দৃষ্টিপাত ডেস্ক ॥ ফিলিস্তীনিদের নির্বিচারে হত্যা আর ধ্বংস স্তুপের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ বরাবরই সোচ্চার, আন্তর্জাতিক এই প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে একাধিকবার ইসরাইলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া সহ নানা ধরনের বিধি নিষেধ আরোপ করার চেষ্টা সহ ইসরাইল বিরোধী বক্তব্য বিবৃতি প্রদানের মধ্য দিয়ে অবস্থান পরিস্কার সহ নিরিহ, নিরস্ত্র ফিলিস্তীনিদের পক্ষে অবস্থান গ্রহন করে। এরই ফলশ্র“তিতে ইসরাইল এবার জাতিসংঘের সব শ্রেনির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এখানেই শেষ নয় ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রদানের পাশাপাশি জাতিসংঘের কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা গাজায় হামাস সন্ত্রাসীদের পক্ষে কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছে আধুনিক যুগের মানবতা বিরোধী রাষ্ট্রটি। গতকাল আন্তর্জাতিক মিডিয়া গুলোতে ইসরাইলের মুখপাত্র এইলন লোড, ইসরাইল এও ঘোষনা দিয়েছে যে ইসরাইল জাতিসংঘের সাথে এক সাথে কাজ করা বন্ধ করে দেবে। ইসরাইলের হামলা চলছে তো চলছেই। খান ইউনুসের লড়াই যেন গাজা যুদ্ধের বাস্তবতা বলে দিচ্ছে। গাজায় যে ইসরাইলি সেনারা কতটুকু বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলছে তার উজ্জ্ল উদহারন খান ইউনিস। গত দুই দিন পূর্বে হামাস যোদ্ধারা ঘোষনা দিয়েছিল যে খান ইউনিস হতে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী বিদায় নিয়েছে। তাৎক্ষনিক ভাবে ইসরাইল হামাসের বক্তব্য ও ঘোষনা স্বীকার না করলেও গতকাল ইসরাইল ভিন্ন ভাবে বিষয়টি স্বীকার করে বলেছে যে কৌশল গত কারনে ইসরাইলি সেনারা খান ইউনিস হতে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করে হামাস সন্ত্রাসীদের নির্মূল কাজে নিয়োজিত। খান ইউনিসে চলতি সপ্তাহে দখলদার বাহিনীর অন্তত সত্তরজন সেনা নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে হামাস। তুরস্ক প্রথম থেকেই ইসরাইলের হামলার বিরুদ্ধে বার বার আহবান জানানো স্বত্ত্বেও ইসরাইলি বাহিনী গাজায় বিমান হামলা বন্ধ না করায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তাইয়েফ এরগোদান তার প্রত্যাশিত ইসরাইল সফর বাতিল করে। এখনেই শেষ নয় বিশ্বের দেশে দেশে তুরস্কের পক্ষ হতে ইসরাইলের অমানবিক কর্মকান্ডের ও গণহত্যার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে পত্র প্রেরণ করে। গতকাল প্রেসিডেন্ট এরগোদান ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহুকে হিটলারের সাথে তুলনা করে বলেছেন হিটলার যেমন মানুষ বিধান মেতেছিল নেতানিয়াহু অনুরুপ গণহত্যায় মেতেছে। এরগোদান নেতানিয়াহুকে গাজার কসাই বলে উপাধি দিয়ে বলেছেন, অবিলম্বে নিরীহ ফিলিস্তীনিদের হত্যা বন্ধ করেন, হিটলার যে ভাবে ইহুদিদের হত্যা করেছিল নেতানিয়াহু সেই ভাবে ফিলিস্তীনিদের হত্যা করছে। এরগোদানের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় নেতানিয়াহু বলেছেন এরগোদান কুর্দি ও সাংবাদিক হত্যাকারী হিসেবে বিশ্বময় পরিচিত। ইসরাইলের মুখে এমন কথা কতটুকু মানান সই এটাই ভাবনার বিষয়। গাজায় গতকাল ইসরাইলি বাহিনীর সাথে হামাস যোদ্ধাদের প্রাণপন যুদ্ধ চলেছে আর এই যুদ্ধে এবার হামাস যোদ্ধাদের হামলায় ইসরাইলের সেনা বাহিনীর এক কমান্ডার নিহত হয়েছে। মঙ্গল ও বুধবারের লড়াই অপেক্ষা গতকাল হামাস যোদ্ধাদের হাতে নিহত ইসরাইলের কমান্ডারের নাম ক্যাপ্টেন নেইরিয়া জিস্ক, একই সময় হামলায় নিহত অপরাপর ইসরাইলি সেনাদের মধ্যে ডেপুটি কমান্ডার মেজর ডিভর ডেভিড ফিমা, কনডন সার্জেন্ট ফাস্ট আসাফ পিনহাস তুবুল সহ বাইশ সৈন্যকে হত্যা করেছে হামাস যোদ্ধারা। হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসেম ব্রিগেড জানিয়েছে গত দুই মাসের অধিক সময়ে গাজা যুদ্ধে দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর এক হাজারের বেশি সেনা নিহত হয়েছে অন্যদিকে ইসরাইলি সেনা বাহিনীর আইডিএফ জানিয়েছে গাজা যুদ্ধে একশত সাতষট্টিজন সেনা হামাস সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয়েছে। এবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো গাজায় স্থায়ী যুদ্ধ বিরতির আহবান জানিয়েছেন। তিনি গতকাল ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট বেনজামিন নেতানিয়াহুর সাথে এ বিষয়ে টেলিফোনে কথা বলেছেন, একই সাথে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট গাজায় বেসামরিক লোকজনের হতাহতের উদ্বেগ জানিয়ে বেসামরিক ফিলিস্তীনিরা যেন হত্যাকান্ডের শিকার না হয় সে বিষয়ে ইসরাইলকে সতর্ক করেন, এদিকে গতকাল পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা বাইশ হাজার ছাড়িয়েছে যার মধ্যে পনের হাজার নারী ও শিশু। ইসরাইল গাজাকে ধ্বংস স্তুপের শহরে পরিনত করেছে একই সাথে হাসপাতাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এমনকি আশ্রয় শিবির গুলোতেও একের পর এক হামলা চালিয়ে গাজাকে বিষন্নতা আর লাশের শহরে পরিনত করেছে। গাজার বিভিন্ন এলাকা হতে প্রতিদিনই আন্তর্জাতিক রেডক্রসের সদস্যরা লাশ সংগ্রহ করছে এবং দাফন করছে। ইতিহাসের ভয়াবহ নির্মম হামলা আর চরম বিপদ ও আতঙ্ক জনক নগরীতে পরিনত হয়েছে গাজা উপত্যকা। ইসরাইলের বিমান বাহিনীর কয়েকটি বিমান গতকাল হিজবুল্লাহ সদস্যদের লক্ষ্য করে লেবাননে বিমান হামলার চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করেছে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা এমন খবর দিয়েছে পশ্চিমা মিডিয়া। অন্যদিকে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা গতকাল ও ইসরাইলের অভ্যন্তরে রকেট হামলা চালিয়েছে। লোহিত সাগরে আবারও জাহাজ আটকের ঘটনা ঘটেছে বলে পশ্চিমা মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে। লোহিত ও ভুমধ্যসাগরে ইসরাইল সহ পশ্চিমা বিশ্বের জাহাজ চলাচল নির্বিঘ্ন করনে দশ দেশের জোট হুতিদের নির্মূল করতে না পারায় জাহাজ চলাচল বন্ধ আছে। এদিকে ইরানের সামরিক মহড়ায় বিপুল সংখ্যক সৈন্যের সমাবেশ ঘটেছে ধারনা করা হচ্ছে ইরান বড় ধরনের অভিযানে যেতে চলেছে।