মোস্তাফিজুর রহমান, আশাশুনি \ সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নত সড়ক যোগাযোগ সুবিধা পেতে জন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক গুলো এলজিইডি (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর) থেকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে মালিকানা হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছেন আশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ। আশাশুনি উপজেলার এলজিইডি’র অধিনে কার্পেটিং সড়ক ২২২.৫৬ কিঃ মিঃ, আরসিসি সড়ক ৪.০৪ কিঃ মিঃ, এইসবিবি ও ইটের সোলিং মোট ২৮৯.৪৯ কিঃ মিঃ এবং কাঁচা সড়ক মোট ৩৮৩ কিঃ মিঃ। পক্ষান্তরে উপজেলায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধিনে মাত্র ৪১ কিলোমিটার সড়ক যার মধ্যে শ্রীউলা ইউনিয়নের কলিমাখালী কৃষ্ণ মন্ডলের বাড়ি থেকে ঘোলা ত্রি-মোহনী পর্যন্ত দেড় কিঃ মিঃ এইসবিবি এবং মানিকখালী ব্রীজের সংযোগ সড়ক থেকে বড়দল ব্রীজ পর্যন্ত ৬ কিঃ মিঃ সড়কের অবস্থা লাজুক। সরকারের চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে, উপজেলাতে উৎপাদিত পন্য দেশের মধ্যে এবং দেশের বাহিরে পাঠাতে, স্থানীয় মোকাম গুলোর ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখতে, গৃহ নির্মাণসহ স্থানীয়দের বিভিন্ন প্রয়োজনে, কখনো কখনো সটকট রাস্তা হওয়ার কারনে জেলা সদর থেকে আশাশুনি উপজেলার উপর দিয়ে মালামাল বোঝাই ভারী যানবাহন গুলো প্রতিনিয়ত ভারী যানবাহনের চাপ নিতে অক্ষম এলজিইডি’র সড়ক গুলো ব্যবহার করে থাকে। ভারী যানবাহন চাপ সহ্য করতে না পেরে নির্ধারিত মেয়াদের পূর্বেই সড়ক গুলো মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্যবহারে অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। বর্তমান সরকারের অভূতপূর্ব উন্নয়নের ধারাবাহিকতা সমন্মত রাখতে উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম বুধহাটা টু কালিগঞ্জ ভায়া উজিরপুর সড়কের আশাশুনি উপজেলার মধ্যে ৯ এবং কালিগঞ্জ উপজেলার মধ্যে ১৭ কিঃ মিঃ সড়ক, কুল্যার মোড় টু বাঁকা বাজার ভায়া কাদাকাটি ১৪.৩৯ কিঃ মিঃ সড়ক, কাদাকাটি হলদে পোতা ব্রীজ টু প্রতাপনগর ভায়া গোয়ালডাঙ্গা বাজার ৩৪.৮০ কিঃ মিঃ সড়ক, চিলেডাঙ্গা মোড় টু ব্যাংদহা ব্রীজ ভায়া কুঁন্দুড়িয়া ৮.৪ কিঃ মিঃ সড়কের মধ্যে আশাশুনির মধ্যে সাড়ে ৬ কিঃ মিঃ যার মধ্যে কোয়ার্টার কিঃ মিঃ কাঁচা এবং বাকি ২ কিঃ মিঃ সড়ক সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মধ্যে, ব্যাংদহা ব্রীজ টু বদরতলা বাজার ভায়া হাজিপুর ৫.৮২ কিঃ মিঃ সড়ক, আশাশুনি সদর টু চাম্পাফুল- কালিবাড়ি দিঘীর পাড় পর্যন্ত ৫.৩ কিঃ মিঃ সড়ক, চাম্পাফুল- কালিবাড়ি দিঘির পাড় টু বাশিরামপুর ভায়া বদরতলা বাজার ১২ কিঃ মিঃ সড়কসহ উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক গুলো উন্নত সড়ক যোগাযোগ সুবিধার আওতায় আনা সময় উপযোগী ও যৌতিক দাবি বলে মনে করছে উপজেলার সচেতন মহল। উলেখিত সড়ক গুলোর অধিকাংশই সড়ক ও জনপথ বিভাগের একমাত্র দীর্ঘ সাতক্ষীরা টু কোলা-ঘোলা ভায়া আশাশুনি সড়কের শাখা সড়ক বা কোন না কোন ভাবে সওজ এর এ সড়কের সাথে সংযুক্ত হওয়ায় জেলা সদর থেকে আসা অধিকাংশ ভারী যানবাহন প্রয়োজনের তাগিদে নিরুপায় হয়ে প্রতিনিয়ত এলজিইডি’র এ সকল সড়ক ব্যবহার করে থাকে। ভারী যানবাহনের চাপে পুরানো রাস্তা তো দুরের কথা সদ্য নির্মিত রাস্তা গুলোও নিমিষেই নষ্ট হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে দীর্ঘ মেয়াদী জন ভোগান্তি পোহাতে হয় উপজেলাবাসিকে। দুই যুগ পূর্বেও সাতক্ষীরা জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বুধহাটা বাজার ও দক্ষিণ বঙ্গের প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী বড়দল মোকাম স্ব স্ব ঐতিহ্য ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলো নদী পথে মালামাল পরিবহনের সুবিধা থাকায়। ঐতিহ্যবাহী মোকাম গুলো সংলগ্ন নদী তার নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় এবং উন্নত সড়ক যোগাযোগ সুবিধা না থাকায় মোকাম গুলো তাদের ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। উন্নত সড়ক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার উপজেলায় উৎপাদিত সাদা সোনা নামে খ্যাত বাগদা চিংড়ি এবং কার্প জাতীয় মাছের উৎপাদন ও বিপণনে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে চাষী ও ব্যবসায়ীরা। উপজেলার এলজিইডি’র সড়ক গুলোর প্রস্থ এতই সংকিন্ন যে এসকল সড়কে মাঝারী বা ভারী যানবাহন প্রবেশ করলে অপর দিক থেকে আসা অন্য যে কোন যানবাহনকে সাইট দিতে গিয়ে পড়তে হয় বিপাকে। এসব সড়কে মাঝারী বা ভারী যানবাহন প্রবেশের পর অন্য যে কোন যানবাহনকে অতিক্রম বা ক্রস করতে গেলে যানবাহন উল্টে ঘটে দূর্ঘটনা। জানাগেছে, সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপদ বিভাগের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহম্মেদ সাতক্ষীরাতে যোগদানের পর আশাশুনি উপজেলার জন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক গুলোকে উন্নত সড়ক যোগাযোগ সুবিধার আওতায় নিতে নিজেদের অধিনে মালিকানা হস্তান্তরের দাবি জানালে সেটি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে উন্নত সড়কের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয় আশাশুনি উপজেলাবাসী। এছাড়া যে সংস্থার দায়িত্বে নতুন সড়ক যাবে তাদের হিসাবে কিলোমিটার বেড়ে যাবে এবং কাজও বেড়ে যাবে। যারা মালিকানা হারাবে তাদের কাজ কমে যাবে। এজন্যই কেউ মালিকানা ছাড়তে চায় না বলে ধারণা স্থানীয়দের। এক্ষেত্রে উপজেলাবাসী বড় রাস্তার যে সুফল পাওয়ার কথা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া এলজিইডি’র জন গুুুরুত্বপূর্ণ সড়ক গুলো সম্প্রসারিত সড়ক নেটওয়ার্কের আওতায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের মালিকানায় হস্তান্তরিত হলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের মানদণ্ড অনুযায়ীই সংস্কার করা হবে। এতে করে জনগণ উন্নত সড়ক যোগাযোগর সুবিধা ভোগ করতে পারবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালালেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলোর সমন্বয়হীনতা ও দীর্ঘ স্থায়ী যৌথ পরিকল্পনার অভাবে উপজেলা পর্যায়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার সু-পরিকল্পিত কোন পদক্ষেপ কমই দৃশ্য মান হতে দেখা যায়। দপ্তর গুলোর সমন্বয়হীনতার কারনে এলজিইডি কর্তৃক পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিনস্থ একাধিক সদ্য নির্মিত কার্পেটিং সড়কের উপর নদী রক্ষা বাঁধ বড় করার লক্ষে মাটি ফেলতে দেখা গেছে। উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় এলজিইডি সড়ক ঘেঁষে মৎস্য ঘের থাকায় সড়কের দু’ধারের মাটি নরম হয়ে পড়ায় ভারী যানবাহনের চাপে সড়কে অধিকাংশ স্থানে ভেবে যেতে দেখা যায়। এরপর বর্ষা মৌসুম আসলেই সড়কে পানি জমে এসকল স্থান গুলো নষ্ট হতে শুরু করে। উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার আওতায় এনে উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক গুলোর দু’ধার দিয়ে প্যারাসাইটিং করা গেলে দীর্ঘ মেয়াদি সুবিধা ভোগ করতে পারবে জনগণ। সম্প্রতি উপজেলার নদী পূণ খনন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় খননকৃত নদীর প্রস্থের তুলনায় বাঁকড়া ব্রীজ ও শালখালী(কামালকাটি) ব্রীজের দৈর্ঘ কম হওয়ায় এবং ব্রীজের প্লিয়ারের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ার ব্রীজ দুটি ভেঙে পড়ে, একই সময়ে চাপড়া বেইলী ব্রীজের উপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় মাঝারী ও ভারী যানবাহন চলাচলে পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। প্রায় বছর খানেক থেকে দৈনন্দিন প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে উপজেলাতে আগত ভারী যানবাহন নিরুপায় হয়ে বুধহাটা টু উজিরপুর সড়ক বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে। ব্যস্ততম এ সড়ক দিয়ে অতিমাত্রায় ভারী যানবাহন চলাচল করায় রাস্তার অধিকাংশ স্থান মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ছোট, মাঝারী ও ভারী যে কোন যানবাহন চলাচলে একেবারে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এ সড়কে প্রতিনিয়তই ভারী যানবাহন ভেবে জন ভোগান্তি চরমে পৌঁছে যেতে দেখা যায়। উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ এলজিইডি’র সড়ক গুলো সওজ এ হস্তান্তরের দাবির প্রেক্ষিতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের সাথে কথা বললে তারা দৈনিক দৃষ্টপাত-কে জানান, যদি জনগণের কল্যাণের কথা ভাবি তাহলে এসব রাস্তা কার দায়িত্বে থাকবে সেটি নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দক্ষতা এবং উলেখিত এলাকার প্রয়োজনীয়তার ওপর। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে জনগনের কল্যানের চেয়ে নিজেদের ক্ষমতার দাম্ভিকতা বহিঃপ্রকাশে ব্যস্ত স্ব স্ব অধিদপ্তর। এছাড়া সড়কের মালিকানা হস্তান্তরের কারণে কারো কাজ কমে কারো কাজ বেড়ে যাওয়ায় আর্থিক মুনাফা লাভ ও লোকসানের বিষয়টি জড়িত বিধায় তারা সড়ক হস্তান্তরে বিরোধীতা করছে এমনটি ধারনা অনেকেরই। কেউ কেউ মনে করছেন যে সংস্থা বেশি দক্ষতা দেখাতে পারে তাকেই গুরুত্বপূর্ণ সড়ক গুলোর দায়িত্ব দেওয়া উচিত। কিন্তু এখানে তো দক্ষতার প্রতিযোগিতা হচ্ছে বলে মনে হয় না। সেটি হলে দেশ ও জনগণ উপকৃত হতো। দেশের অব্যহত উন্নয়নের সাথে আশাশুনি উপজেলার উন্নয়নের ধারা সমন্মত রাখতে এবং উপজেলাবাসীর সুবিধার্থে জন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক গুলো এলজিইডি থেকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে স্থানান্তরের দাবি যৌক্তিক। এবিষয়ে কথা বললে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আশাশুনি উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ নাজিমুল হক দৃষ্টিপাত-কে বলেন, আন্ত মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সড়ক গুলো স্ব স্ব দপ্তর বাস্তবায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে। এ বিষয়ে আমাদের মন্তব্য করার কোন ইখতিয়ার নেই।