মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২৩ পূর্বাহ্ন

উৎপাদনে যেতে না পারলেও ঋণের কিস্তি গুনছে বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

এফএনএস এক্সক্লুসিভ: জ্বালানির অভাবে উৎপাদনে যেতে না পারলেও দেশের বৃহৎ গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ৭১৮ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টটি বসে থেকে ঋণের কিস্তি গুনছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে অবস্থিত। প্রায় এক বছর আগে থেকেই বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি প্রস্তুত হয়েছে। শেষ করেছে আনুষ্ঠানিক সব কার্যক্রমও। জাপানিজ কোম্পানি জাপানস এনার্জি ফর আ নিউ এরা (জেরা) এটি নির্মাণে প্রায় ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা না পাওয়ায় কেন্দ্রটি চালু হচ্ছে না। কিন্তু উৎপাদনে না গেলেও চুক্তি অনুযায়ী ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে। জেরা ও পিডিবি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মেঘনাঘাটের গ্যাসভিত্তিক ৭১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি জেরা মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেড নামে বাস্তবায়ন হচ্ছে। বিপিডিবির সাথে ২০১৯ সালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে জেরার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তিপত্র সম্পাদন হয় । চলতি বছরের অক্টোবরে পরীক্ষামূলক কার্যক্রমও শেষ হয়। চুক্তি অনুযায়ী তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল) এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করবে। সেজন্য সংস্থাটির সঙ্গে জিএসএ (গ্যাস সাপ্লাই এগ্রিমেন্ট) সই হয়। কেন্দ্রটি ২২ বছর পিডিবিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ক্রয়ে বিপিডিবির ৫ টাকা ৮৪ পয়সা ব্যয় হবে। কিন্তু তিতাস থেকে গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা না পাওয়ায় উৎপাদনে যেতে পারছে না কেন্দ্রটি। সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশের গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালাতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকলেও ৮২০—৮৪০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো সরবরাহ হচ্ছে। আর জেরার ৭১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য দৈনিক ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন। ওই গ্যাসের বাড়তি জোগান এ মুহূর্তে তিতাসের কাছে নেই। যদিও গত অক্টোবরে জেরার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরীক্ষামূলকভাবে সপ্তাহব্যাপী উৎপাদনে ছিল। পরীক্ষামূলক উৎপাদনের সময় কেন্দ্রটিতে ১০০—১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবাহ হয়। আর ওই গ্যাস দিয়ে প্রায় ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড করে। এখন বাণিজ্যিক উৎপাদনের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শেষ করে কেন্দ্রটি গত অক্টোবর থেকে বন্ধ রয়েছে। যদিও বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে না পারলেও বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে নেয়া বিপুল পরিমাণ ঋণের কিস্তি মালিকপক্ষকে পরিশোধ করে যেতে হচ্ছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো—অপারেশনসহ একাধিক জাপানিজ ব্যাংক থেকে জেরা ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে ঋণের তিন কিস্তি পরিশোধ করা হয়েছে। চলতি মাসে পরিশোধের কথা রয়েছে ঋণের চতুর্থ কিস্তি। এদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতি বিষয়ে জেরা মেঘনাঘাট পাওযার লিমিটিড সংশ্লিষ্টরা জানান, জেরার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাংলাদেশে সবচেয়ে উচ্চ ইফিশিয়েন্সি ও সর্বনিম্ন উৎপাদন খরচের কেন্দ্র। এটি বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। এ কেন্দ্রের সুবিধা হলো কম গ্যাসে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। তাতে বিপিডিবির খরচও কম পড়বে। তাই প্রয়োজনীয় গ্যাসের জোগান নিশ্চিত করা গেলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে কেন্দ্রটি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এডিবি ও জাপানিজ ব্যাংক বিনিয়োগ করেছে। ফলে কেন্দ্রটি উৎপাদনে না থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করছে জেরা। অন্যদিকে বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞদের মতে, জেরা উচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ও ব্যয় সাশ্রয়ী বিবেচনায় জেরা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে গ্যাস সংযোগ প্রয়োজন। অদক্ষ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ না করে বরং বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যয় সাশ্রয় হয় এমন বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিপিডিবির চালানো দরকার। তাতে বিপিডিবির বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচও কমবে। বিপিডিবির কর্মকর্তারাও বিষয়টি স্বীকার করেন। তাছাড়া এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদেশী বিনিয়োগ রয়েছে। বিদেশী বিনিয়োগের আস্থা ধরে রাখার ক্ষেত্রে কেন্দ্রগুলোর গুরুত্ব রয়েছে। এ বিষয়ে তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহনেওয়াজ পারভেজ জানান, জেরার বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এ মুহূর্তে গ্যাস দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। মেঘনাঘাটে গ্যাস সরবরাহের জন্য নতুন গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। সে কাজ শেষ হওয়ার পাশাপাশি নতুন করে গ্যাসের বাড়তি জোগান তৈরি হলে সরবরাহ দেয়া সম্ভব হবে। বিষয়টি নিভল করছে গ্যাসের বাড়তি সরবরাহের ওপর। এছাড়া বিপিডিবি চাইলে অন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রেশনিংয়ের মাধ্যমে কেন্দ্রটি উৎপাদনে রাখতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com