মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৫১ পূর্বাহ্ন

ইসির রোডম্যাপ প্রকাশ \ মেট্রোপলিটন ও জেলা সদরের আসনগুলোয় ইভিএম \ নভেম্বরে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২

জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত আউয়াল কমিশন যা করবেন তা এই কর্মপরিকল্পনায় রয়েছে। কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ীই সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত কাজ করবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর ) নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রোডম্যাপ প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে অসুস্থাতার কারণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল উপস্থিত হতে না পারলেও অন্য চার নির্বাচন কমিশনারসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তবে (সিইসি) রোডম্যাপ প্রকাশ করার কথা ছিলো। কিন্তু তিনি অনুষ্ঠানে অংশ নেনটি। এনিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। নির্বাচন কমিশন বলছে, অনেক প্রশ্ন ও আস্থা সঙ্কটের ঘাটতির মধ্যেও কিছু আস্থা অর্জন এগিয়েছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মেট্রোপলিটন ও জেলা সদরের আসনগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে সর্বোচ্চ দেড়শ’ আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। দশম সংসদ নির্বাচনের বাকি সময়ে সব দলের আস্থা অর্জন করে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা করে বর্তমান নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান বলেন, কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্দেশ্য একটাই- অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা। তিনি বলেন, আমরা অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন এবং আমরা অনেক আস্থাশীলতার ঘাটতির মধ্যে আছি। আমিদের কর্মকাণ্ড দিয়ে প্রমাণ দিয়েছি, আমরা কিছুটা হলেও আগে থেকে আস্থা অর্জনে এগিয়ে গেছি। এ কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে নিজেদের জবাবদিহিতা ও বিবেবেকর কাছে দায়বদ্ধতাও বাড়বে বলে উলে­খ করেন এ নির্বাচন কমিশনার। অনুষ্ঠানে কমিশনার রাশেদা সুলতানা এমিলি বলেন, পরিকল্পনা ধরেই এগিয়ে যাবো আমরা। সবার সহযোগিতা পেলে অংশগ্রহণমূলক ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে সক্ষেম হবো আমরা।” নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান জানান, অংশীজন সবার সহযোগিতা দরকার। বাস্তবভিত্তিক ও সময়ভিত্তিক এ রোডম্যাপ বাস্তবায়ন হলে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছোনো যাবে। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে ভোট করার বাধ্যবাধকতা তুলে ধরে নির্বাচন কশিমনার মো. আলমগীর বলেন, এ কর্মপরিকল্পনায় সবার মতামত রাখার চেষ্টা করেছি আমরা। যেসব বিষয় আমাদের আওতায় রয়েছে তা রাখা হয়েছে। তবে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সুপারিশগুলো রাখা হয় নি। তিনি জানান, রোডম্যাপের চ্যালেঞ্জগুলো ধরে মোকাবেলা করে সব কাজ বাস্তবায়ন করা হবে। ভোটের এখনও এক বছর চার মাস বাকি। অনেকে ইসি নিয়ে আস্থাহীনতায় থাকলেও আগামীতে কর্মকাণ্ড দেখে আস্থাশীল হবে। রোডম্যাপ অনুযায়ি ইসির যতো চ্যালেঞ্জ: নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা সৃষ্টি; নির্বাচনের দায়িত্বে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা বিশেষ করে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন; ব্যবহৃত ইভিএমের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা সৃষ্টি; অর্থ ও পেশিশক্তির নিয়ন্ত্রণ; নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা; সব রাজনৈতিক দল কর্তৃক নির্বাচনী আচরণবিধি অনুসরণ; নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে বিপক্ষ/প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী/সমর্থক/পুলিশ/প্রশাসন কর্তৃক কোনো রকম বাধার সম্মুখীন না হওয়া; জালভোট/ভোটকেন্দ্র দখল/ব্যালট ছিনতাই রোধ; প্রারর্থী/এজেন্ট/ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে অবাধ আগমন; ভোটারদের পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থীকে ভোট প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি; নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা/কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান; পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিতকরণ; পর্যাপ্ত সংখ্যক নির্বাহী/জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিতকরণ; নিরপেক্ষ দেশি/বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োজিতকরণ। চ্যালেঞ্জগুলো উত্তরণের উপায়: বিশিষ্ট নাগরিক ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সংবিধান ও নির্বাচনী আইন অনুযায়ী যে সুপারিশগুলো অধিকাংশজন করেছেন তা বাস্তবায়ন; সব রাজনৈতিক দল যাতে নির্বাচনী প্রচারকার্য নির্বিঘ্নে করতে পারে সে বিষয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব রাখা; সরকারের কোনো সংস্থা কর্তৃক হয়রানিমূলক মামলা না করা; প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী-সমর্থক দ্বারা প্রার্থী, সমর্থক ও তাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ না করা। এমন হলে আইন অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ; নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা, বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া; মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন, জননিরাপত্তা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, আনসার ও ভিডিপির প্রধানদের সঙ্গে সভা করে তাদের অধিন কর্মকর্তা যারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন তারা যেন আন্তরিকতা ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেন সে বিষয়ে অধিনস্তদের নির্দেশ দেওয়া; প্রত্যেক ভোটকক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন; ভোট কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন; ইভিএমের ব্যবহার সবোর্চ্চ ১৫০ আসনে সীমাবদ্ধ রাখা। শুধুমাত্র মেট্রোপলিটন ও জেলা সদরের আসনগুলোতে ব্যবহার করা; নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার পরদিন থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োগ; নির্বাচনী আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রয়োগ, ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক সঙ্গে সঙ্গে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ; আরপিও ও নির্বাচনী আচরণ বিধিতে কতিপয় প্রয়োজনীয় সংশোধনের প্রস্তাব করা; রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার যতদূর সম্ভব নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়া; রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের একটি তালিকা তৈরি করে তাদের প্রশিক্ষণ নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার পূর্বেই শুরু করা যাতে যথাযথভাবে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হয়; যে সব প্রিজাইডিং/সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের বিষয়ে প্রার্থীর যুক্তিসংগত আপত্তি থাকবে তাদের নিয়োগ না দেওয়া; দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগ ও তাদের জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে ব্রিফিং করা; গণমাধ্যম কর্মী নিয়োগ ও তাদের জন্যও ব্রিফিংয়ের ব্যবস্থা করা; নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনে অনীহা, পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন-১৯৯১ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা; প্রার্থীদের জনসভা করার জন্য স্থান, তারিখ, সময় সিডিউল করে দেওয়া। ভোটে ইভিএম ব্যবহার: ইসির বলছে এ পর্যন্ত যত নির্বাচন হয়েছে ইভিএমে কারচুপির প্রমাণ কেউ দিতে পারেনি। আর এই মেশিনে কারচুপি সম্ভব নয়। কেবল মনস্তাত্বিক ধারণা থেকে ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ করা হয়। সংলাপে ১২ দল সরাসরি ও ১১টি শর্ত সাপেক্ষে ইভিএম চেয়েছে, আর ৬টি দল সরাসির বিপক্ষে অবস্থা নিয়েছে বলে রোডম্যাপে উলে­খ করা হয়েছে। সংসদীয় আসনের সীমানা: কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে— ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্র্নিধারণে নতুন একটি নীতিমালা করা হবে। যার ভিত্তিতে জিওগ্রাফিক্যালি ইনফরমেশন সিস্টেম সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে ২০২৩ সালের মার্চে আসনগুলোর সীমানা বিন্যাসের খসড়া প্রকাশ করা হবে। এপ্রিলে সেই খসড়ার ওপর দাবি আপত্তি নিয়ে মে মাসে সেগুলো নিষ্পত্তির পর জুন মাসে ৩০০ আসনের পরিবর্তিত সীমানার গেজেট প্রকাশ করা হবে। ভোটার তালিকা ও ভোটকেন্দ্র: বর্তমানে হালনাগাদের কাজ চলমান রয়েছে। ২০২৩ সালের ২ মার্চ হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ করা হবে। আর সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে প্রকাশ করা হবে ৩০০ আসনের ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা। অন্যদিকে ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি। এক্ষেত্রে ২০২৩ সালের জুনে কাজ হাতে নেওয়া হবে। জুলাইয়ে খসড়া প্রকাশ, আগস্টে সেই খসড়ার ওপর দাবি আপত্তি নিয়ে তা নিষ্পত্তি করা হবে। এরপর ভোটগ্রহণের ২৫ দিন আগে ভোটকেন্দ্রের গেজেট প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন। দলগুলোর নীরিক্ষা: নিবন্ধিত দলগুলোর কার্যক্রম খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হবে চলতি সেপ্টেম্বরেই। এক্ষেত্রে সব তথ্য পর্যালোচনা করে ২০২৩ সালের মে মাসে কোন কোন দল নিবন্ধন বহাল থাকবে সেই সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। আর একই বছর জুনে প্রকাশ করা হবে নিবন্ধিত দলগুলোর চূড়ান্ত তালিকা। এর আগে মে মাসে দেওয়ার হবে নতুন দলের নিবন্ধন। এছাড়া ২০২৩ সাল থেকেই নেওয়া হবে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ, সফটওয়্যার প্রণয়ন, প্রচার কার‌্যক্রম ও পর্যবেক্ষক যাচাই-বাছাইকরণ কার্যক্রম। ইতোমধ্যে সামগ্রিক কর্মকাণ্ড তদারকি এবং তা চূড়ান্তকরণের জন্য নির্বাচন কমিশনারদের নেতৃত্বে বিষয়ভিত্তিক আলাদা আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে। সবার মতামতের আলোকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করে তোলা সম্ভব হবে বলেও রোডম্যাপে উলে­খ করেছে ইসি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com