এফএনএস : কল ড্রপ, দুর্বল নেটওয়ার্কের কারণে কল বিচ্ছিন্ন হওয়ার মত ভোগান্তি বন্ধ করে স্বচ্ছ ভয়েস কল, দ্রুত গতির ইন্টারনেট এবং স্থিতিশীল মোবাইল নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে মোবাইল নেটওয়ার্ক, মোবাইল ইন্টারনেট সংক্রান্ত সমস্যা এবং গ্রাহকদের অভিযোগের দ্রুত সমাধানে বিটিআরসির ‘অভিযোগ সেলের’ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে স¤্রতি পাঁচ সদস্যের একটি কমিটিও করে দেন আদালত। তবে পরিস্থিতি বদলায়নি। মোবাইল ইন্টারনেটের গড় গতির তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আফগানিস্তান বাদে সবার পেছনে রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান। আর বিশে^র ১৩৮টি দেশের মধ্যে অবস্থান ১২৮তম। ‘স্পিড টেস্ট গ্লোবাল ইনডেক্স’-এর ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক ইন্টেলিজেন্স, টেস্টিং অ্যাপ্লিকেশন্স এবং প্রযুক্তি নিয়ে বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান ওকলার সর্বশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে। ওকলার প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোবাইল ইন্টারনেট গতিতে পাকিস্তান, নেপাল, ভারতের মতো দেশগুলো এগিয়ে আছে বাংলাদেশের চেয়ে। বাংলাদেশের পেছনে আছে কেবল ১০টি দেশ। ওকলার নিজস্ব ওয়েবসাইট স্পিডটেস্ট ডটনেটে প্রকাশিত তালিকায় দেখা যায়, মোবাইল ইন্টারনেট গতির ১৩৮টি দেশের হিসাবের মধ্যে ১২৮তম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের মোবাইল ইন্টারনেটে ডাউনলোড স্পিড ১০ দশমিক ৫১ মেগাবিট পার সেকেন্ড (এমবিপিএস)। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, মোবাইল ইন্টারনেটের গতিতে আফগানিস্তান বাদে দক্ষিণ এশিয়ার সবগুলো দেশই বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। তবে ব্রডব্যান্ডে গতি তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছে। আগের তুলনায় ডিসেম্বরে ব্রডব্যান্ড গতিতে এক ধাপ এগোয় বাংলাদেশ। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতির তালিকায় ১৭৮টি দেশের মধ্যে এক ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ৯৪। ব্রডব্যান্ডে গতির ক্ষেত্রে একটু এগিয়ে থাকলেও বর্তমানে দেশে রয়েছে ব্যান্ডউইথের সংকট। দেশে গত কয়েক মাস ধরে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের এই সংকট চলছে বলে জানা গেছে। ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে গুলোকে (আইআইজি) মোট চাহিদার বিপরীতে প্রয়োজনীয় ব্যান্ডউইথ দিতে পারছে না বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল)। ফলে আইএসপি (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) প্রতিষ্ঠানগুলোর ইন্টারনেট সেবাদানে বিঘœ ঘটছে। এর প্রভাব পড়েছে মোবাইল ফোনের ইন্টারনেটেও। জানা গেছে, গত বছরের অক্টোবর থেকে ব্যান্ডউইথ সংকট শুরু হয়। বিএসসিসিএলের কাছে ‘চাহিদা’ জানিয়েও সেই অনুযায়ী ব্যান্ডউইথ পাচ্ছে না আইআইজিগুলো। একইভাবে তাদের কাছ থেকে পাচ্ছে না আইএসপিগুলো। ফলে আইটিসিগুলোর (ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল) ওপর ইন্টারনেট সেবাদাতা পক্ষগুলোর নির্ভরতা তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই আইএসপিগুলো নিরবছিন্ন সেবাদানে আইটিসিগুলোকে বিকল্প হিসেবে বেছে নেওয়ায় তাদের ব্যান্ডউইথের চাহিদা বেড়ে গেছে। দেশে বর্তমানে ব্যবহার হওয়া (২৬০০-২৭০০ জিবিপিএস-গিগাবিটস পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথের ৪৫ শতাংশ আইসিটি থেকে আসছে বলে জানা গেছে। দেশে আইটিসি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছয়টি। এর মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠান সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে। এসব প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে ব্যান্ডউইথ আমদানি করে ব্যাকআপ সেবা দিচ্ছে। জানা গেছে, দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের (সি-মি-উই-৫) বর্তমান সক্ষমতার (অ্যাক্টিভেট ক্যাপাসিটি) পুরোটা ১৩০০ জিবিপিএস প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। অপরদিকে প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল সি-মি-উই-৪-এর সক্ষমতার ৬০০ জিবিপিএসেরও একই অবস্থা। দুটি মিলিয়ে দেশের মোট ব্যবহৃত ব্যান্ডউইথের মধ্যে দুই সাবমেরিন ক্যাবল থেকে আসে ১৮৫০ জিবিপিএস। বাকি ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করছে আইটিসি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স¤প্রতি বিএসসিসিএল ৯০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ (সি-মি-উই-৫) সার্কিট আপ (সক্রিয়) হয়েছে। শিগগিরই ৬০০ জিবিপিএস যুক্ত হবে। তখন সি-মি-উই-৫-এর ব্যান্ডউইথ সক্ষমতা হবে ১৯০০ জিবিপিএস। আগামী মার্চে অবশিষ্ট ৩০০ জিবিপিএস একই ক্যাবলে যুক্ত হবে। ফলে সি-মি-উই-৫-এর ব্যান্ডউইথ দাঁড়াবে ২২০০ জিবিপিএস। কবে নাগাদ চলমান ব্যান্ডউইথ সংকট দূর হবে জানতে চাইলে বিএসসিসিএলের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্যান্ডউইথের সংকট নয়, অ্যাক্টিভ ক্যাপাসিটি শেষের দিকে ছিল। আপ করা ব্যান্ডউইথ যুক্ত হলে নতুন চাহিদার ব্যান্ডউইথ দেওয়া সম্ভব হবে। এ বিষয়ে আইআইজি ফোরামের মহাসচিব আহমেদ জুনায়েদ বলেন, গত অক্টোবর থেকে সাবমেরিন ক্যাবলে কোনও স্পেয়ার ক্যাপাসিটি ছিল না। আমরা চাহিদা জানিয়েও অতিরিক্ত ব্যান্ডউইথ পাইনি। শুনেছি ক্যাপাসিটি বাড়ানো হয়েছে। তবে এখনও আমরা পাইনি। এদিকে আইএসপি ব্যবসায়ীরা বলছেন, যদি এখনই প্রস্তুতি নেওয়া না হয় তাহলে মে বা জুন থেকে দেশে ব্যান্ডউইথের মারাত্মক সংকট দেখা দেবে। তখন আইটিসিই মূল ভরসার জায়গা নিয়ে নেবে, যা দেশের জন্য কোনও মঙ্গল বয়ে আনবে না। সি-মি-উই-৬-এ বাংলাদেশ যুক্ত না হওয়া পর্যন্ত মাঝে মধ্যে এ ধরনের সংকট দেখা দেবে। ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি’র সভাপতি ইমদাদুল হকবলেন, দেশে এখন যে পরিমাণ ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হচ্ছে তার চেয়েও বেশি চাহিদা রয়েছে। আমরা মাসতিনেক ধরে কম ব্যান্ডউইথ পাচ্ছি। দীর্ঘ সময়েও এর সমাধান হয়নি। শোনা যাচ্ছে, শিগগিরই ব্যান্ডউইথের সংকট সমস্যার সমাধান হবে।