব্র“য়ারির শেষ সপ্তাহে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভাদিমির পুতিন প্রতিবেশী দেশে লাখো সেনা পাঠিয়ে ‘বিশেষ অভিযান’ শুরুর নির্দেশ দেওয়ার চার মাস শেষে সিয়েভিয়ারোদোনেৎস্ক থেকে কিইভবাহিনীকে সরে যাওয়ার এ নির্দেশ দেওয়া হল। রুশ প্রেসিডেন্টের ওই নির্দেশ এরইমধ্যে কয়েক হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, লাখ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে, ভয়ানক চাপে ফেলেছে বৈশ্বিক অর্থনীতিকে। “৪৮টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, রাতে, সমগ্র ইউক্রেইন জুড়ে। রাশিয়া এখনও ইউক্রেইনকে চেপে ধরতে, আতঙ্ক সৃষ্টি করতে ও মানুষকে ভয় দেখাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে,” বলেছেন ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক। রুশ বাহিনীর সা¤প্রতিক অগ্রগতি মস্কোকে লুহানস্কের ওপর পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। সিয়েভিয়ারোদোনেৎস্কের পর লিসিচ্যাংস্কের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার দিকেই মনোযোগী হবে তারা। মস্কোর ভাষায় ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরুর সময় থেকে তাদের যে কয়েকটি লক্ষ্য ছিল, তার অন্যতম ছিল দনবাস থেকে ইউক্রেইনীয় বাহিনীকে হটিয়ে দেওয়া। ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্পাঞ্চল দনবাস দোনেৎস্ক আর লুহানস্ক প্রদেশ নিয়ে গঠিত। এই দুই প্রদেশের অনেক অংশ রাশিয়ার অভিযানের আগে থেকেই রুশসমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ২৪ ফেব্র“য়ারি অভিযান শুরুর আগে রাশিয়া দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। মস্কোর স্বীকৃতি পাওয়া গণপ্রজাতন্ত্রী লুহানস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভিতালি কিসেলেভ রাশিয়ার বার্তা সংস্থা তাসকে বলেছেন, পুরো লুহানস্কের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় তাদের বড়জোর আর দেড় সপ্তাহ লাগতে পারে। ইউক্রেইনপন্থি লুহানস্ক অঞ্চলের গভর্নর সেরহি হাইদাই গতকাল শনিবার বলেছেন, রুশ বাহিনী সিয়েভিয়ারোদোনেৎস্কের শিল্প এলাকায় হামলা চালানোর পাশাপাশি লিসিচ্যাংস্ককে চারপাশ থেকে ঘেরাও শেষে শহরটিতে ঢোকারও চেষ্টা করছে। “লিসিচ্যাংস্ককে বিমান হামলা হয়েছে। সিয়েভিয়ারোদোনেৎস্কে হয়েছে কামান হামলা,” টেলিগ্রামে বলেছেন তিনি। হাইদাই সিয়েভিয়ারোদোনেৎস্কের আজোত কারখানায় হামলার হয়েছে বলে দাবি করলেও সেখানে হতাহতের উলেখ করেননি; রয়টার্সও তার দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।