রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১০:০২ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
সাতক্ষীরায় ট্রাকের ধাক্কায় ১ ভ্যান চালকের করুন মৃত্যু সাতক্ষীরায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা শ্যামনগরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত কদমতলা পি ডি কে মিতালী সংঘের উদ্যোগে তাফসিরুল কোরআন মাহফিল অনুষ্ঠিত আবারও ছড়িয়ে পড়েছে তাপদাহ ঃ আবহাওয়ার সুখবর নেই হামাসের হামলায় বার দখলদার সেনা নিহত ঃ আহত পঞ্চাশ খানপুর ছিদ্দিকীয়া এতিমখানা পরিদর্শন করলেন উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা প্রতাপনগরে ২ দিন ব্যাপী তাফসিরুল কুরআন মাহফিল বিষ্ণুপুর ২দিন ব্যাপি মাহফিল সম্পন্ন কবি মানিক ঘোষের পিতা-মাতার স্মারণে বিশেষ প্রার্থনা

ইসির অনাগ্রহ গুজব বন্ধে সটকে পড়ল মেটা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে ॥ নির্বাচনী গুজব বন্ধে ‘মেটা’ কি করছে কোনো খবর জানে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সৃষ্ট হ্যাকার, ব্লগার বা গুজবকারীরা আরও বেশি উৎসাহী হতে পারেন। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতি পড়তে পারেন ক্লিন ইমেজের প্রার্থী থেকে শুরু করে হেভিওয়েটরাও। এমনকি রাজনৈতিক দল কিংবা ইসি এর বাইরে না। এদিকে, গুজব, আপত্তিকর পোষ্ট বা থ্রেটমূলক কোন শব্দ সামাজিব যোগাযোগ মাধ্যম প্রকাশ পেলে সেটি চিহ্নিত করে তাৎক্ষণিক মুছে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছিল মেটা কর্তৃপক্ষ। ইসির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে চলতি বছরের মধ্যভাগ থেকে দেন-দরবার চালানো শুরু করেন। প্রথম দিকে ইসির দিক থেকে সাড়া কম ছিল। পরের দিকে উদ্যোগটি ভালো এ বিবেচনায় সম্মিলিতভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করেছিল প্রতিষ্ঠান দুটি। এর ফলশ্রুতিতে গত ৩ আগস্ট ইসির সঙ্গে তাদের একটি বৈঠক হয়। সাক্ষাৎতে ইসির পক্ষে নেতৃত্বে দেন অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এবং মেটার বাংলাদেশে নিযুক্ত হেড অব পাবলিক পলিসি রুজান সারোয়ার। সেখানের সিদ্ধান্ত ছিল পরবর্তীতে আরও কয়েকটি সভা করার। এর উদ্দেশ্যে ছিল, – আপত্তিকর পোষ্টটি কোন প্রক্রিয়ায় মুছে ফেলা হবে সে সংক্রান্ত দিক-নিদের্শনা স্থির করার কথা ছিল। এদিকে, মেটার সঙ্গে সভার পর ইসির থেকে বলা হয়েছিল, ফেসবুকের একটা টিমের সঙ্গে আমরা বসেছিলাম। তবে এটা প্রাথমিক একটা আলোচনা। পরে তাদের সঙ্গে আলোচনা আরও হবে। যেকোনো অপপ্রচারের কনটেন্ট আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফাইন্ড আউট করবে ফেসবুক। আরও বলেছিল, নির্বাচনের প্রচারণার জন্য কোন ধরনের কনটেন্টে তারা বিধিনিষেধ আরোপ করবে সে বিষয়ে মেটা ইসির সঙ্গে আলোচনা করে নিবে। যেগুলো কমিশনের কাছে মনে হবে নেগেটিভ প্রচারণা, সেগুলো বন্ধের জন্য বলা হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ কার্যক্রম চালানো হবে। কিন্তু হঠাৎ করেই মেটা চুপচাপ হয়ে যায়। ইসির থেকে তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। অতি-আগ্রহী প্রতিষ্ঠানটি কি কারণে এতো চুপচাপ তা নিয়েও রয়েছে নানামহলে প্রশ্ন। শুধু মেটা বা ফেসবুক কর্তৃপক্ষ নয়; টিকটক ও আইএমও’র (ইমো) পক্ষ থেকেও ইসির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল গুজব বন্ধে পদক্ষেপ নিতে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ‘মেটা’র লক্ষ্য ছিল ভূয়া খবর ও অপপ্রচার রোধেযৌথভাবে তারা ইসির সঙ্গে কাজ করবে। কিন্তু ইসির দিক থেকে আর্থিক সহায়তার নিশ্চয়তা পায়নি শুরু থেকেই। সর্বশেষ এ উদ্যোগের বিষয়ে ইসির থেকে ওই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। এটা বুঝতে পেরে আগেভাগেই সটকে পড়েছে স্যোসাল মিডিয়ার সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম ‘মেটা’ বা ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলে ইসির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। গুজব বন্ধে ইসির কোনো আগ্রহ নেই বলে জানান ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে সভার পর মেটার সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই। বলেন, এ বিষয়ে আমাদের ইন্টারেস্ট নেই। চাইলে মেটা কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে করতে পারেন। এ খাতে আমাদের আর্থিক কোনো সহায়তা নেই এবং বরাদ্দ রাখা হয়নি। ইসির সিস্টেম ম্যানেজার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, আমার কাছে কোনো খবর নেই। ইসির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, শুধু মেটা না; টিকটক ও ইমো এ দুটি প্রতিষ্ঠান সিইসি সঙ্গে সাক্ষাত করার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সরাসরি নাকচ করে দেন। বলেন, তার এ সব বিষয়ে আগ্রহ নেই। চাইলে ওই সব প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে গুজব বন্ধে পদক্ষেপ নিতে পারেন। প্রাপ্ত তথ্যমতে, গুজব-অপপ্রচার থেকে সহিংসতা এবং সহিংসতায় নিরীহ মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটেছে এখানে। বিশেষ করে ধর্মীয় উস্কানি থেকে অপপ্রচার, নির্বাচন কেন্দ্রিক অপপ্রচার এবং এই প্লাটফর্ম ব্যবহার করে জঙ্গিবাদের উত্থান উল্লেখযোগ্য। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু ধর্মীয় ইস্যুতে স্যোসাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিমূলক পোষ্ট দিয়ে সাধারন মানুষকে বিভ্রান্ত করা হয় তা নয়। আরও স্পর্শকাতর ইস্যুতে শামিল হয় কুচক্রীমহল। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, প্রাণ-সংহারী করোনা মহামারির টিকা নিয়েও গুজব ছড়িয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে একটি ষড়যন্ত্রকারী মহল তৎপর চালিয়েছিল। আসন্ন নির্বাচন ঘিরে গুজব চলবে বহুমুখী। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দেয়া স্যাংশন নিয়েও এতোদিন চলেছে নানা মূখরোচক খবর। তবে মেটার নেয়া এ উদ্যোগটি ছিল প্রাসঙ্গিক বলে মত দিয়েছিল বিশেষজ্ঞরা। তবে, আর্থিক নিশ্চয়তা ইসির কাছ থেকে না পাওয়ায় চুপচুপ ইসি। ঢাবির অধ্যাপক মো. জিয়াউর রহমান বলেন, গুজব শুধু নির্বাচন কেন্দ্রিক না। নানা প্রক্রিয়ায় মানুষ ভিকটিমাইজ হয়। কিন্তু আলোচনা পর্যায়ে এটি থেমে যাওয়াটা দুংখজনক। আশা করেছিলেন, উভয় পক্ষই গুজবের বিষয়ে সমঝোতা করে কাজ করবে। এতে রাজনৈতিক দল, স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা ইসি ত্রিপক্ষীয় সুবিধা পেতো। যা-হোক এখনো সময় আছে দেখা যাক কি সিদ্ধান্ত হয়। চবির অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা যেখানেই হোক না কেনো, – মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিরস্কুশ অধিকার নয়। এক্ষেত্রে কতিপয় শর্ত আছে, যেমন – অন্যের অধিকার ক্ষুন্ন না করে, অন্যের ধর্মের উপরে কোনো আঘাত না আসে, কোনো উস্কানিমূলক-ঘৃনা-বিদ্বেষ ইত্যাদি প্রচার করার কোনো সুযোগ নেই। সেটা বাংলাদেশের সংবিধান হোক বা আন্তজার্তিক মানবাধিকারের দলিল হোক বা ইউরোপীয়ান মানবাধিকারের (ইইউ) দলিল হোক। সবক্ষেত্রেই বলা আছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা অবশ্যই কাম্য। তবে মত প্রকাশের নামে ওই কাজগুলো করা যাবে না। আইনের এই অধ্যাপক বলেন, গুজব-অপ-প্রচার ও বিদ্বেষমূলক খবর বন্ধে যে উদ্যোগ নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছিল তা ইতিবাচক। যদি দু’পক্ষের গাফলতিতে এটি না হয় বুঝতে হবে ‘ডাল মে কুচ কালা হে’।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com