দৃষ্টিপাত ডেস্ক ॥ ইসরাইল যতদিন পর্যন্ত গাজায় হামলা পরিচালনা করবে, তারা নিরীহ ফিলিস্তীনিদের হত্যা বন্ধ না করলে সাগরে ইসরাইল ও তাদের মিত্রদেরকে বিপদজনক পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে। তাদের জাহাজ লোহিত ও ভূ-মধ্যসাগরে চলাচল করতে দেওয়া হবে না। এমন ঘোষনা ছিল ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের এবং তারা গতকাল ও পর্যন্ত সাগরের নিয়ন্ত্রন নিজেদের হাতে রেখে ইসরাইলগামী জাহাজ বন্ধ রাখছে অথবা আটক ও হামলা পরিচালনা করছে। গতকাল ইয়েমেনের বিভিন্ন এলাকাতে হুতিদের অবস্থান লক্ষ্য করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেন একযোগে হামলা পরিচালনা করেছে। হুতি যোদ্ধা ও কমান্ডার আব্দুল কাদের আল মরতাদা বলেছেন, রাজধানী সানা, হোদেদা গভর্নেট, সাদা এবং ধামারের বিভিন্ন এলাকাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ভয়াবহ হামলা পরিচালনা করেছে। সামরিক শক্তির দিক দিয়ে হুতিরা কম শক্তিশালী নয়। তারা ইরান সমর্থিত এবং ইরানের সামরিক বাহিনী হুতিদেরকে সামরিক সহযোগিতার পাশাপাশি সামরিক প্রশিক্ষন প্রদান করে থাকে বলে খবরে প্রকাশ। হুতি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলা নতুন নয়, ২০১৬ সালেও হুতিদের নির্মূল করার লক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হামলা করে। সম্প্রতি লোহিত সাগরে হুতি অবস্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালিয়ে অন্তত দশজন হুতি যোদ্ধাকে হত্যা করে। হুতিদের পক্ষ হতে এই হামলার প্রতিশোধ গ্রহন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এদিকে গতকালও ইসরাইলের বিমান বাহিনীর বিমানগুলো গাজার উত্তরাঞ্চলে ও পশ্চিম অংশে বিমান হামলার পাশপাশি স্থল অভিযান পরিচালনা করেছে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল মধ্য এলাকাতে ইসরাইল কোন ধরনের হামলা পরিচালনা করেনি। উত্তরাঞ্চলে একাধিক আবাসিক ভবনে ইসরাইল বিমান হামলা চালিয়ে অন্তত শতাধিক ফিলিস্তীনিকে হত্যা করেছে। ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ বিরতির বিষয়ে আবারও আলোচনা শুরু করেছে কাতার ও মিশর। গতকাল পশ্চিমা মিডিয়াগুলোর খবরে বলা হয়েছে ইসরাইলের গোয়েন্দা বিভাগ মোসাদের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা কাতারে অবস্থান করছে। হামাসের পক্ষ হতে বলা হয়েছে যে তারা কোন অবস্থাতেই ইসরাইলের সাথে আলোচনায় বসবে না, তবে কাতার ও মিশর হাল ছাড়েনি। যদি সম্মান জনক বিশেষ করে হামাসের জন্য সম্মান সমঝোতা বা যুদ্ধ বিরতির বিষয়টি সামনে আনা যায় তাহলে হয়ত যুদ্ধ বিরতি সম্ভব হতে পারে। হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসেম ব্রিগেড জানিয়েছে হামাস যোদ্ধারা মরতে অথবা মারতে নিজেদের প্রস্তুত রেখেছে এদিকে ইয়েমেনে হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী হিসেবে উল্লেখ করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভাদিমীর পুতিন বলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য আঞ্চলিক সহিংসতা ছড়িয়ে দিচ্ছে। ইয়েমেনে হামলার পর পরই হুতি যোদ্ধারা লোহিত সাগরে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের সেনাদের উপর ব্যাপক হামলা চালায় গতকালের হামলার মধ্য দিয়ে হুতি যোদ্ধারা লোহিত ও ভুমধ্যসাগরে পঞ্চান্নতম জাহাজে হামলা করলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইয়েমেনে হামলার বিষয়ে বলেছে সাগর কে নিরাপদ রাখতে হুতিদের নির্মুলের বিকল্প নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শাখা পেন্টাগন জানিয়েছে সাগরে হুতিদের একাধিক হামলা ভূ-পাতিত করা হয়েছে। পেন্টাগন একই সাথে বলেছে হুতিদের অন্তত ষাটটি স্থাপনায় হামলা পরিচালনা করা হয়েছে। এদিকে হুতি যোদ্ধারা মার্কিন ও বৃটিশ হামলাকে অনাকাঙ্খিত এবং সুদুর প্রয়াসী প্রভাব ফেলবে বলে হুশিয়ারী উচ্চারন করে বলেছে, ইসরাইল ও ইসরাইল সংশ্লিস্ট প্রতিটি জাহাজে হামলা করা হবে। হুতিরা আরও হুশিয়ারী দিয়েছে যে ইসরাইল ও পশ্চিমা বিশ্বের যে কোন স্থাপনায় হামলা করা হবে। পশ্চিমা মিডিয়াগুলোর খবরে বলা হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ও বৃটিশ ঘাঁটি গুলোর হুতিদের হামলার লক্ষ্য বস্তুতে পরিনত হতে পারে। ইয়েমেনে হামলার মধ্য দিয়ে হামাস ইসরাইল যুদ্ধ ভিন্ন মাত্রায় পৌছানোর পাশাপাশি এই যুদ্ধ ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা অমুলক নয়। এদিকে হামাস যোদ্ধারা গতকাল ও গাজার উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকাতে ইসরাইলি সেনাদের উপর হামলা চালিয়েছে। গাজার আশ্রয় শিবির গুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে নানান ধরনের রোগব্যাধি, বিশেষ আর জাবালিয়া শরনার্থী শিবিরে চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারনে আশ্রয় শিবিরটিতে ছড়িয়ে পড়েছে রোগ, ইসরাইলের বিরুদ্ধে দক্ষিন আফ্রিকার মানবতা ও গণহত্যার বিষয়ে দায়ের করা মামলা শুনানী করছে আন্তর্জাতিক আদালত। লেবাননে ইসরাইলি হামলার প্রতিশোধ হিসেবে গতকাল হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা পাল্টা হামলার হুমকি দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসের সামনে মার্কিনীরা ইয়েমেনে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে। গাজা যুদ্ধে প্রতিদিনই ইসরাইলের ক্ষতির পরিমান বাড়ছে। অন্যদিকে খাদ্য হীনতায় উল্লেখযোগ্য অংশ ফিলিস্তীনিরা দিন যাপন করছে।