দৃষ্টিপাত ডেস্ক ॥ সারা বিশ্বময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ইরান ইসরাইল। বিশ্বের শত শতকোটি মানুষের অভিশাপে জর্জরত দেশকর্তৃক আগ্রাসনের শিকার হতে পারে তা ছিল কল্পনাতীত কিন্তু বাস্তবতা হলো ইসরাইলের দীর্ঘ দিনের প্রতিপক্ষ হিসেবে খ্যাত ইরান হামলা চালিয়েছে। ইরান কর্তৃক ইসরাইলের মাটিতে ড্রোন আর ক্ষেপনাস্ত্র হামলা ছিল নাজীর বিহীন। আক্রান্ত ইসরাইল সাথে সাথেই ঘোষনা দেয় যে, তারা ইরানে হামলা চালিয়ে প্রতিশোধ গ্রহন করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ ইসরাইলের অপরাপর মিত্ররা অবশ্য ইরান পাল্টা হামলা পরিচালার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে পাশাপাশি ইরানও ঘোষনা দেয় যে, ইসরাইল ইরানে হামলা পরিচালনা করলে এক সেকেন্ডের মধ্যেই ইরান চরম ভাবে হামলা পরিচালনা করবে। ইসরাইল ইরানে হামলা হতে পিছিয়ে আসলেও গতকাল আল জাজিরা টেলিভিশন জানিয়েছে ইসরাইলের যুদ্ধ কালীন মন্ত্রীসভা ঘোষনা দিয়েছে যে ইসরাইল অবশ্যই ইরানে হামলা চালিয়ে প্রতিশোধ গ্রহন করবে। গতকাল আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতে এই খবর প্রচারের পর পরই ইরান তার পাল্টা হামলা প্রতিরোধে এবং ইসরাইলে পাল্টা হামলা পরিচালনার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করে। পশ্চিমা মিডিয়া, এএফপি ও রয়টার্স এর খবরে বলা হয়েছে ইরান ইসরাইলের হামলা প্রতিরোধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহন করেছে তার মধ্যে দেশটি তার পারমানবিক স্থাপনা বন্ধ ঘোষনা করেছে। ইরানের পারমানবিক স্থাপনায় হামলার বিষয়ে ইসরাইলের পত্র পত্রিকাগুলো ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ইসরাইল ইরানের পারমানবিক স্থাপনায় হামলা চালাবে। ইরানের পক্ষ হতে কঠোর ভাবে হুশিয়ারী উচ্চারন করে বলা হয়েছে ইরান তার সক্ষমতার যৎসামান্য হামলা চালিয়েছে ইসরাইল যদি ইরানের উপর কোন ধরনের হামলা পরিচালনা করে তাহলে ইসরাইলের করুন পরিনতি বিশ্ব প্রত্যক্ষ করবে। এদিকে দখলদার ইসরাইল বাহিনী ইরানের হামলার পর থেকে গাজা উপত্যকায় ব্যাপক ভাবে হামলা পরিচালনা করছে। গত তিন দিনে গাজার বিভিন্ন এলাকাতে ইসরাইলি বাহিনী যে ভাবে হামলা শুরু করেছে তা গত সাত অক্টোবরের পর হতে গাজায় চলমান হত্যাকান্ড ও হামলা হতে অনেক বেশী। মধ্যগাজায় দীর্ঘদিন পরে আবারও দখলদার বাহিনী পুনরায় বিমান হামলা ও স্থল অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে। গাজার রামাল্লা, জেরুজালেম, উত্তর, পশ্চিম, ও দক্ষিন গাজাতেও দখলদার বাহিনী ব্যাপক ভাবে বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে। গত দুই দিনে দখলদার বাহিনীর বিমান হামলায় অন্তত পঞ্চাশ জনের অধিক ফিলিস্তিনি নির্মম ভাবে নিহত হয়েছে। সর্বাপেক্ষা বেশী হামলা হচ্ছে পশ্চিম গাজায়। কাতার ভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরা জানিয়েছে পশ্চিম গাজায় বিমান হামলায় হত্যার পাশাপাশি সাধারন ফিলিস্তিনিদের উপর দখলদার ইসরাইলি বাহিনী গুলি বর্ষন করছে। গতকাল পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বাহিনীর বন্দুকের গুলিতে দুই ফিলিস্তিনি নাগরিক মর্মান্তিক ভাবে নিহত হয়েছে। হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া বলেছে আগ্রাসন বাদী ইসরাইলী বাহিনীকে প্রতিমুহুর্তে আমাদের বীর যোদ্ধারা মোকাবিলা করে যাচ্ছে কোন অবস্থাতেই দখলদার বাহিনীকে সামান্যতম ছাড় দেওয়া হবে না। উল্লেখ্য হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়ার তিন পুত্র ও এক নাতনিকে গুলি করে হত্যার পর থেকে সাধারন ফিলিস্তিনিদের মাঝে স্বাধীনতার শক্তি ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর আগ্রাসন এবং হত্যাকান্ডের ভয়ে ভীতু না হয়ে হামাস প্রধানের পুরো পরিবার গাজা ভূখন্ডেই অবস্থান করছে এবং এটাই ফিলিস্তিনিদের জন্য বড় শক্তি। এদিকে কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় মিশরের রাজধানী কায়রোতে হামাস ইসরাইল যুদ্ধ বিরতি বিষয়ে আলোচনা চলছে। ধারনা করা হচ্ছে উভয় পক্ষই চাইছে যুদ্ধ বিরতি তবে সম্মান আর স্বার্থ রক্ষার মাধ্যমে। ইসরাইলের সেনা বাহিনীর মাঝে একে অপরের প্রতি বিশ্বাসহীনতা ও আস্থাহীনতার ক্ষেত্র নিশ্চিত হয়েছে যে কারনে গাজায় বারবার দখলদার বাহিনীর সদস্যরা হামাস সদস্যদের দ্বারা প্রতিরোধ হামলার শিকার হচ্ছে। গাজার হাসপাতাল গুলোতে বর্তমান সময়ে ধ্বংস স্তুপের সারিই কেবলমাত্র ভরসা। প্রতিদিনই দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর সদস্যরা খান ইউনিসের আল আকসা ও আল সিফা হাসপাতালে তাদের অবস্থান অব্যাহত রেখেছে। এদিকে সর্বশেষ খবরে জানাগেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভূক্ত দেশগুলো ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তবে ইরানের পক্ষ হতে বলা হয়েছে ইরান তার সক্ষমতা সামর্থ ও শক্তি দিয়েই সব ধরনের প্রতিরোধ মোকাবিলা করবে।