রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:০৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
কলারোয়ার তুলসীডাঙ্গায় বিএনপির মতবিনিময় সভা শ্যামনগরে ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির নির্বাচনে সভাপতি আসাদুল্লাহ, সম্পাদক হাফিজুর ব্রহ্মরাজপুরে সেলুন মালিক কল্যাণ সমিতির কমিটি গঠন সভাপতি শম্ভু সম্পাদক মানিক সাতক্ষীরা জেলা চিংড়ি পোনা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সভা সাতক্ষীরা স্কাউটস্ ত্রৈ—বার্ষিক কাউন্সিল কমিশনার শাহজাহান সম্পাদক মনোরঞ্জন পুরাতন সাতক্ষীরা সরলাপাড়া যুব সংঘের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিল পীরমাতা ব্লাড ব্যাংক নলতা শরীফ’র প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও মিলন মেলা অনুষ্ঠিত আশাশুনির খাজরা ও বড়দল সীমান্তে কালকী স্লুইস গেট পরিদর্শনে রবিউল বাশার শ্যামনগরে মটর সাইকেল দূর্ঘটনায় চালক নিহত ও আহত ১ কালিগঞ্জে সু—নাগরিকের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ

উদ্বেগ উৎকন্ঠায় উপকূলের মানুষ \ সাতক্ষীরায় ১৯৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার \ ২০২০ সালের ২০ মে উপকূলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের ক্ষত কাটিয়ে উঠার আগেই আর একটি ঘূণিঝড় “অশনি” আঘাত হানার আশঙ্কায় উপকূলের মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ প্রতিবছর এক বা একাধিক ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ¡াসের সাথে সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয় এখানকার মানুষের। বিশেষ করে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডর, ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলা, ২০১৩ সালের ১৬ মে মহাসেন, ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই কোমেন, ২০১৬ সালের ২১ মে রোয়ানু, ২০১৭ সালের ৩০ মে মোরা, ২০১৯ সালের ৩ মে ফণি, ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর বুলবুল, ২০২০ সালের ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান লন্ড-ভন্ড করে দেয় গোটা উপকূলীয় অঞ্চল। তাই নতুন করে ঘুণিঝড় অশনি এখানকার মানুষের মাঝে উদ্বেগ উৎকন্ঠা বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমানে উপকূলীয় এলাকায় ৮ হাজার ৯০০ বর্গকিলোমিটার বেড়িবাঁধ অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আকাশে মেঘ ডাকলেই মানুষরা আঁতকে ওঠেন। পানি একটু বাড়লেই ঘুম বন্ধ হয়ে যায় তাদের। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ভুক্তভোগীরা বলছে জোড়াতালি দিয়ে বাঁধ সংস্কারে শুধু সরকারী অর্থের অপচয় হয়েছে। গত শতকে অর্থাৎ ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত ৪০টি প্রাকৃৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে এসব অঞ্চলে। ১৯৭০ পরবর্তী সময়ে এসব এলাকায় ১৩টির বেশি মারাত্মক ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে, যা এ অঞ্চলের মানুষের জীবন, সম্পদ, আশ্রস্থল, গবাদিপশু এবং উপকূলীয় অবকাঠামোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। গবেষণা সূত্র জানায়, গত ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রাণহানি ঘটেছে ১৯৭০ সালের প্রাকৃৃতিক দুর্যোগে ৩ লাখ। এর আগে ১৯৬৫ সালে ঘণ্টায় ১৬১ কিলোমিটার গতি আসা ঘূর্ণিঝড়ে ১৯ হাজার ২৭৯ প্রাণহানি হয়। একই বছর ডিসেম্বরে ২১৭ কিলোমিটার গতিতে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ৮৭৩ প্রাণহানি হয়। ১৯৬৬ সালের অক্টোবরের প্রাকৃৃতিক দুর্যোগে ৮৫০ জনের প্রাণহানি হয়। ১৯৮৫ সালের মে মাসের ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৫৪ কিলোমিটার। এর আঘাতে ১১ হাজার ৬৯ প্রাণহানি হয়। ১৯৯১ সালের এপ্রিলে ২২৫ কিলোমিটার গতিতে আসা ঘূর্ণিঝড়ের জলোচ্ছ¡াসের উচ্চতা ছিল ৬ থেকে ৭.৬ মিটার। এই দুর্যোগে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮৮২ প্রাণহানি হয়। ১৯৯৭ সালের মে মাসে ২৩২ কিলোমিটার বেগে আসা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ১৫৫ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০০৭ সালের নভেম্বরের সিডরে ২ হাজার ৩৬৩ জনের প্রাণহানি হয়। এই ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২৩ কিলোমিটার। ২০০৯ সালের মে মাসের আইলায় ১৯০ প্রাণহানি হয়। ২০২০ সালের ২০ মে ঘুর্ণিঝড় আম্পানে ২০ জনের প্রাণ হাণি হলেও ও বেড়িবাঁধসহ ফসলাদিও ব্যাপক ক্ষতি হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, সুপার সাইক্লোন সিডরে উপকূলীয় ৩০ জেলার ২ হাজার ৩৪১ কিলোমিটার বাঁধ বিধ্বস্থ হয়। এর মধ্যে সম্পূর্ণ বিলীন হয় ৩৯১ কিলোমিটার। ১ হাজার ৯৫০ কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। উপ্র্র্রকূলীয় বাসিন্দাদের সুরক্ষিত রাখতে সরকার শত শত কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও তাদের ঝুঁকিমুক্ত জীবন নিশ্চিত হচ্ছে না কোনোভাবেই। প্র্র্রানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের ১৯ জেলার ১৪৭ উপজেলার ১৩ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা উপকূলীয় অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত। প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ উপকূলীয় এ জনপদে বসবাস করেন প্রায় ৪ কোটি মানুষ। এদিকে ঘূর্ণিঝড় “অশনি” মোকাবেলায় উপকুলীয় জেলা সাতক্ষীরায় সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। খোলা হয়েছে ১শ’৯৭ টি সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র্র। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধে চলছে সংস্কার কাজ। এদিকে, সোমবার সকাল থেকে জেলাব্যাপী গুড়িগুড়ি বৃষ্টি বয়ে চলে। সোমবার দুপুরে ওয়েবিনারে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক হয়েছে। জেলার সরকারি ১৯৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে। এছাড়া ৭শ’ ৪০টি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান দূর্যোগকালিন সময়ে প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে সাড়ে তিন লাখ লোক আশ্রয় নিতে পারবেন। স্বাস্থ্য বিভাগের ৮৬টি মেডিকেল টিম গঠন করে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া দূর্যোগকালিন সময়ে লোকদেরকে সরিয়ে নিতে ট্রলার প্রস্তুত করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রায় তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে দূর্যোগে আক্রান্ত লোকদের সরিয়ে নিতে। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক জুলফিকার আলী জানান, অশনির অগ্রভাগের মেঘমালার কারণে উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৗশলী শামীম হাসনাইন বলেন, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ৮শ’ কি.মি. বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৪৪টি পয়েন্টের বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সোমবার থেকে ওই সকল স্থানে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com