দৃষ্টিপাত রিপোর্ট \ সাতক্ষীরার বিশ লক্ষাধীক জনসমষ্টি কালিগঞ্জ বসন্তপুর নৌ বন্দর নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছে। বৃটিশ শাসনের সূর্য ডুবি ডুবি সেই সময়ের প্রস্তাবনা বৃটিশদের চলে যাওয়ার পর ১৯৪৭ সালের পর দেশের দক্ষিনের জনপদ কালিগঞ্জের বসন্তপুরে চালু হয় নৌ বন্দর এবং কার্যক্রম। কাকশিয়ালী, কালিন্দী আর ইছামতির মোহনায় পালতোলা নৌকা আর জাহাজের উপস্থিতি পন্যের পরসা সাজিয়ে নাজিমগঞ্জ হিঙ্গলগঞ্জ রুটে ছিল প্রাণের সঞ্চার। দুই দেশ ইতিহাস আর ঐতিহ্যগত ভাবে একে অপরের সাথে সম্পৃক্ত বলা হয় বসন্তপুর নৌ বন্দর তার বড় উদাহরন হিসেবে বর্তমান প্রজন্মের জন্য বিশেষ অনুভবের ক্ষেত্র, স্থানীয় জনসাধারন বিশেষ করে প্রবীনদের ভাষ্য কালিগঞ্জ এর নাজিমগঞ্জ মোকাম সৃষ্টিতে বসন্তপুর নৌ বন্দরের ভূমিকা সর্বেসর্বা, নদী আববাহিকায় মোকাম তথা বাজার সৃষ্টি হয়, জমজমাট প্রানের উদ্ভব ঘটে আজকের নাজিমগঞ্জের চিত্র বলে দিচ্ছে এই মোকাম অতি প্রাচীন এবং আর্শীবাদ বসন্তপুর নৌ বন্দর, হারিয়ে যাওয়া এবং ইতিহাসের অংশ বসন্তপুর নৌ বন্দর পুনরায় চালু করার তোড়জোড় চলছে এবং আগামীতে একনেকের বৈঠকে পাশ হলে শুরু হবে অবকাঠামোগত কার্যক্রম। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি দল বন্দরের সম্ভাব্যতা যাচাই করনের কাজ সম্পন্ন করেছে। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বসন্তপুর নৌ বন্দর বিষয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। বসন্তপুর নৌ বন্দরের মাধ্যমে এই অঞ্চলের অর্থনীতি এবং বাজার সৃষ্টির ইতিহাসের স্বাক্ষী সবই চলছিল ভাল ভারত পাকিস্তানের যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে ষাটের দশকের শুরুতে যুদ্ধ বাঁধে ১৯৬৫ সালে আর তখনই বন্দ হয়ে যায় অর্থনীতির সুতিকাগার খ্যাত বসন্তপুর নৌ বন্দরটি। বসন্তপুরের ইতিহাস খ্যাত রাজাপ্রতাপাদিত বিক্রমাদিত্য এবং বসন্তরায়ের স্মৃতি ধন্য বন্দরটির কার্যক্রম বন্ধ হলে প্রাণচাঞ্চল্য ভরা কাকশিয়ালী নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা অর্থনদী আর বাজারের ছন্দ পতন ঘটে। ২০২২ সালে মহাসময় আগত আবারও বন্দরটি চালু হলে গতানুগতিক বা সনাতন পদ্ধতির বানিজ্য সম্ভারের পরিবর্তে আধুনিকতার ছোয়া প্রযুক্তি বান্ধব ব্যবস্থাপনায় অতীতের সেই প্রাণচাঞ্চল্য বন্দর অর্থনীতির সুবাসিত অবয়ব সৃষ্টি করবে, অর্থনীতির চাকা ঘুরবে, সুদৃৃঢ় হবে অর্থনীতি, শত সহস্র মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। কেবল কালিগঞ্জের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে তা নয় সাতক্ষীরা সহ দক্ষিনাঞ্চলের অর্থনীতিতে সুবাতাস বইবে, আর তাই বলা যায় বসন্তপুর নৌ বন্দর অবারিত অর্থনীতি আর কর্মসংস্থানের হাতছানি দিচ্ছে। বসন্তপুর নৌ বন্দর কেবল ভারত বাংলাদেশের মধ্যে আমদানী রপ্তানীতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে তা নয়, অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন ব্যবস্থাপনা, নৌ পথে পণ্য পরিবহন ও যাতায়াতের ক্ষেত্র বিস্তৃত ঘটবে। বসন্তপুর হতে মোংলা বন্দরের দূরত্ব আনুমানিক একশত কিলোমিটার খুলনার দুরত্ব সে অপেক্ষা কম, রাজধানী ঢাকা নৌ রুটের সাথে ও নৌ যাতায়াতের পথ প্রশস্ত হবে, নৌ বন্দর চালুর সাথে সাথে কাকশিয়ালী, কালিন্দী, ইছামতি খনন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা হলে অভ্যন্তরীন নৌ পথের বহুবিধ রুট চালু হবে। বসন্তপুর হতে ভারতের হিঙ্গলগঞ্জ মূলকেন্দ্র হলেও হিঙ্গলগঞ্জ হতে কলিকাতা নৌ বন্দরের দূরত্ব সত্তর কিলোমিটার বিধায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা অতি সহজেই সময় মত কলিকাতা বাজার ধরতে পারবেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা, স্থানীয় প্রবীন অধিবাসিরা জানান তৎকালীন সময়ে মৎস্য, কাঠ সহ বিভিন্ন ধরনের রবিশষ্য বন্দর দিয়ে পারাপার হতো। সময়ের ব্যবধানে বৈশ্বিক কারনে আমদানী রপ্তানীর ক্ষেত্র বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে কলিকাতা হতে অতি সহজেই আমদানী পণ্য যেমন যথা সময়ে নৌ বন্দরের মাধ্যমে কম খরচে আসবে অনুরুপ রপ্তানী পণ্য সেভাবেই যথাসময়ে পৌছাবে। বসন্তপুরের কাস্টমস ভবন এখনও কার্যক্রম চালিয়ে ইতিহাসের ধারাবাহিকতা রক্ষা করছে। জানান দিচ্ছে জরাজীর্ণ ভবন গুলো যে গুলো বসবাস করতেন নৌ বন্দরের কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা। ছাপ্পান্ন বছর পূর্বে চলমান থাকা বসন্তপুর নৌ বন্দর আবারও চালু হতে চলেছে এমন খবরে সত্যিকার অর্থে ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক ধরনের আশার সঞ্চার ঘটেছে। বন্দরটিকে ঘিরে তাই আশায় উচ্ছ¡াসিত জন সাধারন, হাজার হাজার পরিবার কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নতুন পেশা পাবে, এলাকার অভাবনীয় উন্নয়ন ঘটবে, নগরায়ন হবে, ব্যবসায়ী সৃষ্টি হবে, বেকারত্ব কমবে, দেশের সক্ষমতার প্রতিক পদ্মা সেতু হওয়ায় এই বন্দরের পণ্য অতি সহজেই রাজধানীতে পৌছাতে এবং বন্দরে আসতে সময় কম লাগবে। বাংলাদেশের প্রতিবেশী এবং বন্ধু রাষ্ট্র ভারত এবং বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বৈঠকের মাধ্যমে দ্রুত বন্দরটির কার্যক্রম শুরু করার প্রত্যাশা সাতক্ষীরার জনসাধারনের।