এফএনএস: ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থল ঢাকা ও গাজীপুরে ফিরতে শুরু করেছেন চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে গাজীপুর চৌরাস্তায় ঢাকামুখী বাসে যাত্রী চলাচল অন্যদিনের তুলনায় বেশি ছিল। তবে রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল উত্তরবঙ্গসহ দেশের প্রায় ৩০টি জেলার প্রবেশপথ গাজীপুর। এবার ঈদে ঘরমুখো মানুষদের নির্বিঘেœ বাড়িতে পৌঁছাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। যার ফলে গাজীপুরের ট্রাফিক ব্যবস্থা ছিল অন্যবারের থেকে অনেকটা স্বস্তিদায়ক। এদিকে, ঈদ শেষে ঘরে ফেরা মানুষদের ঢাকামুখী যাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘœ করতে গাজীপুর ট্রাফিক বিভাগ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুলাহ আল মামুন জানান, ঘরে ফেরার জন্য গন্তব্যমুখী যাত্রীদের যেভাবে সেবা দিয়েছিল এখন কর্মস্থলে ফিরে আসার সময় সবাইকে সমভাবে সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে গাজীপুরের ট্রাফিক বিভাগ। রংপুর থেকে গাজীপুরে আসা এক পোশাকশ্রমিক জানান, বাড়ি যাওয়ার সময় বাসে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়েছে। আসার সময় আবার বাড়তি ভাড়া দিয়ে কর্মস্থলে ফিরতে হয়েছে। তবে রাস্তায় যানজট নেই বললেই চলে। ফিরতি পথে তাদের কোনো ভোগান্তি পোহাতে হয়নি বলে জানিয়েছেন যাত্রীরাও। এদিকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ঢাকামুখী যাত্রীদের কারণে যানবাহনের কিছুটা চাপ বেড়েছে সিরাজগঞ্জ মহাসড়কে। তবে অন্যবারের মতো যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি যাত্রীদের। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে সিরাজগঞ্জ মহাসড়কের চান্দাইকোনা, হাটিকুমরুল গোলচত্বর, কড্ডার মোড় ও বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানা মোড় চত্বর এলাকায় সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা যায়। হাটিকুমরুল ও কড্ডার মোড় এলাকায় যাত্রী ওঠা-নামার কারণে যানবাহনের কিছুটা চাপ তৈরি হয়। তবে এই সড়কের হটস্পট খ্যাত নলকা সেতু ও সংলগ্ন এলাকায় কোনো যানবাহনের চাপ নেই। এসব এলাকায় যানবাহন চলাচলে স্বাভাবিক গতি রয়েছে। হাটিকুমরুল হাইওয়ের থানার ওসি লুৎফর রহমান বলেন, হাটিকুমরুল গোলচত্বর ও তার আশপাশে কোনো যানজট নেই। তবে যানবাহনের চাপ একটু রয়েছে। মহাসড়কে কড্ডার মোড় এলাকায় কর্মরত ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক আবুল আলা মওদুদ বলেন, ঈদের ছুটি শেষে মানুষ ঢাকামুখী হওয়ার কারণে সকাল থেকে এই মহাসড়কে যানবাহনের চাপ একটু বেড়েছে। তবে কোথাও যানজট নেই। মানুষ যেন নির্বিঘেœ কর্মস্থলে যেতে পারেন সে লক্ষ্য রেখে জেলা ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছে। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার এসআই মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সকাল সেতু পশ্চিম পাড় থেকে শুরু করে আমরা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ডিউটি করছি। যানবাহনের হালকা চাপ রয়েছে। তবে কোথাও যানজট সৃষ্টি হয়নি। দেশের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হয়েছে গত মঙ্গলবার। এরপর ঈদের ছুটি শেষ হয়েছে বুধবার। তাই ঈদের ছুটি শেষে এখন ঢাকা ফিরছেন রাজধানী ছেড়ে ঘরে ফেরা ঘরমুখো মানুষগুলো। এদিকে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা যায়, প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেন থেকেই প্রায় হাজারের বেশি মানুষ প্লাটফর্মে নামছেন। সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে কমলাপুর রেলস্টেশনে ৫ নম্বর প্লাটফর্মে এসে পৌঁছায় তারাকান্দি থেকে ছেড়ে আসা যমুনা এক্সপ্রেস। ট্রেনের যাত্রী হয়ে আসা রাজধানীর একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির কর্মী ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, বাবা-মাকে ছেড়ে শহরে আসাটা একটু কষ্টের। কিন্তু কাজের সুবাদে কিছু করার নেই, বাধ্য হয়ে আসতে হয়। যাওয়ার সময় ভ্রমণ একটু কষ্টদায়ক হলেও, আজ ফেরার ভ্রমণটা ভালো ছিল। একই ট্রেনে সরিষাবাড়ী থেকে আসা হাফিজুর রহমান বলেন, অনেক কষ্ট হলেও ঈদের একদিন আগে বাড়ি গিয়েছিলাম। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চাকরি করি। কোন উপায় নেই, তাই আজই চলে আসতে হল পরিবার নিয়ে। কাল থেকে অফিস শুরু। ফিরতি পথে ট্রেনের টিকিট পেতে এবং আসতে কোন ভোগান্তি হয়নি। খুব সুন্দর ভাবে আসতে পেরেছি। আরো কিছুদিন আব্বা-আম্মার সঙ্গে থাকতে পারলে বেশি ভালো লাগতো। বেলা ১১টায় রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশনের ৪ নম্বর প্লাটফর্মে সিরাজগঞ্জ থেকে এসে পৌঁছায় সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস। ওই ট্রেন দিয়ে প্রায় দেড় হাজারের বেশি মানুষ রাজধানীতে প্রবেশ করেন। তাদের একজন হাসান আলী বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজ, কোনো সুযোগ নেই একটি দিন বেশি কাটিয়ে আসবো। শনিবার থেকে কাজে যোগ দিতে হবে। তাই হাজার কষ্ট হলেও বাবা-মাকে গ্রামে রেখে আসতে হয়েছে। ট্রেনে যতটা ভিড় হবে ভেবেছিলাম কিন্তু ততটা ভিড় হয়নি। সুন্দরভাবে আসতে পেরেছি। অন্যদিকে গতকাল শুক্রবার ঈদের চতুর্থ দিনে যাত্রীর উপস্থিতি বাড়লেও অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়নি সদরঘাট টার্মিনালে। কোনও ধরনের ঝক্কি না থাকায় স্বস্তি নিয়ে ঢাকা ফিরছেন দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথের যাত্রীরা। এদিনও নিরিবিলিতে ঢাকা ছেড়েছেন কিছু যাত্রী। ঘাটে আসা লঞ্চগুলোর স্টাফরা বলছেন, রোববার অফিস খোলায় শনিবার থেকে ফিরতি মানুষের চাপ বাড়তে পারে। গতকাল শুক্রবার সদরঘাট এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, সকালে বিভিন্ন রুট থেকে ঘাটে আসা লঞ্চগুলোতে যাত্রী সংখ্যা ছিল স্বাভাবিক সময়ের মতো, নেই বাড়তি চাপ। চাঁদপুর, মুলাদি, চরফ্যাশন, হাতিয়া, শরীয়তপুর, ভোলার ইলিশাসহ কয়েকটি রুটের লঞ্চে ঢাকা ছেড়েছেন অনেক যাত্রী। লঞ্চমালিক সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ফিরতি লঞ্চগুলোতে যাত্রী কম থাকায় সবাই স্বস্তি নিয়েই ঢাকায় ফিরে আসছেন। হঠাৎ করে যাত্রীর চাপ বেড়ে গেলেও সমস্যা হবে না, আমাদের লঞ্চগুলোর প্রস্তুত আছে। সদরঘাট নৌ থানার ওসি কাইয়ুম আলী সরদার বলেন, আগামীকাল (আজ) যেহেতু শনিবার, যাত্রীর চাপ থাকবে। সেজন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। যেকোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতে টার্মিনাল, পন্টুনসহ ঘাট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো হবে।