এফএনএস: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৩ বছর দেশে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রয়েছে, যার ফলে উন্নয়ন হচ্ছে। উন্নয়নের এই গতিধারা যেন থেমে না যায় সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে কাজ করারও আহŸান জানিয়েছেন তিনি। গতকাল বুধবার সকালে গণভবন প্রান্ত থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে শপথ বাক্য পাঠ করানোর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচনের আগে জনগণের কাছে দেওয়া ‘ওয়াদা’ এবং দায়িত্বগ্রহণের আগে নেওয়া ‘শপথ’ এর কথা মনে রেখে জনগণের কল্যাণে কাজ করার আহŸান জানান প্রধানমন্ত্রী। জনকল্যাণে কাজ করার শপথ মেনে জনগণের কাছে করা ওয়াদা পূরণ করার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আপনাদের কাছে আমাদের একটাই অনুরোধ থাকবে, আপনারা উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখবেন, মানুষের কাছে যে ওয়াদা দিয়ে ভোট নিয়েছেন সেই ওয়াদা কখনো ভুলবেন না। মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন। আপনারা যে শপথ গ্রহণ করেছেন জনগণের কল্যাণে কাজ করবেন, সেই শপথটা কখনো আপনারা ভুলবেন না। টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যেকোনো একজন রাজনৈতিক নেতার জন্য নিজের স্বার্থ না দেখে, পরের স্বার্থে কাজ করা, জনগণকে কতটুকু দিতে পারলাম, কতটুকু তাদের জন্য করতে পারলাম, সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। যতটুকু আপনি দিতে পারবেন তাতেই আত্মতৃপ্তি। নিজের ভোগ বিলাসে না। শেখ হাসিনা বলেন, রাজনৈতিক নেতা হতে হলে, জনকল্যাণে কাজ করতে হয়, নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করতে হয়। জাতির পিতা সেই আদর্শ আমাদের শিখিয়ে গেছেন। আমি আশা করি সেই আদর্শ নিয়েই আপনারা চলবেন। তাহলে আপনার নেতৃত্বও থাকবে, জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবেন, বিশ্বাস অর্জন করতে পারবেন। মানুষ কিন্তু খুব সচেতন, এটা মনে রাখতে হবে। কাজেই সেটা মাথায় রেখে আপনারা আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন। উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখতে জনপ্রতিনিধিদের কাজ করার আহŸান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, আমি নির্বাচিত প্রতিনিধিদের এটুকুই বলবো, উন্নয়নের গতিধারা আমরা সৃষ্টি করেছি এটা যেন কখনো থেমে না যায়। সেটা অব্যাহত রাখতে হবে। আমাদের থেমে থাকলে চলবে না। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। সেটা ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। নারায়ণগঞ্জের জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জ ঢাকার ঠিক পাশেই, নারায়ণগঞ্জ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর। এটিকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল শহর বলা হয়। এখানকার মানুষের উন্নয়নের জন্য অনেক পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি। অনেক প্রজেক্ট আমরা দিয়েছি। সেগুলো যেন যথাযথ ভাবে পালন করা হয়। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে, শান্তিপূর্ণ ভাবে নারায়ণগঞ্জে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘আমি অভিনন্দন জানাই বাংলাদেশের, বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের সকল মানুষকে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন আমি মনে করি একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে, শান্তিপূর্ণ ভাবে নারায়ণগঞ্জে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, নারায়ণগঞ্জবাসী নৌকার মার্কায় আমাদের প্রার্থী আইভীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছে। আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলের কাউন্সিলর যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদেরকেও আমি আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই, বাংলাদেশে অর্থাৎ এই অঞ্চলে অর্থাৎ এই ভুখন্ডে শোষিত, বঞ্চিত, নির্যাটতিত, নিপিড়ীত মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই অঞ্চলের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য। দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত নেতৃত্ব নিয়ে বিএনপি কীভাবে জনগণের ভোট আশা করে এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, তারা আসলে নির্বাচনই চায় না। বিএনপি নির্বাচন চায় না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা আসলে নির্বাচনই চায় না। তারা নির্বাচনের অর্থ বোঝে না। তারা ভোট চুরি করতে জানে, কিন্তু জনগণের ভোট নিতে জানে না। জনগণকে ভোট দেওয়ার যে অধিকার, সেই অধিকারে তারা বিশ্বাস করে না। সেটা হলো বাস্তবতা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বাস করি গণতন্ত্রে, আমরা বিশ্বাস করি জনগণের ভোটের অধিকারে, আমরা বিশ্বাস করি জনগণ তার ভোট দিয়ে মন মতো প্রার্থী নির্বাচিত করবে, যে তাদের জন্য কাজ করবে। বিএনপি নেতৃত্ব বলে কিছু নেই মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের নেতৃত্ব কোথায়? তাদের নেতৃত্ব বলে কিছু নেই। একজন এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত, বন্দী। আমরা দয়া করে তাকে তার ঘরে থাকার একটা সুযোগ করে দিয়েছি। আরেকজন ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা এবং দুর্নীতি, সেই দুর্নীতির তথ্য শুধু আমরা এটা আমেরিকার এফবিআই খুঁজে বের করেছে, তারাই সাক্ষী দিয়েছে। সেসব মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। ২০০৭ সাল বা ০৮ সালের দিকে তখনকার তত্ত¡াবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়ে, যে আর কোন দিন রাজনীতি করবো না, এই মুচলেকা দিয়েই দেশ থেকে চলে গিয়েছিল খালেদার ছেলে তারেক রহমান। এখন বিদেশে সে থাকে। দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত নেতৃত্ব নিয়ে বিএনপি কীভাবে জনগণের ভোট প্রত্যাশা করে এমন প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিদেশে থেকে একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি যে দলের চেয়ারপারসন হয়, চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপালন করে, সেই সাজাপ্রাপ্ত আসামি আবার পলাতক, তো সেই দলকে জনগণ কেন ভোট দেবে? সেই দল ভোটের আশা করে কীভাবে? বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই বিএনপি-জামায়াত অথবা অন্য দলগুলো যারা এই ধরনের সমালোচনা করে থাকে, তাদের প্রতিষ্ঠা কার হাতে? অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাতে। জনগণের কাছে ভোট চেয়ে নেওয়ার কোন অভ্যাসই তাদের ছিল না। বরং কেড়ে নেওয়া, চুরি করাই তাদের অভ্যাস ছিল। কাজেই তারা গণতন্ত্রের অর্থও বোঝে না, জনগণের অধিকারের অর্থও তারা বোঝে না। সেই শিক্ষাই তাদের নেই। তারা বোঝে সন্ত্রাস, তারা বোঝে দুর্নীতি, তারা বোঝে জঙ্গীবাদ, তারা বাংলা ভাই সৃষ্টি করতে পারে, তারা মানুষ হত্যা করতে পারে, হাত কাটতে পারে, চোখ তুলতে পারে, মানুষের ঘরবাড়ি দখল করতে পারে, এইগুলি তারা পারে। তো সেই সুযোগটা পাচ্ছে না বলেই বোধহয় তাদের বেশি আক্ষেপ। আওয়ামী লীগের ওপর জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে জানিয়ে টানা তিনবারের সরকার প্রধান বলেন, সেই নির্বাচনে (২০০৮ জাতীয় নির্বাচন) বিপুল ভোটে, আওয়ামী লীগ আমরা মহাজোট করেছিলাম, তাদেরকে নিয়ে আমরা জয় লাভ করি। তারপর থেকে আলাহর রহমতে আমরা এ পর্যন্ত সরকারে আছি। জনগণের আস্থা-বিশ্বাস নিয়েই আমরা সরকারে আছি। বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যাালোচনা করলে দেখা যাবে একটানা এই ১৩ বছর এ দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যহত রয়েছে। আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় থাকায় দেশে অগ্রগতি হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যার ফলে আজকে দেশের উন্নতি হচ্ছে। আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যািদা পেয়েছে। আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্ষমতা হলো জনগণের সেবার করার সুযোগ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ সাল থেকে ২০০১ আমরা সরকারে ছিলাম। বাংলাদেশের জন্য স্বর্ণযুগ সৃষ্টি হয়েছিল। আমরা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসস্পূর্ণতা অর্জন করি, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াই, রাস্তাঘাট, পুল-ব্রিজসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বিভিন্ন কাজ করে বাংলাদেশের জনগণের কাছে এই বার্তাই পৌঁছে দিয়েছিলাম সেটা হলো জনগণের সেবক হলো সরকার, ক্ষমতা ভোগ করার বস্তু নয়, ক্ষমতা জনগণের সেবা করার। বাংলাদেশের মানুষ সেটা উপলব্ধি করে। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সমৃদ্ধ দেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সার্বিকভাবে শুধু আজকেই না, আগামী দিনের বাংলাদেশ কেমন উন্নত হবে সেই পরিকল্পনাটাও আমি দিয়ে গেলাম। আমাকে এটা চিন্তা করতে হয়, আমারও তো বয়স হয়েছে। ৭৫ বয়স আমার। কতদিন আর বাঁচবো। কাজেই এমন ভাবে দেশের কাঠামো তৈরি করে যেতে চাই, এমন ভাবে পরিকল্পনা করে যেতে চাই- প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন এই বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিধারা যেন অব্যহত রাখতে পারে। উন্নত জীবন পায়, সুন্দর জীবন পায়, আর যেন কখনো কারও দ্বারা নিষ্পেশিত হতে না হয়, নির্যানতিত হতে না হয়, সুন্দরভাবে যেন মানুষ বাঁচতে পারে, সেই ব্যবস্থাটাই আমি করে দিয়ে যেতে চাই। শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি আমাদের দেশের মানুষের যে অধিকার সেই অধিকার সুরক্ষিত রেখে আমরা দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।