দৃষ্টিপাত ডেস্ক ॥ গাজায় ইসরাইলি হামলা এবং গণহত্যার প্রতিক্রিয়া লোহিত সাগর আর ভুমধ্যসাগর পেরিয়ে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। হুতি বিদ্রোহীদের সাফ ঘোষনা ছিল দখলদার ইসরাইলি বাহিনী যদি গাজায় বিমান হামলা সহ গণহত্যা পরিচালনা বন্ধ না করে তাহলে লোহিত সাগর সহ অন্যান্য সাগর গুলোতে ইসরাইল অভিমুখি সকল জাহাজের চলাচল বন্ধ করা হবে একই সাথে হামলা করা হবে। প্রতিনিয়ত সাগরে জাহাজ চলাচল চরম অনিশ্চয়তার মুখে থাকায় পশ্চিমা জাহাজ কোম্পানী গুলো ইতিমধ্যে তাদের বানিজ্যিক জাহাজ চলাচলের রুট পরিবর্তন করেছে। এরই মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন দশটি দেশ সাগর কে নিরাপদ ও নিশ্চিত করনে জোট গঠন করলেও হুতিদের কবল হতে বা হুতিমুক্ত সাগর নিশ্চিত করতে পারছে না। গতকাল ভুমধ্যসাগরে ইসরাইল মুখি একটি হুতি বিদ্রোহীরা হামলা পরিচালনা করেছে বলে পশ্চিমা মিডিয়াগুলো খবর দিয়েছে। পশ্চিমা মিডিয়ার খবরে আরও বলা হয়েছে হুতিরা অত্যাধুনিক ও প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ব্যবস্থায় হামলা করছে। ভূমধ্যসাগরে চলাচল করা জাহাজে হামলার পর পরই ভারত সাগরে বানিজ্যিক জাহাজে ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল পশ্চিমা মিডিয়াগুলোর খবরে জানাগেছে ভারত সাগরে হামলার শিকার জাহাজটি সৌদি আরব হতে রওনা দিয়ে গন্তব্যস্থল ছিল ইসরাইল খবরে আরও বলা হয়েছে উক্ত জাহাজে হামলা ড্রোনের সাহায্যে করা হয়েছে। হামলার পর পরই জাহাজটিতে আগুন ধরে যায়, পরবর্তিতে বিশজনের অধিক কেবিনক্রুকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। ভারত সাগরে জাহাজে হামলা, জাহাজটিতে আগুন ধরে যাওয়া ও জাহাজে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদ্ধার সহ হামলার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ হতে বলা হয়েছে ইরানের অভ্যন্তর থেকে উক্ত জাহাজটিতে হামলা পরিচালনা করা হয়। এদিকে ইসরাইলের হামলা অব্যাহত থাকলে এবার ইরান হুমকি দিয়েছে তারা ভূমধ্যসাগরে বন্ধ করে দেবে। সুয়েজ খাল এবং ভূমধ্যসাগর সংশ্লিস্ট সুয়েজকাল ইরানের অংশ বিশেষ বিধায় ইরানের ভাষায় ইরানের সেইরুপ সক্ষমতা আছে যে তারা ভূমধ্যসাগর বন্ধ করতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইল, তাদের মিত্রদেশ ও তারা ভূমধ্যসাগর বন্ধ করতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইল, তাদের মিত্রদেশ ও পশ্চিমা বিশ্বের নৌ পথের বানিজ্যের অন্যতম পথ ভূ মধ্য সাগরে বিধায় ভূ-মধ্যসাগর বন্ধ করা হলে তার বিরুপ প্রভাব পড়বে পশ্চিমা বিশ্বের বাণিজ্যে। এদিকে ইসরাইলের বিমান বাহিনীর বিমানগুলো অতি তিব্রতা ও ক্ষীপ্রতার সাথে গাজায় বিমান হামলা পরিচালনা করছে। গাজার কোন কোন এলাকাতে ইসরাইল বাহিনী হামাস যোদ্ধাদের প্রতিরোধে আত্মরক্ষার কৌশলে। এরই মধ্যে বরাবরের ন্যায় ইসরাইল কর্তৃপক্ষ প্রচার করেছে যে তাদের বাহিনী গাজায় যুদ্ধরত দুইশতাধিক হামাস সন্ত্রাসী গ্রেফতার করেছে। অন্যদিকে হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসেম ব্রিগেড টেলিগ্রাম বার্তায় জানিয়েছে যে, তাদের হাতে এ পর্যন্ত ছয়শতাধীক দখলদার সেনা নিহত হয়েছে। তাদের যোদ্ধারা বীরবিক্রমে যুদ্ধ করছে। ইতিপুর্বেও একাধিকবার ইসরাইলি বাহিনী প্রচার করে যা তারা হামাসের অতি গুরুত্বপূর্ণ সুড়ঙ্গ ধ্বংস করেছে। গতকাল হামাস এক ভিডিও বার্তায় জানিয়েছে যে তাদের হাতে তাদের আশ্রয় থাকা ইসরাইলি বন্দীদের মাজনের সাথে তাদের কোন যোগাযোগ নেই। বিমান হামলায় তাদের মৃত্যু হতে পারে। হামাস যোদ্ধারা যে পাঁচ ইসরাইলির নিহত বা খুজে না পাওয়ার দাবী করছে তাদের নাম ও প্রকাশ করেছে। এই ভিডিও বার্তাটি প্রকাশ হওয়ার পর থেকে ইসরাইলের মধ্যে আবারও নতুন করে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ দানা বেদেছে। সাধারন ইসরাইলিদের বক্তব্য তাদের সরকার বন্দীদের মুক্ত না করে অহেতুক সাধারন ফিলিস্তীনিদের হত্যা করছে আর সাধারন ফিলিস্তীনিদের হত্যা করতে যেয়ে ইসরাইর জিম্মিরা হত্যাযজ্ঞের শিকার হচ্ছে। গতকাল ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিব সহ বড় বড় শহর গুলোতে বিক্ষোভ হয়েছে। এদিকে গত দুই দিনে প্রবল বৃষ্টিপাতে ইসরাইলের প্রধান প্রধান সড়ক গুলো পানিতে ডুবে গেছে। দেশটির সাধারন মানুষের জীবন যাত্রায় চরম অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পশ্চিমা মিডিয়ার খবরে প্রকাশ গত আড়ইমাসের অধিক সময় পর্যন্ত ইসরাইলের সেনাদের হাতে শতাধীক দেশী বিদেশী সাংবাদিক নিহত হয়েছে। বাহিনীটির মূল লক্ষ্য বস্তু আল জাজিরা টিভির সাংবাদিক, দখলদার বাহিনীর হিসাব এবং বিশ্লেষন এমনই যে তাদের হত্যাযজ্ঞ ও নির্মতা কেবল মাত্র সাংবাদিকদের কল্যানে বিশ্বময় দেখছে বিধায় সাংবাদিকরা তাদের অন্যতম লক্ষ্য বস্তু। এদিকে হুতি বিদ্রোহীরা ইসরাইলের অভ্যন্তরে ক্ষেপনস্ত্র হামলার পর সাগরে জাহাজে হামলা ও জাহাজ চলাচলে বাঁধা দিয়ে আসছে অন্যদিকে লেবাননের হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা ইসরাইলের ভূ-খন্ডে হামলা চালানো অব্যাহত রেখেছে। এরই মধ্যে ইসরাইলের পাল্টা হামলায় গতকাল হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের দুই যোদ্ধা নিহত হয়েছে। হিজবুল্লাহ যে কোন সময়ে ইসরাইলের ভূ-খন্ডে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন ইসরাইলের উচ্চ গালিলি আঞ্চলিক কাউন্সিলের প্রধান জিওরা জেলেজ। তিনি তার আশঙ্কায় বলেন, হিজবুল্লাহর হামলা অপেক্ষা অতি শক্তিশালী ও সুরক্ষিত ট্রানেল আছে সেখান থেকে সাত অক্টোবর হামাস অপেক্ষা বড় ধরনের হামলা পরিচালনা করতে পারে, গত চব্বিশ ঘন্টায় ইসরাইলের বিমান হামলায় গাজায় দুই শতাধিক ফিলিস্তীনি নিহত হয়েছে এরই মধ্যে একই পরিবারের ছিয়াত্তর জন ফিলিস্তীনির মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে। জাতিসংঘ নিরপত্তা পরিষদের গাজায় মানবিক সহায়তার বাঁধা না দেওয়া প্রস্তাব পাশ হওয়য়ার পর ত্রানবাহী গাড়ী ঢুকলেও তা যৎ সামান্য। এদিকে গাজায় হামলা বন্ধে ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসিও মিশরের প্রেসিডেন্ট জেনারেল সিসি টেলিফোন সংলাপ করেছে।