শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৪৫ পূর্বাহ্ন

উৎপাদন ও বিপনন ত্রুটির কারণে দেশে মানহীন নন—ইউরিয়া সারের বিস্তার ঘটছে

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বুধবার, ১ জানুয়ারী, ২০২৫

এফএনএস এক্সক্লুসিভ: দেশজুড়েই ব্যবহার হচ্ছে মানহীন নন—ইউরিয়া সার। মূলত উৎপাদন ও বিপনন ত্রুটির কারণে দেশে মানহীন নন—ইউরিয়া সারের বিস্তার ঘটছে। ফলে কৃষক অর্থ খরচ করে জমিতে সার ব্যবহার করলেও আশানুরূপ সুফল পাচ্ছে না। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) এক গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশে ব্যবহৃত নন—ইউরিয়া সারের প্রায় ২৮ শতাংশই মানহীন। ১৩ ধরনের সারের ২৭৮টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৮১টি নমুনার মান সঠিক পাওয়া গেছে। আর ৭৭টি নমুনার মান সঠিক পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বেশি মানহীন সার হিসেবে এনপিকেএস, এমওপি ও জিংক সালফেট মনোহাইড্রেটের নাম উঠে এসেছে। নমুনা পরীক্ষায় আসা এনপিকেএস ও এমওপি সারের শতভাগই মানহীন পাওয়া গেছে। অন্যদিকে জিংক সালফেট মনোহাইড্রেট সারের মধ্যে মানহীন পাওয়া গেছে ৫৩ শতাংশ। তাছাড়া ২৪ শতাংশ অর্গানিক ফার্টিলাইজার ও ২২ শতাংশ জিংক সালফেট হেপ্টাহাইড্রেট সার মানহীন পাওয়া গেছে। মাত্র তিনটি সারে শতভাগ সঠিক মান পাওয়া গেছে। সেগুলো হলো ডিএপি, বোরন ও এসওপি। তুলনামূলক জিপসাম ও বরিক এসিড কম পরিমাণ মানহীন। কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে প্রতিবছর ব্যবহার করা হয় প্রায় সাড়ে আট লাখ টন এমওপি সার। আর তার প্রায় শতভাগ আমদানির মাধ্যমে চাহিদা মেটানো হয়। কিন্তু সংরক্ষণ ও বিপণনগত ত্রুটির কারণে মানহীন হয়ে পড়ছে ওই সার। কারণ দেশে সারের চাহিদা বাড়লেও সরকারি বা বেসরকারিভাবে সার সংরক্ষণের জন্য মজুদ সক্ষমতা বাড়ছে না। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) মাধ্যমে সারা দেশে সার সরবরাহ করা হয়। কিন্তু ১০ লাখ টনের নিচে সরকারি ওই দুই প্রতিষ্ঠানে গুদামের ধারণক্ষমতা। ফলে সার অনেক সময় খোলা আকাশের নিচে রাখতে হয়। তাতে সার জমাট বেঁধে যায়, অপচয় হয় এবং আর্দ্রতার কারণে সারের গুণগত মান নষ্ট হয়। মানসম্পন্ন সারের সঠিক মাত্রায় ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে জমির উর্বরাশক্তি ও পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখার পাশাপাশি সরকারের ভর্তুকি ব্যয়ও কমে আসতো। সূত্র জানায়, দেশে প্রায় ৬৬ লাখ টন সারের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ২৬ লাখ টন ইউরিয়া, সাড়ে সাত লাখ টন টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট), সাড়ে ১৬ লাখ টন ডিএপি (ডাই—অ্যামোনিয়া ফসফেট) এবং সাড়ে আট লাখ টন এমওপি সারের চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া অনান্য সারের চাহিদা প্রায় আট লাখ টন। ইউরিয়া সার কিছুটা দেশে উৎপাদন হলেও টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সার আমদানি করা হয়। গত ২০২৩—২৪ অর্থবছরে সরকারকে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দিতে হয়েছে।
এদিকে এ বিষয়ে কৃষিসচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান জানান, উৎপাদন ও বিপনন ত্রুটির কারণে দেশে মানহীন নন—ইউরিয়া সারের বিস্তার হয়েছে। তবে তা থামানোর জন্য উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যায়ের সব ধরনের দুর্বলতাকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সব ধরনের কারখানা সঠিক প্রক্রিয়ায় হয়েছে কি না, সঠিক মাত্রায় উপকরণ দিয়ে সার উৎপাদন করা হচ্ছে কি না এসব দেখা হচ্ছে। কৃষকরা যাতে কোনোভাবেই সার কিনে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত না হন তার নিশ্চয়তা দিতে মন্ত্রণালয় থেকে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তাছাড়া সার ব্যবহারে যেমন কৃষকদের সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে। একই সাথে মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের আরো কঠোরভাবে তদারকি করার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। কৃষি পণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের মূলমন্ত্র হলো— ভালো মানের সার সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করা। যার মাধ্যমে কৃষক অনেক কম পরিমাণে সার ব্যবহার করে অধিক ফলন পেতে পারেন। মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য জৈব সারের ব্যবহার বাড়ানোরও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com