শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৫০ পূর্বাহ্ন

ইসরাইলের চাওয়া গাজাকে ধ্বংস করা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ২০ জানুয়ারী, ২০২৪

দৃষ্টিপাত ডেস্ক ॥ ইসরাইল হামাস যুদ্ধ চলছে তো চলছেই। তিন মাসের অধিক সময় যাবৎ ইসরাইলি বাহিনীর বর্বর হামলায় অন্তত চব্বিশ হাজার নিরীহ নিরস্ত্র ফিলিস্তীনিদের হত্যা করেছে। এমন কোন দিন নেই, এমন কোন সময় নেই যে দিনে বা সময়ে গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা পরিচালনা করছে না। ইহুদী বাদী রাষ্ট্রটির মূল লক্ষ্য গাজা উপত্যকাকে ধ্বংস করা। আর সেই লক্ষ্যে এবং উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই দখলদার ইসরাইলি বাহিনী গাজায় অব্যাহত ভাবে বিমান হামলা পরিচালনা করছে। দখলদার বাহিনীর হামলার কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। ইসরাইলের নারী ও শিশুরা। প্রতিদিনই গাজার রাস্তায় রাস্তায় এবং বসতবাড়ীর ধ্বংস স্তুপে পড়ে আছে লাশ আর লাশ। ইসরাইল একটা পুরো জাতি গোষ্ঠীকে ধ্বংস করতে চাইছে, আর তাই স্পষ্টভাবেই বলা যায় ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের জাতি হিসেবে নির্মূল অভিযানে নেমেছে। গেশটির প্রধানমন্ত্রী এবং মধ্যপ্রাচ্যের কসাই উপাধি প্রাপ্ত বেনজামিন নেতানিয়াহু বলেছে গাজা যুদ্ধ শেষ হলেই আমাদের অভিযান সমাপ্ত হবে। তিনি গাজা যুদ্ধ শেষ বলতে কি চাইছে তাও স্পষ্ট। গাজা যুদ্ধ অর্থ হামাসকে নির্মূল নয়, পুরো গাজাকে ধ্বংস করা। হামাস একটি মাত্র সংগঠন অন্যদিকে ইসরাইল বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ। পারমানবিক ক্ষমতার অধিকারী কিনা সেটা নিয়েও বিশেষ কৌতুহল বিশ্ববাসির, ইসরাইলের মত শক্তিশালী দেশের সুদক্ষ সেনা বাহিনী হামাসকে নির্মূল করতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিদিনই হামাস এর প্রতিরোধ হামলায় দখলদার সেনাদের নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। গতকালও হামাস এর প্রতিরোধ হামলায় বহুসংখ্যক ইসরাইলি সেনা হতাহত হয়েছে। বিশেষ করে খান ইউনিসের পথে পথে হামাস ও ইসরাইলিদের মধ্যে চলছে সংগ্রাম হামাস যোদ্ধারা কখনও অতর্কিত হামলা, কখনও সম্মুখ হামলা আবার মাটির তলার সুড়ঙ্গে অবস্থান করে নিরাপদে ইসরাইলি বাহিনীকে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে সাগরে ইসরাইল সংশ্লিষ্ট জাহাজ গুলো লোহিত সাগরের দক্ষিন এলাকা ত্যাগ করে চলাচল করছে। অতি সম্প্রতি হুতি যোদ্ধারা পরপর দুই দিনে দুই মার্কিন জাহাজে হামলা করার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ হতে বলা হয়েছে পশ্চিমা জাহাজ গুলো যেন লোহিত সাগরের দক্ষিন অংশ বাদ দিয়ে চলাচল করে। হুদি বিদ্রোহীদের সাগরে অবস্থান ও ইসরাইল সংশ্লিষ্ট জাহাজ গুলোতে হামলা পরিচালনার কারনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ জোটভূক্ত দশ দেশ এমন ঘোষনা দিয়েছে। এখানেই শেষ নয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন ঘোষনাও দিয়েছে যে, দেশটির আহবানে যদি কোন দেশ সাড়া না দিয়ে চলাচল করে তাহলে এক্ষেত্রে মার্কিন পতাকাবাহি জাহাজগুলো যেন নির্দেশনা মেনে চলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন ঘোষনার মাধ্যমে স্পষ্ট হচ্ছে যে লোহিত ও ভূ-মধ্যসাগরে হুতি যোদ্ধাদের অবস্থান কেবল শক্তিশালী নয় তারা অপ্রতিরোধ। অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাগরে ও ইয়েমেনে হুতিদের অবস্থান লক্ষ একাধিকবার ক্ষেপনাস্ত্র ও ড্রোন হামলা পরিচালনা করলেও হুতিদের অবস্থানের পরিবর্তন হইনি। সাগরে হুতি বিদ্রোহীদের অবস্থানে মার্কিন ক্ষেপনাস্ত্র হামলা পরিচালনা করলে দশ হুতি যোদ্ধা নিহত হওয়ার পর হুতিরা মার্কিনীদের হামলাকে পরোয়া না করে সাগরে ইসরাইল সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে হামলা অব্যহত রাখে। হুতিদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা কালে নিখোজ দুই মার্কিন নৌ কমান্ডের খোজে সাগরে তল্লাশী অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল পর্যন্ত তাদের সন্ধান বা উদ্ধার কোনটাই সম্ভব হইনি। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের মধ্যে কুটনৈতিক বিরোধ তথা কুটনৈতিক ঐক্যে ফাটল ধরেছে যে কারনে মার্কিনী প্রস্তাবকে সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে ইসরাইল। গতকাল পশ্চিমা মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইলকে গাজায় বোমা হামলা বন্ধের আহবান জানানোর পাশাপাশি বলেছে ইসরাইল ও ফিলিস্তিন দ্বিজাতি রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমেই কেবল গাজা ইসরাইল সম্পর্কের বৈধতা সহ উন্নয়ন ঘটতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন প্রস্তাবকে সরাসরি প্রত্যাখান করে ইসরাইল বলেছে ইসরাইলের জন্য হুমকির কারন হয় এবং সমস্যার ক্ষেত্র বিনির্মান হয় এমন কোন কর্মযজ্ঞ তথা পদ্ধতি, প্রক্রিয়ার বৈধতা কোন অবস্থাতেই দিতে পারে না ইসরাইল। এদিকে উত্তর ও পশ্চিম গাজায় ইসরাইলের বিমান বাহিনীর বিমান হামলায় গতকাল দেড়শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আবারও হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। গাজার হাসপাতাল গুলোতে দৃশ্যতঃ কোন ধরনের চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে না। এমনকি প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা ও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এদিকে ইসরাইলের সাধারন নাগরিকরা গতকাল ও রাজধানী তেল আবিব সহ প্রধান প্রধান সড়ক ও নগরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। উক্ত বিশেষ মিছিলে ইসরাইলীরা যারা হামাসের হাতে বন্দী তাদের মুক্তিদাবী সম্বলিত প্লাকার্ড বহন করা হয়। ইসরাইলী বন্দীদের কাছে কাতার ও ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় ইসরাইলের প্রেরন করা ঔষধ পৌছানো হয়েছে। গতকাল কাতারের পক্ষ হতে আবারও যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। হামাসের স্পষ্ট কথা কোন অবস্থাতেই তারা ইসরাইলের সাথে কোন ধরনের সমঝোতায় যাবে না কারন তারা প্রকাশ্য যুদ্ধে জয়ী হতে না পেরে তাদের শীর্ষ কমান্ডার সহ সাত কমান্ডারকে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বোমা হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে। এদিকে জাতিসংঘ আবারও ইসরাইলকে হামলা বন্ধ ও বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা বন্ধে আহবান জানিয়েছেন এবং উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে ইসরাইলের উচিৎ বিশ্ববাসির মনোভাব অনুধাবন করা। সৌদি আরব পুনরায় ইসরাইলকে হামলা বন্ধের আহবান জানানোর পাশাপাশি দ্বিজাতি অর্থাৎ দুই রাষ্ট্র ও ফিলিস্তিনিকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিলে তারা ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবে। ইসরাইল এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com